![সংযত ও সংস্কারমুখী বাজেট সংযত ও সংস্কারমুখী বাজেট](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/আতিউর-73-2306011516.jpg)
ড. আতিউর রহমান
নির্বাচনের বছরেও একটি সংযত ও ভবিষ্যতমুখী বাজেট দেয়াটা মোটেও সহজ ছিল না। দুই বছর করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই এক পরিবর্তিত বাস্তবতার মধ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট। মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৫.৩৩ শতাংশ বেশি হলেও একে উচ্চাভিলাষী বলা ঠিক হবে না। আমি বরং এটিকে একটি ‘আশাবাদী বাজেট’ই বলবো।
তবে এই আশাবাদ ভিত্তিহীন নয়। পরিবর্তিত বাস্তবতার প্রতি যথাযথ সংবেদনশীরতা দেখিয়েই সরকার আসছে অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রণয়ন করেছে বলে মনে করি। সেই দিক থেকে যথেষ্ট সতর্কতার সাথেই বাজেটটি পেশ করা হয়েছে। মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে আধুনিক জীবনচলার জন্য প্রযুক্তি-নির্ভর কিছু পন্যে্র ও সেবার ওপর ভ্যাট ছাড় দেয়াটা যথারথই মনে হয়েছে।
তবে চ্যালেঞ্জগুলোকেও উপেক্ষা করারে সুযোগ নেই। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লক্ষ কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি বছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে তা ৭৭ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটের আয়ের দিক বিবেচনা করলে এটিই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কর আহরণের সার্বিক অনুশীলনে সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি আমাদের রয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে এ লক্ষ্য অর্জন খুবই সম্ভব।
তবে কর প্রবাহ বাড়াতে কেবল সরকারের ওপর দায় না চাপিয়ে সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমার মনে হয় যথাযথ কর দেয়া বাড়ানো কিংবা কর ফাঁকি রোধে নাগরিক আন্দোলন সরকারের রাজস্ব অভিযানে বিশেষ সম্পূরক ভুমিকা রাখতে পারে।
আসছে বছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে রাখার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে তা অর্জন করতে পারলে খুবই ভালো হয়। কিন্তু এ মূহুর্তে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের বেশি। কাজেই মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখাটা আসলেই চ্যালেঞ্জিং হবে। সেজন্য মুদ্রানীতিকে আরও রক্ষনশীল এবং বাজার-নির্ভর হতেই হবে।
একই সঙ্গে মুল্যস্ফিতির আঁচ থেকে কম আয়ের নাগরিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা জোরদার করাই বাঞ্ছনিয়। আইএমএফ-সহ উন্নয়ন সহযোগিদের দিক থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকা সত্ত্বেও আসছে অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ৮৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এটিকে জনস্বার্থের প্রতি নীতি-সংবেদনশীলতা হিসেবেই দেখি। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে।
তবে আমার মনে হয় আরও নতুন নতুন কর্মসূচি নেওয়া গেলে এবং বিদ্যমান কর্মসূচিগুলোর আওতায় দেয় সহায়তার পরিমাণগুলো আরও বাড়ানো গেলে দরিদ্র্য ও প্রান্তিক মানুষ আরও খানিকটা স্বস্তি পেত।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও মনে হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়সমূহের বাস্তবায়ন সক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা মনে রেখে বাজেট প্রনেতারা সে দিকে হাঁটেন নি।
তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মানবপুঁজির বিকাশের কোনো বিকল্পও নেই।