ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

 অহেতুক বিতর্কে সুফল আসে না

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৩১ মার্চ ২০২৩

 অহেতুক বিতর্কে সুফল আসে না

.

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুতনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের চলমান অদম্য অগ্রযাত্রায় বিশ্বস্বীকৃত-আকাশচুম্বী উন্নয়ন মাইলফলক স্থাপনে দেশ-জনগণ বিশ্বপরিমন্ডলে উঁচুমাত্রিকতায় সমাসীন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মহান স্বাধীনতা জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছাবার্তায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং বাংলাদেশের মানুষকে জানাই স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। বাংলাদেশের জনগণই মুক্তি এবং স্বাধীনতার আসল অর্থ জানে। কারণ তারা ১৯৭১ সালে তাদের নিজেদের ভাগ্য এবং নিজেদের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। গত ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ একসঙ্গে অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। যেমন- অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রগতি, জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধন জোরদার করা, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য এবং জলবায়ুগত সমস্যার মোকাবিলা করা, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় অংশীদার হওয়া। যুক্তরাষ্ট্র একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ, গণতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। উদ্যাপনের এইদিনে আপনার এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমার এই আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। জয় বাংলা!’

স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘বাংলাদেশের গর্ব করার মতো অনেক কারণ রয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান সুশিক্ষিত জনশক্তি এবং অগ্রসরমান তরুণ জনসংখ্যা নিয়ে দ্রুত আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা দিতে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে এসব গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আমার বিশ্বাস বাংলাদেশ নিজেদের বিশাল সম্ভাবনা দিয়ে এসব অর্জন করবে। আমি আগামী বছরগুলোয় বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব আরও গভীর করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের সঙ্গে আংশীদারত্ব এবং গত পাঁচ দশকের আর্জনে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে গণহত্যার মুখে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবতার প্রতি তার অঙ্গীকার তুলে ধরেছে। পরিবেশ সুরক্ষা এবং জলবায়ু সহনশীলতার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ জোরালো নেতৃত্ব দেখিয়েছে। উল্লিখিত বক্তব্যসমূহে জাতীয় স্লোগান জয় বাংলা উচ্চারণে উন্নয়ন জয়গানে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বনেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অনুপম চিত্রপট নির্মাণ করেছে। দেশবিধ্বংসী অন্ধকারের পরাজিত শত্রুদের মুখে চুনকালি পড়ার আর কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা আমার জানা নেই।  

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসার বিপরীতে মানবাধিকার পরিস্থিতি প্ররোচিত প্রতিবেদন প্রকাশ জনগণকে কিছুটা হতাশাগ্রস্ত করেছে। কোনো প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সম্পূর্ণ একপেশে এই প্রতিবেদন সচেতন মহলের বোধগম্য নয়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হয়নি। এছাড়া প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গুম, স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা, সভা-সমাবেশে বল প্রয়োগ, জাতীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানকে বাধা, মিডিয়া সেন্সরশিপসহ বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের নিকট বহুবিধ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। ২০২১ সালেও দেশের সম্মানিত সাবেক সেনা ্যাব প্রধানসহ কতিপয় ্যাব সদস্য সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের আমেরিকা ভ্রমণে কিছু অবাঞ্ছিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে উত্থাপিত কথিত অভিযোগগুলো কতটুকু প্রায়োগিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য তার বিশ্লেষণ-কৌতূহলী বিতর্কের অবসান আবশ্যক।

অতিসম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম জনমত সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরাশক্তির অযাচিত মন্তব্য-হস্তক্ষেপ দেশবাসীকে যারপরনাই মর্মাহত করছে। দীর্ঘ সময় ধরে দেশে বিরাজিত উদ্ভট রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ন্যূনতম অবদান না রেখে শুধু সামান্য কিছু আর্থিক অনুদানের অজুহাতে এটিকে প্রলম্বিত করার প্রকাশ্যে কূটকৌশল অবলম্বন এদের বর্বর মানবতাবিরোধী মনোবৃত্তির বহির্প্রকাশ। মুসলিম বিশ্বের নেতা সাদ্দাম হোসেন, কর্নেল মুয়াম্মর গাদ্দাফিসহ ফিলিস্তিন এবং অন্যান্য দেশে চরম নৃশংসতার আবরণে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শিশু-কিশোর-যুবক-বৃদ্ধদের হত্যা-গণহত্যার মাধ্যমে আরব বিশ্বের সম্পদ লুণ্ঠনে তাদের আগ্রাসী মহোৎসব প্রতিনিয়ত বিবেকবান মানুষকে হতবাক করছে। এসব সহিংস-নিষ্ঠুর-নির্দয় কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ প্রকাশ পেয়েছে এমন সুনির্দিষ্ট নজির নেই বলেই প্রবল জনশ্রুতি রয়েছে। বিশ্বের কথিত শান্তি-মানবতার ফেরিওয়ালারা বিশ্বের কোথায় কিভাবে শান্তি-মানবতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে তা জানতে জনগণের কৌতূহলও অফুরন্ত।

