ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নোবেলের দেশ থেকে

সুইডেনের রাজনীতিতে ভূমিকম্প

দেলওয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ২১:০৫, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

সুইডেনের রাজনীতিতে ভূমিকম্প

সুইডেনের রাজনীতিতে ভূমিকম্প

দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী সুইডেনে জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত মাস সেপ্টেম্বর। চার বছরের সংসদের (রিকসদগ) মেয়াদ শেষে অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন। ১১ সেপ্টেম্বর- নিয়ম অনুযায়ী একযোগে হয়ে গেল জাতীয় সংসদ, জেলা পরিষদ ও স্থানীয় পৌরসভার (কমিউন) নির্বাচন। এই নিবন্ধ লেখার সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত না হলেও স্থানীয় সংস্থার নির্বাচনের মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। তাতে জাতীয় সংসদের প্রাপ্ত ফলাফলে ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জোট গঠনকারী দলগুলোর ভাগ্য।
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি ৮টি রাজনৈতিক দলের কোনটি। তাই গঠিত হতে যাচ্ছে ডানপন্থী জোটের সরকার। এবার এই সরকার গঠনের প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে সুইডেনের বর্ণবাদী দল সুইডেন ডেমোক্র্যাট (ঝাবৎরমব উবসড়শৎধঃ)। গোটা বিশ্বে শান্তি ও মানবাধিকারবাদের মডেল রাষ্ট্র বলে বিবেচিত সুইডেনে বর্ণবাদী দলের এই বিস্ময়কর উত্থান এ দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অমোচনীয় কলঙ্ক তিলক হিসেবে বসে গেল। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত পত্রিকা ‘গার্ডিয়ান’ এই ঘটনাকে রাজনৈতিক ভূমিকম্প বলে আখ্যা দিয়েছে। ফরাসী পত্রিকা লা মঁদে (খব গড়হফব) বলেছেÑ এটা ‘সুইডেনের রাজনীতির ভিত্তিমূলে একটি বড় আঘাত’!
এবার দেখা যাক প্রাপ্ত ফলাফলের অবস্থা। আধুনিক কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিভিন্ন মেয়াদে ৯০ বছর সুইডেনের শাসন ক্ষমতায় থাকাÑ ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সমাজবাদী দল ক্ষমতাসীন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে ফলাফল কিঞ্চিত ভাল করলেও সরকার গঠন করতে সক্ষম হচ্ছে না। তারা সংসদে আসন পেয়েছে ১০৭টি। বিগত নির্বাচনের ফলাফল থেকে ৭টি বেশি। দলটি নির্বাচনে অংশ নেয়া ৮টি দলের মধ্যে ভোট পেয়েছে সবচেয়ে বেশি ৩০.৪%। ২০১৮ এর তুলনায় ২.১% বেশি।
রক্ষণশীল প্রধান বিরোধী দল- মডারেট পার্টি তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। ০.৭% ভোট কম পেয়ে চলে গেছে তৃতীয় বৃহত্তম দলের স্থানে। ভোট পেয়েছে ১৯.১%। সংসদে দুটি আসন হারিয়েছে। প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ৬৮। মডারেট পার্টির দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে এ বছরের নির্বাচনের সবচেয়ে বেশি কামিয়াব হওয়া বর্ণবাদী দলÑ সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি হাঁটি হাঁটি পা পা করে দ্রুত সামনে এগোতে এগোতে এবার উঠে এসেছে চূড়ার শীর্ষে। তারা গতবারের চেয়ে ১১টি আসন বেশি পেয়ে, মোট ৭৩টি আসন নিয়ে তৃতীয় স্থান থেকে উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। ভোট পেয়েছে ২০.৫ শতাংশ। গতবারের চেয়ে তাদের ভোট বেড়েছে ৩.০ শতাংশ।

