ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির অপরাজনীতি

ড. মিল্টন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

বিএনপির অপরাজনীতি

উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ইস্যুতে বিএনপির অপরাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও আশুগঞ্জ) আসনের উপ-নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ইস্যুতে বিএনপির অপরাজনীতির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। সেখানে ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিদের মূল্য দেওয়ার দলীয় কৌশল জনগণের সামনে প্রকাশ্যে এসেছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতায় এগিয়ে থাকা উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে হীনম্মন্যতার পরিচয় দিয়েছে দলটির শীর্ষ ব্যক্তিরা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিএনপির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে গত ১১ ডিসেম্বর (২০২২) তিনি জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ ডিসেম্বর তিনি দলে গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। এদিকে দল থেকে পদত্যাগের পর ওই আসন থেকেই আবারও নির্বাচনের জন্য ১ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র কেনেন। ওইদিন রাতে কেন্দ্র থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এই উপনির্বাচনে তার বিপরীতে শক্তিশালী কোনো প্রার্থী না থাকায় সহজেই তিনি জয় পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরও উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতারা যে আচরণ করেছেন তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এদিকে বিএনপির পদত্যাগে শূন্য আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী করছে না। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ উকিল আবদুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করায় বিষয়টি অন্যান্য দলের কাছেও ইতিবাচক মনে হয়েছে।

১ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদ সূত্র অনুসারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিল্লুর রহমানের বক্তব্য- ‘বিকালে আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে সাদ মোহাম্মদ রশিদ সাড়ে আট হাজার টাকার চালান জমা দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।’ বিএনপি যে সুস্থ ধারার রাজনীতির বিপক্ষে, তা স্পষ্ট হয়েছে বিএনপি ত্যাগ করে রাজনীতিবিদ উকিল আবদুস সাত্তারের এই মনোনয়নপত্র কেনার ঘটনায়। 
উকিল আবদুস সাত্তার কুমিল্লা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় লাভ করেন। এরপর তিনি পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২ জুন) এবং ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে নির্বাচিত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৮ বছর।

২০০১ সালে উকিল আবদুস সাত্তার টেকনোক্র্যাট কোটায় খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী (২০০১-২০০৬) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির সেই মেয়াদের বিভিন্ন সময় তিনি চারটি মন্ত্রণালয়ে (আইন, ভূমি, মৎস্য এবং বিদ্যুৎ) দায়িত্ব পালন করেছিলেন। 
তিনি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার। ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত এই ব্যক্তি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে শূন্য হওয়া আসনের উপ-নির্বাচনে নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্মতি প্রদানের মধ্যেও আছে তার দেশপ্রেমের প্রকাশ।

এজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমাত্র ছেলে মাইনুল হাসান তুষারকে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের পিছনে যুক্তিও আছে। কারণ, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল থেকে দেখা যায়, তিনি এলাকায় জনগণের আস্থার প্রতীক। সৎ ও সজ্জন বলে বিএনপির আদর্শহীন ও দুর্নীতির পরিপোষক নেতারা তার শত্রু হয়ে উঠেছে। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে বাড়ি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার। তিনি ১৯৭৯ সালেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে এলাকার মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত হন। তারপর তিন দশকের পথ চলায় তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা যেমন পরিপক্ব হয়েছে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চিনেছেন নিবিড়ভাবে। কেবল মানুষ নয়, তিনি প্রকৃতি ও প্রশাসনের এক অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন। ক্রমান্বয়ে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশের অন্যতম স্বচ্ছ রাজনীতির ধারাকে বেগবান করেন।

