ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রনীতি

প্রকাশিত: ২০:২৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রনীতি

সম্পাদকীয়

সরকারি অর্থের অপচয় রোধে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রায় সর্বত্র সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রনীতি অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সরকারি খরচ ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহে প্রতিদিন বিপুল অর্থ খরচ হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে তিনি এও বলেন, সরকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য কমাবে না। প্রতিবছর জাতীয় বাজেটের বড় অংশ আসে বাইরে থেকে বিদেশী ঋণ ও অনুদান হিসেবে। ফলে দিন দিন ঋণের বোঝা ও সুদ বাড়ছে। সরকার চেষ্টা করবে নিজেদের অর্থের সংস্থান করতে। সে জন্য রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। প্রত্যক্ষ করে ফাঁকি দেওয়া যায় না। তবে পরোক্ষ করে ঝামেলা আছে। সেই জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করনীতিকে ব্যবসাবান্ধব হতে হবে।

করদাতাদের কষ্ট দিয়ে বা হয়রানি করে কর আদায় করা যায় না। এরপরও বিদেশ থেকে অর্থ বা ঋণ যাই বলি না কেন আনতে হবে। তবে বিদেশ নির্ভরতা যত কমানো যায় ততই মঙ্গল। তদুপরি বর্তমানে বিদেশী বিনিয়োগ খুব একটা আসবে না। সে ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে রাজস্ব আদায়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এর পাশাপাশি সরকারি অর্থের অপচয় বা নয়-ছয় করা যাবে না। 
কৃচ্ছ্রসাধন কোনো সাধনার বিষয় নয়, এর জন্য স্রেফ সদিচ্ছাই যথেষ্ট। মিতব্যয়িতা বিচক্ষণতার লক্ষণ। অপচয়, অপব্যয় কখনোই কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। সমকালীন বিশ্ব পরিস্থিতিতে ব্যয় সাশ্রয়ী নীতিমালা উপকার বয়ে আনবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তি ও পরিবারের বেলায় ব্যয় সংকোচন ও কৃচ্ছ্রসাধন যেমন জরুরি, তেমনি আবশ্যক হচ্ছে জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে সবধরনের ব্যয়ে সাশ্রয়ী হওয়া। নতুন অর্থবছর মাত্র শুরু হয়েছে।

এই সময়েই যদি মিতব্যয়িতার শুভ সূচনা করা সম্ভব হয়, তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বার্ষিক বাজেটে। জাতীয় জীবনে যেমন উন্নতি পরিলক্ষিত হবে, তেমনি সমাজেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। দেশের জন্য শুভবার্তা মিলেছে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই। সরকারি কর্মকর্তাদের খরচে লাগাম টানার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার।

সরকারি দপ্তরে নতুন সব ধরনের যানবাহন কেনাকাটা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বন্ধ থাকবে বিদেশ ভ্রমণ। তবে বিদেশী অর্থায়ন হলে ভ্রমণ করা যাবে। এছাড়াও ভূমি অধিগ্রহণ খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করা যাবে না। এটি সাধুবাদযোগ্য অবশ্যই। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, করপোরেশন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর হবে এ সিদ্ধান্ত।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে সরকারি খরচ কমাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে যানবাহন, বিদেশভ্রমণসহ বেশ কয়েকটি খাতে ব্যয় স্থগিত করেছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। যদিও তখন অনেক সরকারি কর্মকর্তাকে বিদেশ ভ্রমণে যেতে দেখা গেছে। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। আশা করা যায়, এবার তার পুনারবৃত্তি ঘটবে না। এ বিষয়ে মনিটরিং জোরালো করতে হবে।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, নিজ পকেট থেকে অর্থ সংকুলানের সময়ই আমরা সতর্ক ও সচেতন থাকি। বাতি জ্বালানো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার ও ব্যক্তিগত মোটরগাড়ির জ্বালানি কেনায় থাকি মিতব্যয়ী। কিন্তু সরকারি কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং গাড়ির ব্যয়ে যথেচ্ছ হতে দেখা যায়। এটাই যেন হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি। আরেকটু এ গিয়ে বলা যায়- সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল। দেশপ্রেম ও দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকার থাকলে এমনটি কখনোই ঘটতে পারে না।

প্রতিটি সরকারি কার্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিকে আলাদাভাবে এই কৃচ্ছ্রসাধননীতি নিশ্চিত করায় উদ্যোগী হতে হবে। তা না হলে সুফল মিলবে না। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমনে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা আবশ্যক। ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করা গেলে সত্যিকারের অর্জন হবে।

×