দলটি রাজধানী শহরে ভোট কম পেলেও ছোট শহরগুলোতে করেছে বাজিমাত। এই হিসেবে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট জোটের অপর তিনটি শরিক দল ভ্যান্সতার পার্টি (বাম দল, ২৪টি আসন, কমেছে ৪টি), পরিবেশবাদী মিলিও পার্টি (আসন ১৮, বেড়েছে ২টি) ও কৃষক দল- সেন্টার পার্টির (আসন ২৪, কমেছে ৭টি) আসন যোগ করে দাঁড়ায় ১৭৩টি আসন।
অপরদিকে রক্ষণশীল মডারেট পার্টির জোট অন্যান্য ৩টি দলের আসন নিয়ে পেয়েছে মোট ১৭৬টি আসন। এদের শরিক হলো লিবারেল পার্টি (আসন ১৬, কমেছে ৪টি), ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট (আসন ১৯, কমেছে ৩টি) এবং সুইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টির (আসন ৭৩, বেড়েছে ১১টি) আসন সংখ্যার যোগফল দাঁড়ায় ১৭৬টি। সংসদের ৩৪৯টি আসনের জন্য লড়াই করা দুই জোটের মধ্যে সমাজবাদী দলের নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ৪৮.৯% ও রক্ষণশীল জোট পেয়েছে ৪৯.৫% ভোট। ভোট দিয়েছে ৮৩.৮% ভোটার। ২০১৮ সালে নির্বাচনে এর হার ছিল ৮৭.২%।
মাত্র ৩টি আসনের ব্যবধান দুই জোটের মধ্যে। এই সুবাদে কিঞ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রক্ষণশীল জোট সরকার গঠন করার কথা নিশ্চিত করেছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী মাগদাল্যেনা আন্দারসন সরকার গঠনে অপারগতার কথা স্বীকার করে নতুন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন হবু প্রধানমন্ত্রী মডারেট পার্টির নেতা উলফ ক্রিস্টারসনকে। বর্ণবাদী সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলের নেতা জিমি ওকিসন সরকার গঠনে সমর্থন দেয়া এবং শরিক হওয়ার স্বার্থে আগে ভাগেই দাবি করে বসেছেন কয়েকজন মন্ত্রীসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। হবু সরকারপ্রধানের তা না মানার উপায় নেই। এদিক থেকে সুইডিশ জনগোষ্ঠীর যে অংশটি চিরকাল বর্ণবাদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে আসছে, তাদের এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির জয়, মানবতার পরাজয়, কলঙ্ক ও নিজেদের ব্যর্থতাকে আত্মগ্লানির সঙ্গে মেনে নিতে হলো। সুইডেনের রাজনীতির ইতিহাসে লেখা হলো এক কলঙ্কের ইতিহাস।
 এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল- বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়া একটি ছবির কথা। ৮০’র দশকে এপ্রিল মাসের এক শনিবারে সুইডেনের ভ্যাক্সিও শহরে হিটলারের সমর্থক নতুন নাৎসি তরুণদের একটি মার্চ পাস্টে তীব্র প্রতিবাদের অংশ হিসেবে পোল্যান্ডের অভিবাসী এক অশীতিপর বৃদ্ধা পেছন থেকে এক তরুণ নাজির পিঠে সজোরে তার হাত ব্যাগ ছুড়ে আঘাত করার দুঃসাহসের ঐতিহাসিক চিত্র কখনই ইতিহাস থেকে মুছে যাওয়ার নয়।
 বর্ণবাদের প্রতি কতটা ঘৃণা পোষণ করলে একজন বৃদ্ধা জীবনের মায়া ত্যাগ করে এতবড় দুঃসাহস দেখাতে পারেন, এটা ছিল তার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত বিশ্বের বুকে।

