
ছবি: সংগৃহীত।
চীন তৈরি করেছে এমন এক ‘মশা’, যা আদতে একটি অত্যাধুনিক সামরিক নজরদারি ড্রোন। ‘মস্কিটো মাইক্রো ড্রোন’ নামের এই যন্ত্রটির আকার এতটাই ক্ষুদ্র যে খালি চোখে দেখা প্রায় অসম্ভব। অথচ এর প্রযুক্তি এতটাই উন্নত যে এটি ভিডিও ও অডিও রেকর্ডিংসহ বিভিন্ন গোপন তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, ড্রোনটির দৈর্ঘ্য মাত্র ০.৬ সেন্টিমিটার এবং এটি বিশেষ কার্বন ফাইবার মিশ্রণে তৈরি। এতে রয়েছে একটি মাইক্রো ক্যামেরা, যা রাতের অন্ধকারেও স্পষ্ট ভিডিও ধারণে সক্ষম। রয়েছে উন্নত সাউন্ড রেকর্ডার এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে এটি নিজেই টার্গেট শনাক্ত করতে পারে এবং তার গতিবিধি নজরে রাখে।
সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এটি প্রায় নিঃশব্দে উড়তে পারে এবং এর ডানার আওয়াজ প্রকৃত মশার সঙ্গে মিলে যায়, ফলে কেউ সহজে ধরতেই পারে না। সামরিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে সীমান্ত কিংবা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অজান্তেই নজরদারি চালানো সম্ভব।
চীনের এই ড্রোনকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও নরওয়ে নির্মিত বিখ্যাত ব্ল্যাক হর্নেট ন্যানো ড্রোনের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে মস্কিটো ড্রোন আকারে অনেক ছোট (মাত্র ০.৬ সেন্টিমিটার) এবং উড়তে পারে প্রায় ৪৫ মিনিট, যেখানে ব্ল্যাক হর্নেটের দৈর্ঘ্য ১৬ সেন্টিমিটার এবং উড্ডয়ন সময় মাত্র ২৫ মিনিট।
অতিরিক্তভাবে, চীনের এই ড্রোন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (EMP) ছড়াতে সক্ষম—যা দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেওয়া সম্ভব।
প্রতিটি ড্রোন তৈরি করতে আপাতত খরচ পড়ছে প্রায় ৫ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৬ লাখ টাকা)। তবে ব্যাপক উৎপাদনে গেলে খরচ কমে আসবে বলেই ধারণা।
এই ড্রোনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা অ্যালার্ম বেজেছে। ভারত সীমান্ত অঞ্চলে বিশেষ রাডার বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন ধরনের সেন্সর ও ইলেকট্রনিক জ্যামার প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ড্রোন শুধু সামরিক ক্ষেত্রে নয়, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক গুপ্তচরবৃত্তিতেও বিপ্লব আনতে পারে। এমনকি এটিকে রাসায়নিক অস্ত্র পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা সম্ভব—যদিও এটি এখনো প্রমাণিত নয়।
চীনের এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন বৈপ্লবিক অগ্রগতি, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
নুসরাত