বিএনপির মতো দলের নেতা হয়েও নিজেকে সততার কষ্টিপাথরে যাচাই করে মানুষের মাঝে টিকে থাকা সহজ কথা নয়। রাজনীতির দুষ্টচক্রকে দূরে ঠেলে নিজেকে মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছেন এই নেতা। কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা, সরাইল-আশুগঞ্জের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এলাকায় নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে তার। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তিনি নিজে যে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেন সেটা পরিষ্কার।
তবে বিএনপি বহিষ্কার করার তিনদিন আগে ২৯ ডিসেম্বর (২০২২) প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন উকিল আবদুস সাত্তার, যা ৩১ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন তিনি। বিএনপি ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি করেছি। দলের যে কোনো সময়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা মানছি। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সংসদ থেকে পদত্যাগÑ এটাও মাইনা পদত্যাগ করেছি পার্লামেন্ট থেকে। এখন বুঝতে পারছি যে দলে আমাদের প্রয়োজন নেই, দলের কর্মকা-ে তা বুঝতে পারছি। বৃদ্ধ হয়ে গেছি, মানসম্মান থাকতে থাকতে দল থেকে চলে আসছি।’
উকিল আবদুস সাত্তারকে ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বদলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে (দৈনিক সংবাদ, ২১ জানুয়ারি ২০২৩)। ২১ জানুয়ারি স্থানীয় এক মতবিনিময় সভায় সরাইলের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা উপস্থিত ছিলেন। সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যান অংশ নেন। সাত্তার সাহেব যে ভালো মানুষ, সৎ মানুষ এটা সভায় উল্লেখ করে তাকে বিজয়ী করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন প্রকাশ করেন।
এর আগে ২ জানুয়ারি উকিল আবদুস সাত্তারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি। দুই সপ্তাহ পরেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তবে যেখানে ‘বিএনপি’ নামক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভালোবাসা ও নিরলস প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে নির্বাচিত সাবেক এই এমপির বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ করা হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক। ৫ জানুয়ারি (২০২৩) প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সাত্তার ছাড়া আরও ১২ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল প্রার্থী না দেওয়ায় সাত্তারের সঙ্গে লড়বেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি মনোনীত মো. আবদুল হামিদ।

তবে ভোটের মাঠে তার অবস্থান নাজুক। অন্য প্রার্থীদের অবস্থানও দুর্বল হওয়ায় প্রায় ‘ওয়াকওভার’ পেতে চলেছেন পাঁচবারের সাবেক এমপি উকিল আবদুস সাত্তার। অর্থাৎ ভোটের লড়াইয়ে তাকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। ১৯ জানুয়ারি (২০২৩) তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির কারণে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আরও বলেছেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন- আপনি পদত্যাগ করে আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আসলে কি ব্যাপার? এটা সবাই বুঝেন। সব কথা বলা যায় না। পরিস্থিতির কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আবার নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই। এ সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে নিয়েছি।’
এই রাজনীতিবিদের বক্তব্য হলো- ‘আমি বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে পদত্যাগ করি। পরে বুঝতে পারি আমি আমার এলাকার জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। তাই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে চাইছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্বতন্ত্র থেকে আমি শুরু করেছিলাম, আবার স্বতন্ত্র দিয়েই আমি শেষ করতে চাই। এজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনারা আবার আমাকে কলার ছড়া মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। আমি যেন আপনাদের বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারি।’ এভাবেই একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের প্রজ্ঞাম-িত কথা জনগণকে উদ্দীপিত করেছে।
তবে ১ ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐক্যের প্রতীক’ উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় কিছু নেতার অসদাচরণ থেকে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। উপরন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকা-ও সামনে এসেছে। প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছর অতিক্রম করে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি সার্বিক বিবেচনায় এখন দিশেহারা, অগোছালো সংগঠন।

স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে গোপনে ষড়যন্ত্র করে দলটি এখন বুদ্ধিদীপ্ত ও গঠনমূলক রাজনীতি থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। বিএনপিকে দেখে এখন মনে হয় বার্ধক্যে ভুগছে। দলটির নেতাদের এখনো যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। দোটানা ভাব তো আছেই, তার ওপর অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলে তারা। সহজ সরলভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে নেতাদের। রাজনীতির মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি এখন কা-ারীহীন, লক্ষ্যহীন যাত্রীর পথ অতিক্রান্ত করার মতো।

