প্রবীণ পিতা-মাতার পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সেবা করা সকল সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব
প্রবীণ পিতা-মাতার পাশে দাঁড়ানো ও তাদের সেবা করা সকল সন্তানের নৈতিক দায়িত্ব। তবে, সময়ের প্রয়োজনে তা এখন আইনি দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশে যে হারে প্রবীণ পিতা-মাতার সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে খুব কমসংখ্যক প্রবীণ পিতা-মাতারাই সন্তানদের কাছ থেকে সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছেন। এদেশের শহরে বা গ্রামের বেশিভাগ প্রবীণ পিতা-মাতারাই অবহেলার শিকার। মাতা-পিতা শারীরিক ও আর্থিকভাবে অচল হয়ে পড়লে বাধ্য হয়েই সন্তানদের উপর নির্ভর করতে হয়। এদিকে, পরম আদর-যতেœ বেড়ে ওঠা সক্ষম সন্তানেরা বৃদ্ধ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে, তাদের ভালো-মন্দের বিষয়াদি তদারকি করবে; দেশীয় কৃষ্টিতে এমনটাই আশান্বরূপ।
কিন্তু আজকাল সন্তানেরা তাদের এই নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সন্তানেরা তাদের ভালোবাসা ও প্রয়োজনীয় যতœাদি থেকে পিতা-মাতাকে বঞ্চিত করছে। প্রবীণ পিতা-মাতাকে অবহেলা ও তাদের অস্তিত্বের অবমূল্যায়ন করছে। বর্তমানে সন্তানেরা উচ্চশিক্ষায় যতই শিক্ষিত হচ্ছে, ততই নৈতিকতা ও মানবিক শিক্ষার অভাবটা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। ফলে, নিরুপায় ও অসহায় হয়ে বয়স্ক পিতা-মাতার ঠিকানা হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। পশ্চিমা দেশের প্রভাব যে শুধু বাঙালি সমাজ-ব্যবস্থা, কৃষ্টি-সংস্কৃতিতেই পড়ছে তা কিন্তু নয়; বর্তমানে পরিবার কাঠামোতেও অভূতপূর্ব পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রবীণ পিতা-মাতার দায়িত্ব পালনে সন্তানদের অনাগ্রহতা তারই ফলস্বরূপ।
সমাজ-ব্যবস্থা ও পরিবার কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন সহজেই গ্রহণীয়, কিন্তু বয়স্ক পিতা-মাতাকে পৃথক করে দিয়ে পরিবার গঠন করার বিষয়টি বাঙালি সংস্কৃতিতে দৃষ্টিকটু দেখায়। বর্তমানে, শহরে বয়স্ক পিতা-মাতাকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসের মতোই পথের ধারে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমের গেটে ফেলে আসাটা যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও, গ্রামে প্রবীণ ও অচল পিতা-মাতাকে একঘরে ফেলে রাখা, পরিচর্যা, চিকিৎসা না করাটাও চরম অমানবিকতা ও মূল্যবোধ অবক্ষয়েরই লক্ষণ।
এ ধরনের ঘটনাবলি দেশের কৃষ্টি-সংস্কৃতিবিরুদ্ধ এবং লজ্জাজনক। সর্বোপরি, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও মানবিকতার ঊর্ধ্বে আর কিছু নেই। কাজেই, এসবের ওপর শিক্ষাকালের শুরু থেকেই গুরুত্বারোপ করতে হবে। এতে পারিবারিক শিক্ষাদানেরও প্রয়োজন আছে। এভাবেই, প্রবীণ পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ নিয়ে ক্রমাগত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এটি একটি বড় সামাজিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হবে।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে