ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

ডা. আব্দুল মালিক

-

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩

ডা. আব্দুল মালিক

সম্পাদকীয়

যে কোনো মৃত্যুই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। তবে কোনো কোনো মৃত্যু পর্বতের ন্যায় ভারি, সমুদ্রের ন্যায় গভীর এবং দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে। বাংলাদেশে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক ছিলেন তেমনিই একজন বিরল প্রতিভাবান ব্যক্তি। মঙ্গলবার সকালে স্বপ্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক। সমবেদনা জানিয়েছেন শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি। আমরাও ডা. আব্দুল মালিকের মৃত্যুতে গভীর শোক জ্ঞাপন করছি। 
সম্পাদকীয়র সীমিত পরিসরে ডা. আব্দুল মালিক সম্পর্কে কিছু লেখা দুষ্কর ও দুঃসাধ্য। সাধারণ মানুষ, ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজন মাত্রই জানেন, দেশে এক সময় চিকিৎসাব্যবস্থা তেমন উন্নত ও নিশ্চিত ছিল না। বর্তমানের মতো তো নয়ই। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ রোগ নির্ণয়ও ছিল কঠিন কাজ। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতেন দেশের বাইরে। আর গরিব মানুষ অকালে মারা যেতেন অনির্ণীত রোগ নিয়ে প্রায় বিনা চিকিৎসায়। তখন বর্তমানের মতো জটিল চিকিৎসা ও অপারেশন যে দেশেই করা সম্ভব- এমনটি কল্পনাও করা যেত না।

এ রকম এক পরিবেশ-পরিস্থিতিতে হৃদরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ হিসেবে এগিয়ে আসেন ডা. আব্দুল মালিক। ১৯৬৩ সালে তৎকালীন সরকার তাকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে প্রেরণ করে। ১৯৬৪ সালে বিলেতে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জনসহ হ্যামারস্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল স্কুল লন্ডন থেকে কার্ডিওলজি তথা হৃদরোগ চিকিৎসায় উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর দেশে ফিরে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং ব্রতী হন হৃদরোগ চিকিৎসায়। নিবেদিতপ্রাণ ডা. মালিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। 
মানুষের যে কয়েকটি রোগব্যাধি রয়েছে হৃদরোগ তার অন্যতম। বিশে^র শীর্ষস্থানীয় হন্তারক ব্যাধিও বটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে উচ্চরক্তচাপ নির্ণয় ও চিকিৎসা, ইসিজি-ইকোকার্ডিওগ্রাম ইত্যাদি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে হৃদরোগের চিকিৎসা সহজসাধ্য হয়েছে, তবে ব্যয়বহুল। অপারেশনসহ করোনারি বাইপাস, অ্যানজিওপ্লাস্টি, বেলুনথেরাপি, হৃদরোগের ব্লক দূরীকরণে স্টেন্ট বা রিং পরানো অনেক সহজ হয়েছে। তবে চিকিৎসা ব্যয় কমানো সম্ভব হয়নি। শতভাগ সুস্থতার নিশ্চয়তাও নেই বললেই চলে। বর্তমান প্রেক্ষাপটের তুলনায় ডা. আব্দুল মালিকের অবদান স্মরণ করতে হবে অবশ্যই। দেশে তিনিই প্রথম রোগীসহ সর্বস্তরের মানুষকে জটিল রোগ হৃদরোগ সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন করে তোলেন এবং এ সম্পর্কে লেখনী ধারণ করেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন আধুনিক ও উন্নত হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য বৃহৎ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। এ প্রসঙ্গে আমাদের স্মরণ করতে হবে দেশের আরও এক প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে- যিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন বারডেম হাসপাতাল- ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য। এর ফলে প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন হাজার হাজার রোগী। ডা. আব্দুল মালিক ২০০৪ সালে স্বাধীনতা পদক অর্জন করেন। ২০০৬ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে মনোনীত করে। দেশের চিকিৎসা জগতে তিনি একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে প্রতিভাত হবেন। তার মৃত্যুতে দেশ ও জাতির যে প্রভূত ক্ষতি হলো, তা অপূরণীয়। 

×