ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৫ দফা নির্দেশনা

-

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩

২৫ দফা নির্দেশনা

সম্পাদকীয়

তিন দিনব্যাপী বার্ষিক জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৩-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ দফা দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। কোভিড-১৯ মহামারি উত্তর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ^ যখন বিপর্যস্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তখন এই সম্মেলনটি সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। কেননা, সরকার প্রণীত ও গৃহীত যাবতীয় নীতি নির্ধারণ এবং কর্মকৌশল মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত দেখভাল, তদারকি ও বাস্তবায়ন করে থাকেন জেলা প্রশাসকরাই।

সরকারের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাপেক্ষে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা, সেটাও তাদের কার্যপরিধির মধ্যে পড়ে। ২৫ দফা নির্দেশনায় যেগুলো সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলো হলোÑ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়াসহ জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ, সরকারি তহবিল ব্যবহারে কৃচ্ছ্রসাধন, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করা সর্বোপরি এসডিজি স্থানীয়করণের আওতায় নির্ধারিত লক্ষ্যগুলো অর্জনে তৎপরতা জোরদার ইত্যাদি। জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা দেখভাল করার পাশাপাশি দেশবিরোধী এবং জঙ্গি তৎপরতার দিকেও সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা স্মরণ করে দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৪১ মার্কিন ডলার থেকে ১২ হাজার মার্কিন ডলারে উন্নীত করা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তদনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের জনসাধারণকে একটি সুন্দর শান্তিপূর্ণ নির্বিঘ্ন জীবনযাপন উপহার দেওয়াই বর্তমান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য।

ডিসিরা এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা ও অবদান রাখতে পারেন। সে অর্থে ডিসিদের হতে হবে জনগণের সেবক। সম্মেলনে ডিসিরাও নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সক্রিয় ভূমিকা ও সহায়তা প্রত্যাশা করেন। তারা প্রশাসনে জনবল সংকটের কথাও তুলে ধরেন। 
বর্তমান জনবান্ধব ও গণমুখী সরকারের দেশব্যাপী নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত হলেও প্রশাসনে দক্ষতা এবং জনবল বাড়েনি আশানুরূপ। ফলে সরকারের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে তাল মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রায় সর্বস্তরের প্রশাসনকে- রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। গত তিন দশক বিশেষ করে বর্তমান সরকারের গত এক দশকে কর্মপরিধি বেড়েছে কয়েকগুণ। জনগোষ্ঠী বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।

অথচ প্রশাসনে জনবল বেড়েছে মাত্র দশমিক ২৭ ভাগ। ফলে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকা পর্যন্ত সুবিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসেবা দিতে পদে পদে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তদুপরি রয়েছে দক্ষ জনবলের প্রকট অভাব। আইটি বিশেষজ্ঞ ও ডিজিটাল কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই বললেই চলে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক মান ও দক্ষতা তেমন ভালো নয়। ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম-মাদকাসক্তি প্রায় সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় অন্তত সরকারি অফিস-আদালতের ক্ষেত্রে।

ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে এসব অনিয়ম-অনাচার-দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা অনতিবিলম্বে দূর করতে হবে। সরকারের নবপ্রণীত বিধি ডোপ টেস্টসহ শুদ্ধাচার পুরস্কার যদি এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হয়, তাহলেই এর সাফল্য ও সার্থকতা।

×