ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগের আহ্বান

-

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিনিয়োগের আহ্বান

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’ উদ্বোধনকালে আবারও দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। এই ভবনে বিডার পাশাপাশি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) কার্যালয় করা হয়েছে। ফলে উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আর বিভিন্ন স্থানে ও দপ্তরে ছোটাছুটি করতে হবে না। কমবে হয়রানি।

একই ছাদের নিচে পাওয়া যাবে একাধিক সেবা- ওয়ানস্টপ সার্ভিস। সরকার দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছে। দেশে রয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ। রয়েছে যথাযথ অবকাঠামোসহ গ্যাস-বিদ্যুৎ পানির সুযোগ-সুবিধা। সর্বোপরি একশ’টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। ফলে, বর্তমান বিশ্ব মন্দাব্যবস্থায় বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি উত্তম স্থান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। 
গত বছর বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ড (বিডা) আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। বিডার চেয়ারম্যানের ভাষ্যে জানা যায়, সেবার ২৭৫ কোটি ডলার বা প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি এসেছে। বিনিয়োগের অধিকাংশই সৌদি বিনিয়োগ। সে দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প ও হাসপাতাল নির্মাণে বড় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। এর বাইরে বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে তুরস্ক ও চীন থেকে। এর মধ্যে বিনিয়োগ সংক্রাস্ত কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টার বরাতে জানা যায়, সব মিলিয়ে ১১টি খাতে অন্তত ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব পাওয়া যেতে পারে। অর্থমন্ত্রীর মতে, কর কাঠামো, নীতি সুবিধা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ও আদর্শ স্থানীয়। তবে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরা হয়েছে, যেমন- দক্ষ লোকের অভাব, তীব্র যানজট, কাঁচামাল প্রাপ্তি ও শিপমেন্টের সমস্যা ইত্যাদি। 
ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লাসগো, ল-ন, ফ্রান্সসহ যেসব দেশে সফরে গিয়েছেন, যেমন- জার্মানি, জাপান,  সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র- সেসব দেশেও দেশী-বিদেশী ব্যবসায়ী, শিল্পগোষ্ঠী এবং প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত ও আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। দেশে নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রস্তুতির পথে। ৩৫টির কাজ শেষ হয়েছে ইতোমধ্যে। দেশী-বিদেশী নিয়োগকারীদের জন্য কর অবকাশ, স্বল্পসুদে ব্যাংক ঋণ, বিদ্যুৎ-পানি, গ্যাস যোগাযোগ অবকাঠামোসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তবে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই দেশে প্রচলিত রীতিনীতি ও আইন মেনে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগ বন্ড ও প্রিমিয়াম বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারবেন প্রবাসীরা। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরে বাংলাদেশ আয়োজিত রোড শোতে বিপুল সাড়া পাওয়া গেছে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। 
দেশবাসীর বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মা সেতু সচল হয়েছে। রেলপথ নির্মাণের কাজও চলছে জোরেশোরে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মীয়মাণ বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউবের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সচল হতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ। ফলে, কক্সবাজার-টেকনাফ হয়ে মিয়ানমার থেকে চীনের কুনমিং সিটি পর্যন্ত স্থাপিত হবে সড়ক ও রেলযোগাযোগ। একদিকে ভারত-নেপাল-ভুটান, অন্যদিকে মিয়ানমার-চীন পর্যন্ত সরাসরি সড়ক ও রেলযোগাযোগ স্থাপিত হলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির চেহারা বদলে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশ হবে এর কেন্দ্রবিন্দু। সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই হতে পারে বিনিয়োগের জন্য সর্বোত্তম স্থান।

×