ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

কক্সবাজার এক্সপ্রেস

প্রকাশিত: ২০:০৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

কক্সবাজার এক্সপ্রেস

.

বাংলাদেশ রেলওয়ে কথা রেখেছে। বহুল প্রতীক্ষিত কক্সবাজার এক্সপ্রেস শনিবার যথারীতি চলাচল করেছে রাজধানী ঢাকা থেকে সুবিশাল সমুদ্রসৈকত পরিবেষ্টিত কক্সবাজার পর্যন্ত। অনুরূপ চলেছে সেখান থেকেও। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ, যাত্রী পর্যকটদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ-কৌতূহল, উত্তেজনা-উদ্দীপনা চলছিল অনেকদিন থেকে। অবশেষে সেই স্বপ্নযাত্রা সম্পন্ন হলো মহান বিজয়ের মাসের শুরুতেই। আপাতত ঢাকা থেকে কক্সবাজার এবং সেখান থেকে রাজধানী পর্যন্ত প্রতিদিন চলবে দুটি ট্রেন। থামবে মাত্র দুটি স্টেশন- চট্টগ্রাম শাহজাজাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রেলস্টেশনে।

প্রতিদিন হাজারের বেশি যাত্রী মালামাল আনা-নেওয়া সম্ভব হবে এই রেলপথে। ফলে, এটি আর শুধু ভ্রমণেই সীমাবব্ধ থাকছে না, একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার করবে। সবিশেষ যেটি উল্লেখযোগ্য সেটি হলো, ছয়তলা বিশিষ্ট আইকোনিক কক্সবাজার রেলস্টেশনÑ যেখানে রয়েছে বিলাসবহুল-আরামদায়ক যাত্রীসেবাসহ সবরকম সুযোগ-সুবিধা। কেউ চাইলে সেখানে সমুদ্র সৌন্দর্য অবলোকন উপভোগসহ দিনে-দিনেই ফিরে আসতে পারবেন ঢাকায়।

দেশের রেলপথ নেটওয়ার্কের সঙ্গে ৪৮তম জেলা হিসেবে যোগ হলো কক্সবাজারের। নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলিতে আকর্ষণীয় সমুদ্রের তরঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হয়েছে ঝিনুক আকৃতির সুবিশাল আইকোনিক রেলস্টেশন। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, ১৩৩ বছর আগে তৎকালীন ব্রিটিশরা কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিলেও অগ্রসর হতে পারেনি। পাকিস্তান সরকারও ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার চরম অবহেলায় দূরে ঠেলে দিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়কে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবায়নের অগ্রযাত্রায় যুক্ত করা হয়েছে কক্সবাজারকে। এর ফলে, প্রতিবছর অগণিত পর্যটক স্বল্প ব্যয়ে স্বল্প সময়ে আরামদায়ক নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে বেছে নিতে পারবেন রেলপথকে। এর পাশাপাশি স্থানীয়দের যাতায়াতসহ পণ্য পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে বহুলাংশে। অদূর ভবিষ্যতে এই রেলপথ সম্প্রসারিত হবে কক্সবাজারের রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত, যা চূড়ান্ত পর্যায়ে যুক্ত হবে ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথের সঙ্গে। ফলে, এতদঞ্চলের দেশগুলোর সর্বস্তরের মানুষের সহজলভ্য যাতায়াতের পাশাপাশি স্বভাবতই বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক লেনদেন, বিনিয়োগ কর্মসংস্থান। কেননা, সড়ক বিমানপথের তুলনায় রেলপথের সুযোগ-সুবিধা, সুলভ, সময়সাশ্রয়ী নিরাপদ।

কক্সবাজার জেলা সন্নিহিত অঞ্চল টেকনাফ-সেন্টমার্টিনস, মহেশখালী দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন অঞ্চল। প্রতিবছর সারাদেশ থেকে অগণিত পর্যটক কক্সবাজারের দীর্ঘতম মনোরম সমুদ্রসৈকত পরিদর্শনে যান সপরিবারে। বিদেশী পর্যটকরাও আসেন। বিশেষ করে দুই ঈদে দীর্ঘ ছুটির মৌসুম অথবা অন্য কোনো অবকাশে পর্যটকের ভিড়ে কক্সবাজারে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। তবে সড়কপথে কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের যাতায়াত খুব সহজসাধ্য নয়। যানজটের পাশাপাশি ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তারপরেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে আকর্ষণ কমেনি কক্সবাজারের। এবার তাতে যুক্ত হলো বাড়তি আনন্দযাত্রা। ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের রেলপথ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের যে কোনো স্থান থেকে রেলপথে যাওয়া যাবে কক্সবাজারে।

×