ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

অরক্ষিত কারাগার

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

অরক্ষিত কারাগার

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে চলতি বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘিরে দেশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে হামলা, লুটের ঘটনা ঘটে। ফলে, বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র ও  ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ লুট হয়, যেগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৯ আগ্নেয়াস্ত্র আর ২ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৩ রাউন্ড গুলির খোঁজ নেই। এছাড়া ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে ২২ শতাধিক কারাবন্দি পালিয়েছে। এর মধ্যে ১৫শ’ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও ৭০০ বন্দি এখনো পলাতক। পলাতকদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ অতিঝুঁকিপূর্ণ আসামি রয়েছে ৭০ জন। এ ছাড়া সম্প্রতি ১১ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে কারাগার থেকে মুক্তি এবং জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে অভিযুক্ত ১৭৪ জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, অস্ত্র উদ্ধারে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় যৌথ অভিযান, যা এখনো চলছে। তারপরও বিপুল সংখ্যক অস্ত্র-গুলির হদিস না পাওয়া এবং অনেক পলাতক আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় জনমনেও তৈরি হয়েছে নিরাপত্তার শঙ্কা। ইতোমধ্যে চিহ্নিত অপরাধীরা লুট করা অস্ত্র ব্যবহার করে একের পর এক অপকর্ম করেই যাচ্ছে। সর্বশেষ মুন্সীগঞ্জের শ্রীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে এক তরুণীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তার প্রেমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডে ৫ আগস্ট রাজধানীর ওয়ারী থানা থেকে লুট করা অস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করে হত্যাকারী। এর আগে মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পেও একাধিকবার আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে মহড়া দেয় মাদক কারবারিরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, কাঠামো দেখে বোঝা যায়, অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল লুণ্ঠিত। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, থানায় যারা হামলা করেছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধী, দুর্বৃত্তসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত ছিল। ফলে, পুলিশের লুট করা অস্ত্র সংঘবদ্ধ ডাকাত, সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং, জলদস্যু ও বনদস্যুর কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বেহাত এসব অস্ত্র নানা রাজনৈতিক সংঘাত, সহিংসতা ও অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনো অপরাধীর হাতে এসব অস্ত্র থাকার তথ্য মিলছে।
কারাগার থেকে আসামি পলায়নের ঘটনা উদ্বেগজনক। এমন ঘটনায় দেশের কারা ব্যবস্থাপনার দুর্বল চিত্রই প্রকাশ পায়। বর্তমানে দেশের ৬৯টি কারাগারের মধ্যে ১৭টিই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার কারাবন্দি হলেও বিপরীতে রয়েছে ৬৫ হাজার কারাবন্দি, যা ক্রমশই বাড়ছে। ফলে, কারাগারের নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। একইসঙ্গে দেশের পুলিশের অস্ত্র ও গুলি বেহাত থাকা নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে, অস্ত্র লুটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। জেল পলাতক আসামির অনেকে পুনরায় জড়িয়ে পড়তে পারে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। ইতোমধ্যে দেশে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অবৈধ অস্ত্রের নানামাত্রিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। কাজেই লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার করা এবং অপরাধীরা যেন সেগুলো সাধারণ মানুষের বিপক্ষে ব্যবহার করতে না পারে, সেই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা চাই।

×