মাত্র ৪০ বছরের মাথায় এসে সেই সুইডেনে বর্ণবাদীরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তা ছিল কল্পনারও অতীত। তরুণ নেতা জিমি ওকিসনের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে যখন বর্ণবাদী সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলটি আত্মপ্রকাশ করে, তখন গোটা সুইডিশ জাতি তীব্র ক্ষোভে অপমানে, নিন্দা ও ঘৃণায় ফেটে পড়েছিল দেশব্যাপী। সকল ধরনের ভিন্নমত ও পথ ভুলে প্রতিটি রাজনৈতিক দল একাট্টা হয়ে অঙ্গীকার করেছিল- তারা যে কোন মূল্যের বিনিময়ে দলটির উত্থান ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করবে। করেও ছিল তাই। তার প্রমাণ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও দেখা গেছে।
সরকার গঠন প্রশ্নে নানা সঙ্কট ও জটিলতা দেখা দিলেও এই বর্ণবাদী দলটির সমর্থন নিয়ে বিরোধী পক্ষ সরকার গঠনের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করে। তারা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের নেতৃত্বের সঙ্কট ও নানা জটিল অবস্থার অচলায়তনকে মেনে নিয়ে পুরো চারটি বছর সমাজবাদী দলের জোট সরকারকেই সমর্থন দিয়ে গেছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন এসে যায়- তাহলে এবার গণেশ উল্টে গেল কেন? এর সদুত্তর নেই নতুন সরকার গঠন করা জোটের দলগুলোর কাছে। ‘রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই’-এই কথাটি সুইডেনেই আবার প্রমাণিত হলো অপ্রত্যাশিতভাবে।
কথা হলো- এই বর্ণবাদী দলের এমন উত্থান ঘটল কিভাবে? নজর দেয়া যাক তাদের শুরুর দিকটায়–কিভাবে দলটির উত্থান হয়েছে ধীরগতিতে। এরা ভোট পেয়েছিল ১৯৮৮ সালে-০.০২%, ১৯৯১ সালে- ০.০৯%, ১৯৯৪ সালে- ০.২৫%, ১৯৯৮ সালে-  ০.৩৭%, ২০০২ সালে- ১.৪৪%, ২০০৬ সালে-২.৯৩%, ২০১০ সালে- ৫.৭০%, ২০১৪ সালে- ১২.৮৬%, ২০১৮ সালে-  ১৭.৫৩%, ২০২২ সালে -২০.৬%। স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন থেকে তারা ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে হয়ে উঠেছে জাতীয় রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। ৪ শতাংশ ভোট না পেলে সুইডেনের সংসদ নির্বাচনে কেউ অংশগ্রহণ করতে পারে না। সেই যোগ্যতায় তারা অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে।
যাদের ভোটে দলটির এই অকল্পনীয় উত্থান, তার পেছনে এবার ছিল তরুণ-যুবা, মহিলা, বয়স্ক, শ্রমজীবী শ্রেণী ও নতুন ভোটার। এদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি ছিল- স্বাস্থ্যসেবা, স্কুল, শিক্ষা, বয়স্ক, পেনশনবিষয়ক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতিমালার দিকটি। এই সেক্টরগুলোতে স্থবিরতা বিরাজ করছে দীর্ঘদিন থেকে। আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন ঘটেনি কোন ক্ষেত্রে। পরিবর্তনের অঙ্গীকার ও সুফল ভোগের স্বপ্ন দেখানোর পরেও অবস্থা রয়ে গেছে ‘থোর বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোর’-এর মতো।
এরপর এসে যায় যোগ্য, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতার সঙ্কট। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থানের অভাব, ভাতার ওপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি, ব্যয় বৃদ্ধি, সংঘবদ্ধ অপরাধ বৃদ্ধি, জীবিকা নির্বাহের সঙ্কটের মতো প্রশ্নগুলোর সমাধান দেয়ার বিষয় অমীমাংসিত থাকা। তিমিরে আলোর দিশা কে না দেখতে চায়?
পুরনো নেতৃত্বের কাছে আশাবাদের কিছু নেই। তাই নতুন ও জাতীয়তাবাদী নেতৃত্বের ওপরই ভরসা। যারা দেশপ্রেমের কথা বলে। কর্মবিমুখ ও বেকার বা সামাজিক ভাতার ওপর নির্ভরশীল অপরিকল্পিত অভিবাসন, যার ফলে নানা সামাজিক সমস্যা ও অপরাধের সৃষ্টির যৌক্তিক কারণগুলো তুলে ধরে। একটি বহুবর্ণের খাপছাড়া জনগোষ্ঠী ও সমস্যাসঙ্কুল বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক সমাজ দূষণের কথা বলে। এর বাস্তবতায় বাস করা তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন মানুষগুলোর কথাই তারা বলে। হুমকির মুখে কল্যাণ রাষ্ট্র ব্যবস্থার কথা বলে।

