ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার পুলিশ

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

সাইবার পুলিশ

সম্পাদকীয়

সম্প্রতি উদ্্যাপিত পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প ২০৪১-এর জন্য প্রণীত স্মার্ট বাংলাদেশের অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্মার্ট পুলিশ বাহিনী গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে এবার গঠন করা হচ্ছে সাইবার পুলিশ। স্বীকার করতে হবে যে, স্বাভাবিক অপরাধ যেমন- খুনখারাবি-হত্যা, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধ দমনে প্রচলিত পুলিশ বাহিনী যথেষ্ট সক্ষম হলেও ইন্টারনেট-অনলাইনভিত্তিক সাইবার অপরাধ দমনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে এখনো। যে কারণে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে জ্যামিতিক হারে।

বেড়েছে ফেসবুক হ্যাকিং, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন-পাচার, অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম ও উদ্বুদ্ধকরণ, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, দেশবিরোধী অপপ্রচার সর্বোপরি পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধ। মূলত এসব সাইবার অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্যই গঠন করা হচ্ছে পুলিশের বিশেষ সাইবার পুলিশ ইউনিট। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পুলিশ ব্যুরো ও ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে এ ইউনিট। দেশের প্রতি জেলায় থাকবে একটি করে সাব ইউনিট, যাতে সাইবার অপরাধের শিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও এই সেবা পেতে পারে। ইতোপূর্বে চলচ্চিত্রে রোবোকপ, সাইবর্গ এসব চিত্রায়িত হয়েছে। বাংলাদেশে এবার সেসব রূপ পেতে যাচ্ছে বাস্তবে।
বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে আরও উন্নত, সুসজ্জিত, স্মার্ট ও আধুনিক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট পেয়েছে পুলিশ সদস্যরা। ঊরুতে বাঁধা এই বিশেষ হোলস্টার বা বেল্টে একই সঙ্গে বহন করা যায় কয়েকটি অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র, হাতকড়া, ওয়্যারলেস, বড় করা যায় এমন ব্যাটন বা লাঠি, যা মূলত ফাইবার কার্বনের তৈরি, সর্বোপরি পানির বোতল, টর্চলাইট। কোমরের অংশে আরেকটি ছোট বক্সে থাকছে ক্ষুদ্রাকৃতির এসএমজি। ফলে, পুলিশকে আর আগের মতো হাতে বা কাঁধে ভারি বন্দুক অথবা রাইফেল বহন করতে হবে না। পুরোপুরি উন্মুক্ত হবে দুই হাত, যা সক্রিয় থেকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি, ছিনতাইকারী ও সন্ত্রাসীকে ধাওয়া করতে কিংবা সহজে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম। আপাতত গুলশান ও রমনা বিভাগের কয়েকশ’ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে এই ট্যাকটিক্যাল বেল্ট; যা পরে পুলিশ সদস্যরা মুহুর্মুহু সাইরেন বাজিয়ে গাড়িতে বসে টহল, নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। মোটরসাইকেল কিংবা হেঁটেও নিশ্চিত করতে পারবেন জননিরাপত্তা। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রায় সব পুলিশ সদস্যকেই দেওয়া হবে এই বেল্ট।

বাংলাদেশ পুলিশ শতভাগ না হলেও বহুলাংশেই ডিজিটাল ও আধুনিক হয়ে উঠেছে। দেশের থানাগুলোকে সংযুক্ত করা হয়েছে সিসিটিভিসহ সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও ডেটাবেজের আওতায়। অপরাধ তদন্ত, ময়নাতদন্ত, অপরাধী শনাক্তকরণেও ব্যবহার হচ্ছে ডিএনএ বিশ্লেষণসহ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। ফলে, স্বল্প সময়েই অপরাধীরা ধরাও পড়ছে। তবে জনবল সংকটসহ যানবাহন ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতিও রয়েছে। সরকার এসব পর্যায়ক্রমে পূরণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। ট্যাকটিক্যাল বেল্ট সংযোজনের মাধ্যমে পুলিশ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আরও সফল হবে নিশ্চয়ই। সাইবার পুলিশ  বাহিনী এ ক্ষেত্রে যোগ করবে আরও একটি নতুন মাত্রা।

×