ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১

মিতব্যয়িতা মানব জীবনে অপরিহার্য

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

মিতব্যয়িতা মানব জীবনে অপরিহার্য

সুব্রত বিশ্বাস (শুভ্র)

আজ ৩১ অক্টোবর বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। মূলত মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি। এই দিনে পরিবার ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সকলকে মিতব্যয়ী হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। দিবসটি পালনের জন্য রীতি চালু হয় ১৯২৪ সাল থেকে, যা প্রথম আন্তর্জাতিক সঞ্চয়ী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শুরু হয়।

ইতালির মেলানো শহরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের শেষ দিনে ইতালীয় অধ্যাপক ফিলিপ্প রাভিজ্জা দিনটিকে বিশ্ব সঞ্চয় দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার আগে অবশ্য এমন একটি দিবস ১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ও ১৯২৩ সালে জার্মানিতে পালিত হয়ে আসছিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয় দিবসটি।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনই মিতব্যয়িতা। অন্যভাবে বলা যায়, কৃপণতা না করে প্রয়োজন মতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করার নাম মিতব্যয়িতা। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের নাগরিকদের জন্য মিতব্যয়িতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কারণ, এ দেশের মানুষের মধ্যে অপচয়ের প্রবণতা প্রকট।
মিতব্যয়িতার সঙ্গে সঞ্চয়ের একটি বড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, কোনো মানুষ মিতব্যয়ী হলেই সেখান থেকে অর্থ বাঁচিয়ে সেটা সঞ্চয় করতে পারে। কবিতায় আছে, ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা, বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল,’Ñ যা সঞ্চয়ের চেতনার সঙ্গে মিলে যায়।
ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে দেখতাম, মা ভাত রান্না করার সময় প্রতিবারই ভাতের চাল থেকে একমুঠো করে চাল অন্য একটি পাতিলে জমিয়ে রাখত। এভাবেই সপ্তাহখানেক জমানোর পর দেখা যেত, সেই জমানো চাল দিয়ে একদিনের রান্নার চাল হয়ে গেছে। অথবা, সেই জমানো চাল বিক্রি করে সংসারের বিভিন্ন ছোট ছোট প্রয়োজন পূরণ করা হতো। এটাকে বলা হতো লক্ষ্মীর ভাঁড়।
মানব জীবনে মিতব্যয়িতা একটি অতি অপরিহার্য বিষয়। মিতব্যয় প্রতিটি মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি ডেকে আনে। ব্যক্তি জীবনে যত বেশি সঞ্চয় হবে, ততই বাড়বে ব্যক্তি, পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা। মিতব্যয় মানুষের সম্পদকে বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে।
আমাদের জাতীয় উন্নয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ বৃদ্ধি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পদ সংগ্রহের পন্থা হচ্ছে স্বেচ্ছায় সঞ্চয় এবং কর সংগ্রহের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক সঞ্চয়। স্বেচ্ছায় সঞ্চয় যত বৃদ্ধি পাবে, কর বা রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভরশীলতা তত হ্রাস পাবে। এই নীতির ওপর ভিক্তি করেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সামনে। আয় করা যত কঠিন, ব্যয় করা ততই সহজ। মানুষ আয়েশি জীবন যাপনের জন্য কিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় করে, যা ভবিষ্যতের জন্য মঙ্গলকর নয়।

আমরা চারপাশে তাকালে দেখতে পাই, কেউ জীবন দিয়ে পরিশ্রম করেও দু’বেলা দু’মুটো ভাত খেতে পায় না। আবার কেউ কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও ভূমিহীন বা গৃহহীন। তাই বাংলাদেশের মতো একটি দেশের নাগরিকদের জন্য মিতব্যয়িতা অত্যাবশ্যক। অপচয়কারীরা নিজের জন্য তো নয়ই বরং সমাজ, পরিবার ও জাতির জন্যও কিছু করতে পারে না।

বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, ‘ছোট ছোট ব্যয় সম্পর্কে সচেতন হও। একটি ছোট ছিদ্র মস্ত বড় জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে।’ উল্লেখ্য, সঞ্চয়ের জন্য ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই। প্রত্যেক মানুষের একটি সুন্দর জীবনের স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্ন থেকেই জন্ম নেয় প্রত্যয়। দৃঢ় প্রত্যয় থেকেই গড়ে ওঠে সঞ্চয়ের প্রবণতা।
মানুষ অর্থ উপার্জনের পর তা খরচ করার তিনটি অবস্থা রয়েছে। এগুলো হলোÑ কার্পণ্য, মিতব্যয় ও অপব্যয়। সকল ধর্ম মিতব্যয়কে উৎসাহিত করে, কার্পণ্য ও অপব্যয়কে নিন্দা জানিয়েছে। এ কারণে মিতব্যয় একটি উত্তম কাজ আর কার্পণ্য ও অপব্যয় নিন্দিত কাজ। মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না।
প্রতিবছর বিশ্বে কোটি কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়। অথচ বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১৮ কোটি লোক ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। সমাজের উঁচু শ্রেণির মানুষ অপচয় করে কোটি কোটি টাকার খাবার, আর এর মাশুল দিতে হয় পথের পাশের মানুষগুলোকে। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন মিতব্যয়িতা।


লেখক : সমন্বয়ক, মিডিয়া সেল এবং কাউন্সিলর, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

×