ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শিল্প উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:১২, ২৭ মে ২০২৪

শিল্প উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ

সম্পাদকীয়

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে বর্তমানে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। দেখা দিয়েছে শিল্প খাতের বহুমুখী সংকট। বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশ সেসব আমদানিতে যথেষ্ট অর্থায়ন করতে পারছে না। ফলে, কমেছে  আমদানি ও উৎপাদন। বাড়ছে না বিনিয়োগও। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে কমেছে চাহিদা। ডলার সংকটে বেড়েছে কাঁচামাল ও জ্বালানি খরচ। কমেছে রপ্তানি, বেড়েছে সুদহার।

চলছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। এসব কারণে শিল্পকারখানার উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকটের কারণে অনেক উদ্যোক্তা বিনিয়োগ ও আমদানির জন্য চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ঋণ নিতে পারছেন না। এসব বিষয় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে উদ্যোক্তা ও অর্থনীতিবিদদের। তাদের ধারণা, এর বিরূপ প্রভাব পড়বে দেশের বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ সার্বিক অর্থনীতিতে।

শিল্প খাতের দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে অনেক কোম্পানিও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তবে এক্ষেত্রে ইতিবাচক দিক হচ্ছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি এখনো ৬ শতাংশের ওপরে রয়েছে। 
উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশের রপ্তানি খাত এমনিতেই তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে। বৈশ্বিক মন্দায় রপ্তানির আদেশ কমছে। সুদহার বাড়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এতে বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা আরও বেড়েছে। এছাড়াও ডলারের দাম বাড়ায় খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনই ডলার সংকটেও ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর শিল্প এখন খুবই সংকটে রয়েছে। এর মধ্যে সুদহার বাড়ায় এ খাতের খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে।
টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জনে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন অপরিহার্য। জিডিপিতে মূল ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ অর্থনীতির প্রায় সব সূচকে মূল চালিকাশক্তি এখন দেশের শিল্প খাত। বিগত চার দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত উন্নয়ন ঘটেছে।

এই অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের শিল্প উৎপাদন সংকট মোকাবিলায় ডলার-টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা চাই। দেশ থেকে অর্থ পাচার বন্ধ এবং বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সুদৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। দুর্নীতিবাজ ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এছাড়াও প্রয়োজন শিল্প খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও বিদেশী বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করার জন্য দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলো বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তাদের সংকট যেভাবে মোকাবিলা করে রপ্তানি বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও অনুসরণ করা যেতে পারে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প খাত আরও বিকশিত হোক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাক। কমে আসুক বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার।

×