
বাংলাদেশের কেন্দ্রবিন্দু হলো প্রাণের শহর ঢাকা। কিন্তু সেই প্রাণের শহরই আজ প্রাণ কেড়ে নেওয়ার মূল উপজীব্যে পরিণত হয়েছে। কারণ পরিবেশ দূষণে ঢাকা অন্যান্য জেলার তুলনায় সবচেয়ে এগিয়ে। প্রতিনিয়ত ব্যাপক হারে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। যেখানে বায়ুদূষণ হলো অন্যতম। ইতোমধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষক শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ঢাকা। গত শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় সকাল ৯ : ০৯ মিনিটে, ঢাকার এআইকিউ স্কোর ছিল ১৭৭, যা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ঐদিনের এআইকিউ সূচক অনুসারে, ঢাকার বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ফুসফুস, ক্যান্সার, স্ট্রোক ও এলার্জিজনিত রোগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া মানসিক রোগ বায়ুদূষণের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বায়ুদূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগও দেখা দেয়। তার মধ্যে রয়েছে ডিমেনশিয়া, অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, ডিপ্রেশন/বিষণ্নতা ইত্যাদি। একইসঙ্গে বাতাসে বেনজিন ও কার্বন মনো অক্সাইডের উপস্থিতি সিজোফ্রেনিয়া রোগের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এ ছাড়াও পানি দূষণের ফলে দূষিত নদীগুলো জলজ প্রাণী বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত বাড়ছে জনসংখ্যা, যানবাহন আর শিল্প-কারখানা। যান্ত্রিকতা নির্ভর আধুনিক সমাজে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ফুয়েল বা জ্বালানির ভূমিকা অপরিহার্য। বলতে গেলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমরা নির্ভরশীল। জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরশীলতা বর্তমানে আমাদের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হলো জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও ব্যবহার। জীবাশ্ম জ্বালানি অর্থাৎ, গ্যাস কয়লা, তেল ব্যবহারের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয় ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়। জীবাশ্ম জ্বালানিবিহীন ও দূষণমুক্ত পৃথিবীর কথা চিন্তা করতে গেলে প্রথমেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ তৈরিতে বায়ু, পানি, সূর্যের আলো, শহরে আবর্জনা ইত্যাদি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি প্রয়োজন। তাছাড়া বায়ুদূষনের প্রধান উৎস ক্ষতিকারক ফুয়েল গ্যাসের পরিবর্তে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল ব্যবহার নিশ্চিতকরণ জরুরি। কেবল জল আর তাপকে উপজাত হিসেবে ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এটি কাজ করে। ফলে জ্বালানি দহন কমবে এবং পরিবেশ দূষণ হ্রাস পাবে। এ ছাড়াও মানুষ ও পশুপাখির বিষ্ঠা ও আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস তৈরি করা যায় যা রান্নায় বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য। দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার পরিবেশ দূষণের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি সুতার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে। যা সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। যদিও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতবছর ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিপ্রপিলিনের ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে হলে প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। দেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ দূষণ ও তার ফলাফল সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে প্রয়োজন দূষন হ্রাসের করণীয় সম্পর্কে অবগত রাখা। তা ছাড়া সরকার কর্তৃক বিভিন্ন নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনা সম্ভব। পরিবেশের স্বার্থে আইন প্রণয়নে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষ ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যেতে পারে। সবশেষ, পরিবেশ রক্ষার্থে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীকে প্রতিটি প্রাণীর বসবাসযোগ্য করে তুলতে হবে।
রিতিকা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়