২০২০ সালে দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই জাতীয় সংসদে গিয়েছিলেন বিএনপির সদস্যরা। সে সময় থেকে ২০২২ অবধি সংসদে এমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি, যা বিএনপির জন্য ইতিবাচক হতে পারে। বরং বিএনপির এক সদস্য সংসদে বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃপায় তিনি সংসদে প্রবেশ করতে পেরেছেন। আরেকজন তার বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের ‘ক্রসফায়ার’ দেওয়ার দাবি তুলে ভয়ঙ্কর মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের সমর্থনে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে যেতে পেরে এবং সরকারি ভাতা পেয়েই খুশিতে গদগদ ছিলেন তারা। আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে অনেক নতুন নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে তাদের অনেকেই এখন খোঁজখবর রাখেন। তাদের সামনে বিএনপি নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরতে পারেনি। বিএনপির সংসদ সদ্যদের বালখিল্য আচরণ জনমনে যথেষ্ট হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। তাদের মাঠের রাজনীতিও তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। পাকিস্তানপন্থি বিএনপি-জামায়াত ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা তথা এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তাদের সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০ সালের করোনা মহামারি কিংবা ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণকে কোনো ভালো কথা বলে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির নেতা-কর্মীদের। করোনা ব্যাধির দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে থাকা জনসম্পৃক্ততার অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারত এই রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু মানুষের জন্য দায়বদ্ধ নয় সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কৃষকের ধান কাটা থেকে শুরু করে দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কর্মকা-ে যুক্ত ছিলেন।

জনসম্পৃক্ততার কারণে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির লক্ষণীয় কোনো কাজ চোখে পড়েনি। বরং মহামারি মোকাবিলায় সরকারের বিপুল প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতেও কুণ্ঠিত হতে দেখা গেছে তাদের। সরকারের কোনো কোনো ইস্যুতে তারা সমালোচনামুখর হয়েছে। সফল ও সুন্দর উদ্যোগকে ব্যঙ্গ করেছেন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সাফল্যও তারা স্বীকার করেন না। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার জন্য বিএনপি অনেক কাজ করে থাকে। আসলে উন্নয়ন নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ নেই। দেশের বর্তমান উন্নয়নের চেয়ে তাদের সময়ে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে- এটা বলা কেবল বাতুলতা।

সরকারের দুর্নীতির কথা বলারও সুযোগ নেই। কারণ, দুর্নীতির দায়ে তাদের শীর্ষ নেতারা উচ্চ আদালত পর্যন্ত দ-িত হয়েছে। কাজেই তাদেরকে আবার পুরনো ধারায় ফিরে যেতে হচ্ছে। গুরুত্বহীন ইস্যুতে সরকার বিরোধিতা তো আছেই, তার সঙ্গে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির ওপর তাদেরকে নির্ভর করতে দেখা যাচ্ছে। বিএনপির এই অপরাজনীতির ধারা থেকে বের হয়ে এসেছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া। 
বার্ধক্য উকিল আবদুস সাত্তারকে দমাতে পারেনি। তিনি যেন পুনরায় সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে সংগ্রাম শুভ বোধের উন্মীলন ঘটাবে। যে সংগ্রাম তাকে যুদ্ধজয়ী করে তুলবে। 
বিএনপি তার বহিষ্কারের ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকে কারণ দেখিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, বিএনপি কি আদৌ সুশৃঙ্খল একটি দল? বরং বিএনপিকে ত্যাগ করে তিনি মানুষের কল্যাণের রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। গণমাধ্যমে জানা গেছে, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে এলাকার স্বার্থে ভোট দেবেন এবং নির্বাচনে কাজ করবেন ব্যাপক সংখ্যক সাধারণ মানুষ।

এলাকাবাসীর অভিমত হলো, উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া একজন ভালো মানুষ ও ভদ্রলোক। তাই সাধারণ মানুষ তার পক্ষে রায় দেবেন। এছাড়া তিনি কারও ক্ষতি করেননি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ, সৎ ব্যক্তি।’ তার ছেলে মাইনুল হাসান তুষার বলেছেন, ‘আগে বাবার নির্বাচনে শুধু বিএনপির লোকজন মাঠে থাকতেন। এখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ফলে দলমত নির্বিশেষে সবাই আমার বাবার পক্ষে আছেন। আমরা এটিকে স্বাগত জানিয়েছি।’ ১ ফেব্রুয়ারি ভোট দিয়ে উকিল আবদুস সাত্তারকে নির্বাচিত করার এলাকাবাসীর প্রতিশ্রুতিতে আমরা শুভবোধের বিজয় ঘোষিত হতে দেখছি। উক্ত আসনের ৩ লাখ, ৭৩ হাজার, ১৪৮ জন ভোটার তার পক্ষে থাকবেন- এই প্রত্যাশা সবার।

লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু গবেষক, নির্বাহী কমিটির সদস্য 
সম্প্রীতি বাংলাদেশ 
[email protected]

×