ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

উন্নত বিশ্বে কৃষি বিজ্ঞান, আমাদের দেশে ব্যর্থতা?

শেখ ফরিদ

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ১৩ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৮:২৯, ১৩ জুলাই ২০২৫

উন্নত বিশ্বে কৃষি বিজ্ঞান, আমাদের দেশে ব্যর্থতা?

যমুনার বুকে তরুণের হালচাষ। ছবি: শেখ ফরিদ

আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে একটি ভুল ধারণা গভীরভাবে শিকড় গেড়ে বসে আছে—পড়াশোনা করে শুধু চাকরি করার জন্যই। বিশেষ করে শহরের তরুণ যদি গ্রামের মাটিতে ফিরে এসে কৃষিকাজ করতে চায়, তখন তাকে ঘিরে তৈরি হয় উপহাস, প্রশ্ন আর সন্দেহ। “এত পড়াশোনা করে শেষে জমিতে হাল চাষ?”—এ ধরনের বিদ্রূপ শুনতে হয় তাঁকে, যেন কৃষিকাজ মানেই অশিক্ষিতদের পেশা।

কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই মানসিকতা থেকে আমরা কবে বের হব? পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কৃষিকে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক পেশা হিসেবে দেখা হয়। সেখানে শিক্ষিত তরুণরা আধুনিক প্রযুক্তি, পরিকল্পনা ও উদ্যোক্তাভাবনা নিয়ে কৃষিকে আরও উন্নত ও লাভজনক করে তুলছে। অথচ আমাদের দেশে একজন স্নাতক যুবক যদি নিজ জমিতে চাষ করতে চায়, তবে তার পরিবার, প্রতিবেশী এমনকি বন্ধুরাও সেটিকে ব্যর্থতা হিসেবে দেখে।

এই মনোভাব শুধু একজন তরুণের সম্ভাবনা নষ্ট করছে না, বরং গোটা জাতির খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষির ভবিষ্যৎ এবং পল্লী উন্নয়নকেও প্রশ্নের মুখে ফেলছে। যদি সবাই অফিসের চেয়ারে বসতেই চায়, তাহলে মাঠে নামবে কে? খাবার উৎপাদন করবে কে?

বর্তমান কৃষি একটি বিজ্ঞান। সেখানে মাটি বিশ্লেষণ, সার ব্যবস্থাপনা, ড্রোন প্রযুক্তি, স্মার্ট সেচ ব্যবস্থা, হাইব্রিড বীজ, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা—এসব কিছু জানার জন্য প্রয়োজন আধুনিক জ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা। যেটা একজন শিক্ষিত তরুণই দিতে পারে। শুধু গামছা গলায় দিয়ে জমিতে নেমে পড়াই কৃষি নয়; বরং পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং বাজারের চাহিদা বুঝে কৃষিকাজ করাটাই নতুন যুগের কৃষি।

এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষিত তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রয়োজন সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন। স্কুল-কলেজ থেকেই কৃষিকে একটি সম্মানজনক ও সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে আধুনিক কৃষি ও কৃষি উদ্যোক্তার ধারণা। পাশাপাশি মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সরকারকেও ভূমিকা রাখতে হবে কৃষিকে ‘মাটি ঘেঁষা’ নয়, বরং ‘ভবিষ্যৎ নির্মাণকারী’ খাত হিসেবে তুলে ধরতে।

অফিসে বসে কাজ করাই কেবল ‘প্রতিষ্ঠা’ নয়। একজন শিক্ষিত কৃষকও হতে পারে সমাজের পথপ্রদর্শক, একজন সফল উদ্যোক্তা, এমনকি চাকরি দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন একজন মানুষ।

এখন সময় এসেছে এই চিন্তাধারা বদলানোর—“এত পড়াশোনা করে শেষে চাষবাস?”—এই প্রশ্ন নয়, বরং বলা উচিত, “পড়াশোনা করে বুঝে-শুনে জমিতে নামছে, তাই সে সফল হবে।”

কারণ, শিক্ষা যদি মানুষকে নিজ ভূমি, নিজের শ্রম, আর দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার সাহস না দেয়, তাহলে সেই শিক্ষা অপূর্ণ।

লেখকঃ শেখ ফরিদ

কবি ও গণমাধ্যমকর্মী

সরিষাবাড়ী, জামালপুর।

×