
২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নেয় একটি গণঅভ্যুত্থানে, যার ফলে ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলন শুধু কোটা ব্যবস্থার পরিবর্তনই নয়, বরং একটি স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বিজয় হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে ।
২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথম বড় আন্দোলন হয়। তখন সরকার ৫৬% কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়, কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্ট সেই সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করলে আবারও আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।
আন্দোলনকারীরা বাংলা ব্লকেড নামে সারাদেশে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় রংপুরে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়।
সরকার পুলিশ, র্যাব ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। বিভিন্ন সূত্রমতে, এই আন্দোলনে ১,৫৮১ জন নিহত হন, যার মধ্যে ১২৭ জন শিশুও ছিল। আন্দোলনকারীরা তাদের দাবিকে এক দফাতে কেন্দ্রীভূত করে শেখ হাসিনার অবিলম্বে পদত্যাগ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান । সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয় ।
এই আন্দোলন শুধু একটি সরকারের পতনই নয়, বরং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। অনেকেই এটিকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন। জুলাই আন্দোলন ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি প্রমাণ করে যে, জনগণের সম্মিলিত শক্তি কোনো স্বৈরশাসনই দমিয়ে রাখতে পারে না। এই আন্দোলন শুধু একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনই নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবিতে সাধারণ মানুষের বিজয়গাথা। ‘মিছিল কোনো দিন ভুল পথে যায় না, মিছিল পথ গড়ে দেয়’। এটি জুলাই বিপ্লবের একটি জনপ্রিয় স্লোগান ।
পাংশা, রাজবাড়ী থেকে
প্যানেল/মো.