সম্পাদকীয়
দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। তাই চালের দাম ওঠানামার ওপর সবার দৃষ্টি থাকে। মানুষ তো আর একযোগে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে পারে না। চালের দাম ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে অতীতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক সরকার ভাত খাওয়ার ওপর চাপ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। আলুসহ নানা খাদ্যপণ্যের ওপর জোর দিতে পরামর্শ প্রদান করেছে। মানুষের কাছে এসব পরামর্শ রসিকতারই শামিল। দেশবাসী এসব পরামর্শ যথারীতি প্রত্যাখ্যান করেছে। ভাত খাওয়া বাদ দেয়নি। দেশে যে ধান উৎপাদন হয়, তা দেশের মানুষের সার্বিক চাহিদা মেটানোয় যথেষ্ট নয়।
সে কারণেই চাল আমদানি করতে হয়। চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে শুক্রবার দ্বিতীয় দফা আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রথম দফায় শুল্ক কমানোর প্রভাব বাজারে লক্ষ্য করা যায়নি। এ অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় চালের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়ার প্রভাব বাজারে পড়বে কি না, সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি আমদানিকারকদের ভাষ্য, বিভিন্ন দেশে চালের বাজার এখন চড়া। এজন্য প্রথম দফায় শুল্ক কমানোর পরও চাল আমদানি হয়েছে কম। বড় ব্যবসায়ীদের মতে, কিছুদিন পর আমন মৌসুম শুরু হবে। তখন দেশে চালের দাম কমবে।
বর্তমানে ডলারের দাম বেশি। তাই শুল্ক কমালেও আমদানিকারকদের আগ্রহ বাড়ছে না। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রমতে, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের হাতে ১০ লাখ টন চালের মজুত ছিল। সরকারি মজুত কম থাকলে চালের বাজারে যেহেতু অস্থিরতা বাড়ে সেহেতু মজুত বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত।
গত বছর বেসরকারি আমদানিকারকদের ১৪ লাখ ৯০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হলেও কাক্সিক্ষত সময়ে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ চাল আমদানি করা হয়েছিল। বেসরকারি আমদানিকারকরা অতীতে নানা অজুহাতে চাল কম আমদানি করেছে। সেসব তথ্য বিবেচনায় নিলে অনুমান করা যায়, এবারও তারা চালাকির আশ্রয় নিতে পারে। ফাঁদ পেতে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ যাদের স্বভাব, তাদের ওপর ভরসা করা যায় না।
সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের উৎপাদন প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিসিবি বলেছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা ছিল, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাশ্রয়ী দামে চাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেলের বিক্রি বাড়ানো, যাতে গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেতে পারেন। বাস্তবতা যে, গরিব মানুষের খাদ্যব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে।
চালের দাম এমন সময়ে বেড়েছে, যখন চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমতে পারে। এ অবস্থায় চালের মজুত ও খোলাবাজারে বিক্রি দুটোই বাড়ানো চাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা মজুত ও সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা দরকার জরুরি ভিত্তিতে। পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য আমদানিকারকদের চাল আমদানিতে উৎসাহিত করা চাই। পাশাপাশি বাজার তদারকিও বাড়াতে হবে। এছাড়াও ওএমএস, ট্রাকসেলসহ সামাজিক সুরক্ষামূলক জোরদার কার্যক্রম মানুষের উপকারে আসবে।