ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

পশু-পাখির প্রতি সদয়

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১ মার্চ ২০২৪

পশু-পাখির প্রতি সদয়

.

ব্যক্তি পর্যায়ে হাতি পালনে লাইসেন্স প্রদান বিদ্যমান লাইসেন্স নবায়ন কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেছেন হাইকোর্ট। এর ফলে, আদালতের সুরক্ষা পেল বাংলাদেশের বিপন্নপ্রায় প্রাণী হাতি। মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকা হাতির সার্কাস, হাতির পিঠে ভ্রমণ, বিয়ে বাড়িতে শোভাবর্ধন, বাণিজ্যিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ্যালিতে বিজ্ঞাপন বিভিন্ন বিনোদন কাজে হাতির ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি। অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং প্রাণী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন পিপল ফর এনিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারপারসন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল রিটটি দায়ের করেন। উল্লেখ্য, হাতিকে লগ বা কাঠের ভারি গুঁড়ি তোলার কাজে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ লাইসেন্স দেয় বন বিভাগ থেকে অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করে অনেক হাতি সার্কাসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাতিদের প্রশিক্ষণের নামে সার্কাস পার্টিসহ প্রাইভেট লাইসেন্সধারীরা নিষ্ঠুরভাবে হাতির বাচ্চাদের মায়ের থেকে আলাদা করে। কয়েক মাস ধরে বেঁধে রাখে। এরপর কৌশল শেখানোর জন্য তাদের নির্যাতন করে। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাতিরাপ্রশিক্ষণনামক অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে- এমনটাই প্রত্যাশা।

তবে শুধু হাতি নয়, কুকুর, বিড়াল, সাপ, বানর, গরু, ঘোড়া, বাঘ, সিংহ, পাখিসহ আরও অনেক প্রাণী মানুষ পুষে থাকে, যেগুলোর ওপর প্রায়ই নির্যাতন চলে। বাসার আশপাশের কুকুর, বিড়ালের ওপর অনেককে ভাতের ফ্যান কিংবা গরম পানি ফেলা, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম করতে প্রায়ই দেখা যায়। ট্রাকে করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় গরু-মহিষ বোঝাই করা ট্রাক চলার সময় এগুলো যেন বেশি নড়াচড়া করতে না পারে, সেজন্য চোখে মরিচ বেঁধে রাখার মতো ঘটনাও ঘটে। পারস্পরিক শত্রুতার জেরে কেউ কেউ পোষা প্রাণীদের বিষ দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, পানিতে ডুবিয়ে কিংবা কুপিয়ে জখম করেও হত্যা করে থাকে, যা কখনোই কাম্য নয়।

প্রাণী হত্যা তাদের আবাসস্থলের স্বাভাবিক নিরুপদ্রব পরিবেশ নষ্ট করার ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয় এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়-  বিষয়েও সমাজে জনসচেতনতার প্রকট অভাব রয়েছে। পশুপাখির ওপর নিষ্ঠুরতার অপরাধে কাউকে সচরাচর শাস্তি পেতে দেখা যায় না। যদিও পশুর ওপর অবিচার, অনিয়ম কিংবা অকারণ নির্যাতন ন্ডনীয় অপরাধ। দেশে প্রাণী কল্যাণ বিল ২০১৯- বলা হয়েছে, মালিকবিহীন বা বেওয়ারিশ কোনো প্রাণীকে হত্যা করলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা ছয় মাসের জেল। পাশাপাশি কুকুরকে চলাফেরার সুযোগ না দিয়ে ২৪ ঘণ্টা বেঁধে রাখলেও তা নিষ্ঠুরতা হিসেবে গণ্য হবে এবং একই শাস্তি। ১৯২০ সালে ইংরেজরাও পশু নির্যাতনের জন্য জরিমানা ধরেছিল ২০০ টাকা, যা বর্তমানের হিসাবে প্রায় লাখ টাকার ওপরে। পশুর প্রতি অযাচিত নৃশংসতা প্রতিরোধে আইনি বিধিবিধান প্রয়োগ করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। পশুর প্রতি সকলের সহমর্মিতা মানবিকতা বাড়ানোও আবশ্যক। পশু-পাখি আমাদের জাতীয় সম্পদ। সম্পদের অপব্যবহার কিংবা বিরূপ ব্যবস্থাপনা দেশের জন্যই ক্ষতিকর।

×