আমাদের সকলের জানা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক বা পরিপূর্ণ গণতন্ত্র চর্চার দেশ হিসেবে দাবি করার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র গুম, খুন বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে নিয়মিত অহেতুক-অনাকাক্সিক্ষত সবক দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্যের আলোকে এটি সুস্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রে দিন দিন মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে বন্দুক সহিংসতা, হত্যা, নিখোঁজ বা গুম পুলিশি নির্যাতনের ঘটনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় প্রায়ই সচেতন মহলের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ গণমাধ্যম সূত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিগত দুই-তিন দশক রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ এবং অপপ্রয়োগের আশঙ্কার মিথ্যা অজুহাতে পুরো আরব বিশ্বকে ধ্বংসের তলানিতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কত সংখ্যক নারী-শিশু-পুরুষ হত্যা করা হয়েছে তার পরিসংখ্যান নির্ধারণ অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপে মার্কিন প্রশাসন বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশের নির্বাচিত সরকার উৎখাতসহ কূ-হত্যাকান্ডে মাধ্যমে সামরিক জান্তাকে ক্ষমতায় আসীনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্তও নেহাত কম নয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধেও কতিপয় ক্ষমতাধর দেশের হীন চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সমর্থন-অস্ত্রের যোগান পাকিস্তানি হায়েনাদের বাংলাদেশে গণহত্যা পরিচালনায় কতটুকু সহায়ক ছিল ইতিহাসের কালো অধ্যায়ে তা এখনো অত্যুজ্জ্বল।

আমেরিকার জন্য তথাকথিত ভবিষ্যৎ হুমকির অপাঙ্ক্তেয় অজুহাতে অন্য রাষ্ট্রের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে ড্রোন হামলা চালিয়ে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- আন্তর্জাতিকভাবে বেশ আলোচিত-সমালোচিত। ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আইএস জঙ্গি সদস্যের অবস্থান সন্দেহে কাবুলে ড্রোন হামলার মাধ্যমে সাত শিশুসহ ১০ জন বেসামরিক মানুষের বিচারবহির্ভূত হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার ঘোষণায় পুরো বিশ্ব অতিশয় হতবাক হয়েছিল। জাতিসংঘের নিপীড়নবিরোধী কমিটির মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দীদের ওপর পুলিশ কারা কর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর আচরণ, জাতিগত বৈষম্য, নারী বন্দীদের ওপর যৌন নিপীড়ন, পুলিশ কর্তৃক বৈদ্যুতিক শক রেস্ট্রেইন্ট চেয়ার ব্যবহারসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী নানা নির্যাতনমূলক কৌশল ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের দাবি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক প্রতি বছর গড়ে এক হাজারের অধিক মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছে। একই ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও।

স্ট্যাটিস্তা গবেষণা দফতর-এর পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে আমেরিকানদের প্রাণ সংহারের সংখ্যা অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। উক্ত পরিসংখ্যান মতে ২০২১, ২০২০, ২০১৯, ২০১৮ ২০১৭ সালে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে যথাক্রমে ১০৫৫, ১০২০, ৯৯৯, ৯৮৩ ৯৮১ জন। জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্যানুসারে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সংঘটিত হয় হাজার ৭৫টি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব রেডক্রসসহ বিভিন্ন সংস্থা-মিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী আফগানিস্তান ইরাক ছাড়াও ২৮টি দেশে মার্কিন সরকারের গোপন কারাগারের সন্ধান মিলেছে। স্থল কারাগার ছাড়াও অন্তত ১৭টি জাহাজকে ভাসমান কারাগার হিসেবে ব্যবহারের একাধিক রিপোর্ট রয়েছে।   