সেই কথাগুলো যাদের মনোপীড়া এবং আশঙ্কার কথা, তারাই বর্ণবাদের কথা চিন্তা না করে, মনে বিদ্বেষ পোষণ না করেও বর্ণবাদী দলকে ভোট দিয়েছে। শুধুই কাক্সিক্ষত প্রত্যাশার জায়গাটি নির্মিত হওয়ার আশায়।
ইউরোপ বা পৃথিবীর যে কোন দেশে জাতীয়তাবাদের প্রশ্নটি উঠে এলে তাদের দেশপ্রেমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় বর্ণবিদ্বেষের তকমা। আবার সেই সঙ্গে জাতীয়তাবাদের মতো প্রশ্নটি উত্থাপন করে যে কোন জাতির কাছে বা বিপুল জনগোষ্ঠীর কাছে যত দ্রুত গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় হওয়া যায়, ততটা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় না অন্য কোন রাজনৈতিক দর্শন উপস্থাপন করে। নিকট অতীতে বলকান রাষ্ট্রগুলোতে এর নজির এবং তার ফলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ইতিহাস একেবারেই জীবন্ত। এমন উদাহরণ আছে বেশুমার।

একই সময়ে অস্ট্রিয়ার ইয়রগ হায়দারের উত্থানের কথাও আমাদের মনে আছে। এদের রাজনৈতিক দর্শনের প্রথম পাঠ্য তালিকায় থাকে বিদেশী খেদাও। অভিবাসী আগমন প্রতিহত করো। সুইডেনে জনশক্তির চাহিদা পূরণের এবং একইসঙ্গে মানবতার কারণে লাখ লাখ অভিবাসীর (ইরাক, সিরিয়া) পিঁপড়ার মতো পরিবার পরিজনসহ দলে দলে আগমন ঘটতে ঘটতে আজ এ দেশে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০% এর ওপর।
এই জনগোষ্ঠীর ভেতর ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্যান্য অমুসলিম দেশগুলোতে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া রূপে দেখা হয় মুসলিম জনগোষ্ঠীকে। এদের সঙ্গে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ, জীবনাচার, মেজাজ-মর্জি। কোনটাই যায় না সহাবস্থানের পক্ষে। তাই প্রশ্ন ওঠে বিপত্তির। আশ্রিতরা আশ্রয়দাতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলে- তোরা রেসিস্ট। সৃষ্টি হয় অসন্তোষ, বিতৃষ্ণা ও নানা ইস্যু। বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে ওঠে অনিবার্য। এসব কোন দোষের বিষয় নয় আশ্রিতদের কাছে। অশিষ্ট আচরণ ও অপরাধের কথা উঠলেই পাল্টা অভিযোগ বর্ষিত হবে- ওরা কত ভাল? ওরা কি অপরাধ করে না। জবাব- ঘরের সন্তান অপরাধ করলে ক্ষমা করা যায়। নিজ ঘরে এসে বাইরের মানুষ অপরাধ করলে কার সহ্য হয়? এটা অভিবাসীরা বুঝতে চায় না!
কোন কারণ ছাড়াই সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রুতিশীল সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক নেত্রী, জনপ্রিয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্না লিন্দকে ছুরিকাঘাতে মেরে ফেলল বসনিয়ার এক অভিবাসী মুসলিম। তারপর অভিবাসীদের সম্পর্কে বর্ণবাদীদের মনের অবস্থা ও দৃষ্টিভঙ্গি কী দাঁড়ায়? এ কারণেই হয়ত জিমি ওকিসন বা সুইডেন ডেমোক্র্যাট দলের আবির্ভাব ঘটে! যদিও হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটেছে পরে। তবে অনুরূপ ছোটখাটো বা বড় ঘটনা তো ঘটছে হরহামেশাই পৃথিবীর সব প্রান্তে।
জিমি তার ক্যাম্পেন শুরু করেছিলেন অভিবাসনে কঠোর নীতিমালা অবলম্বন এবং তার সঙ্গে নিজের দেশপ্রেমের রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে। তার অবস্থান থেকে সেই বাস্তবতা অনেক অভিবাসী উপলব্ধি করে যুক্ত হয়েছে তার দলে। এবারের নির্বাচনে তার দল থেকে দুজন ইরানী মুসলিম অভিবাসী নির্বাচিত হয়েছেন এমপি। তাদের একজন নিমা গোলাম আলীপুর, অপরজন রাশিদ ফারিভার। নিমা রোস্তামী নামের আরেকজন এ্যাডভোকেট নিযুক্ত হয়েছেন প্রভাবশালী পদে ডিবেটর হিসেবে। ২৭ সেপ্টেম্বর সংসদে নতুন অথবা বর্তমান স্পীকার দায়িত্বভার নিয়েই শপথ করাবেন নতুন সরকার প্রধানকে। তারপর দেখার বিষয় নতুন সরকারের কার্যক্রম।


লেখক :  সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক
স্টকহোম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
[email protected]

×