২৯ মার্চ ২০২৩ গণমাধ্যমে প্রকাশিত চীনের স্টেট কাউন্সিল ইনফরমেশন অফিসের প্রতিবেদন অনুসারে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে আর্থিক দুর্নীতি, বর্ণবৈষম্য, অস্ত্র এবং পুলিশি সহিংসতাসহ সম্পদ কুক্ষিগত করার ঘটনা অতি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি পর্যায়ে অস্ত্র রাখার নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র চরম শৈথিল্য প্রদর্শন করেছে। এর ফলে বন্দুক সহিংসতায় হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বে বন্দুকের মালিকানা, বন্দুককেন্দ্রিক হত্যাকান্ড এবং এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যার ঘটনার দিক দিয়েও যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে অবস্থান করছে। ২০২২ সালে এসব ঘটনায় ৮০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বছর ৬০০টির বেশিম্যাস শূটিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। বন্দুককেন্দ্রিক সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রে মহামারিতে পরিণত হয়েছে। ১৮ বছরের কম বয়সী ৫৮০০-এর অধিক শিশুকে গুলি করে আহত বা হত্যা করা হয়েছে এবং স্কুলে গুলি চালানোর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০২টিতে। দেশটিতে বর্ণবাদ বাড়ছে এবং জাতিগত সংখ্যালঘুরা সেখানে ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ২০২০ থেকে ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিগত বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে হিংসাত্মক অপরাধ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাফেলো সুপারমার্কেটে ১০ জন আফ্রিকান-আমেরিকানের বর্ণবাদী গণহত্যা বিশ্বকে বিস্মিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৮১ শতাংশ এশিয়ান আমেরিকান বলেছেন যে, এশীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা বাড়ছে। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় পুলিশের হাতে আফ্রিকান আমেরিকানদের নিহত হওয়ার আশঙ্কা দশমিক ৭৮ গুণ বেশি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন সবচেয়ে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। আর আমেরিকান ধাঁচের গণতন্ত্রও এর জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় ১৬ দশমিক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় বিলিয়নিয়ারদের কাছ থেকে অনুদান নেওয়াও বেড়েছে। এইডার্ক মানি অনুদান মার্কিন নির্বাচনকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে। এর ফলে নির্বাচনের কৌশলে কারসাজি, রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং সামাজিক বিভক্তি যুক্তরাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক ঐকমত্যে পৌঁছানো কঠিন করে তুলেছে। ৬৯ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন যে, তাদের গণতন্ত্র পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং ৮৬ শতাংশ আমেরিকান ভোটারের মতে মার্কিন গণতন্ত্র মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে। আমেরিকান স্টাইলের গণতন্ত্রের প্রতি এখন সাধারণ জনগণের মোহভঙ্গ হয়েছে। এছাড়াও ২১ শতকের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাস বিরোধিতার নামে ৮৫টি দেশে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। এর ফলে কমপক্ষে লাখ ২৯ হাজার বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং ৩৮ মিলিয়ন মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে।

সমুদয় বিষয়ের তাৎপর্য অনুধাবনে এটুকু নির্দ্বিধায় বলা যায় দেশের অগ্রযাত্রার মহাসড়কে নানামুখী অন্তরায়-প্রতিবন্ধকতার মোড়কে গতিরোধ করার উদ্দেশ্যে এসব মিথ্যাচার দেশীয় চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের অংশ বিশেষ বৈ আর কিছু নয়। বীরের জাতি হিসেবে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে বরাবরই প্রমাণ করেছে কোনো বৈদেশিক চাপ-প্রভাবে জাতিরাষ্ট্র ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করে না। পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশ সরকারের সকল পদক্ষেপ যথার্থ প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে বলে আপামর জনগণের বদ্ধমূল বিশ্বাস। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপকৌশলের চর্চা এখন থেকেই পরিলক্ষিত। অবৈধ উপার্জিত অর্থে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কদর্য লবিস্টদের দিয়ে লবিং-তদবিরে জাতি কোনোভাবেই শঙ্কিত নয়। ঐক্যবদ্ধ জাতি অশুভ রক্তচক্ষুকে পরিপূর্ণ উপেক্ষায় তাদের বিবেকপ্রসূত রায় প্রদান করে দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের পথকে অধিকতর ঋদ্ধ করবে- এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমান সরকারের অধীনে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার  দেবে- অধীর আগ্রহে জাতি সেই দিকেই তাকিয়ে আছে।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×