ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরুজ্জামান মানিক

পুলিশকে বন্ধু ভাবুন

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

পুলিশকে বন্ধু ভাবুন

মানুষের জীবনে ভাল বন্ধুর ভূমিকা অপরিসীম। একজন ভাল বন্ধুই পারে জীবনে চলার পথের বন্ধুর ভুলগুলো শুধরে দিয়ে আলোর পথের সন্ধান দিতে। জীবনে সেই পরম বন্ধু, যে কিনা বিপদে-আপদে সুখে-দুঃখে কাছে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়ায়। মানুষে মানুষে বিশ্বাস আর ভালবাসার সংমিশ্রণে বন্ধুত্বের পবিত্র বন্ধন তৈরি হয়। আর এ ভালবাসা কখনও জোর করে আদায় করা সম্ভব নয়। মানুষ মানুষকে নিজের মনের অজান্তেই ভালবাসে। ভালবাসার এ সুন্দর রসায়নটা শুধু মনের মধ্যে থেকেই সৃষ্টি হয়। যে কোন রকম বন্ধুত্ব থেকেই ভালবাসার উৎপত্তি! পুলিশ জন্মলগ্ন থেকেই জনগণকে বন্ধু ভাবছে, আর জনগণের ভালবাসা পাওয়ার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা করছে। প্রশিক্ষণ থেকে অবসর পর্যন্ত দাবি করছে, পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ ও জনগণের এ ভালবাসা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পুলিশ জনগণকে একতরফাই ভালবেসে চলছে। জনগণ পুলিশের এ গভীর প্রেমের আহ্বানে কবে সাড়া দেবে তা আল্লাহপাকই ভাল জানেন। পুলিশের সেবা নিয়ে সমাজে যতই বিতর্ক থাকুক না কেন তাদের সংশ্লিষ্ট কাজগুলো নিজেদেরই করতে হয়। মানুষের শেষ ভরসার আশ্রয়স্থল এখনও বাংলাদেশ পুলিশের দরজা। নাগরিক সভ্যতাকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্রে বসবাসরত শান্তিপ্রিয় জনগণের জন্য একটি সুরক্ষিত সভ্য সমাজ নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিরামহীনভাবে কাজ করতে হয়। পুলিশ বাহিনীর কর্মকা- পরিচালিত হয় বাহিনীর নিজস্ব অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলাকে ভিত্তি করে। এই বাহিনীর প্রশিক্ষিত জ্ঞান আহরণ করেই পুলিশ সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, কাজের যোগ্যতা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষ তেমন অবগত নন। পুলিশ মানুষের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারবে, তাও মানুষ ভাল করে জানে না। সাধারণ শ্রমিকের সঙ্গে পুলিশের কর্মঘণ্টার কোন মিল নেই। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, আগামী দিনে পুলিশ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্য অসহায় ও বিপন্ন মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রেখে ২০২১-২০৪১ শান্তি রূপকল্প বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য বিশেষ অবদান রাখবে। পুলিশের হাজারো সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সরকার ও জনগণ পুলিশের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। সবাই পুলিশের সেবার ওপর নির্ভর করার পরও রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রধান সহায়তাকারী সেবক এই পুলিশকে জনগণ কেন ভালবেসে বন্ধু ভাবতে পারছে না তার কারণ আজও অজানা। তবে কেন জনগণ পুলিশকে ভালবাসবেন তার দু-একটি বিবেচ্য বিষয় উল্লেখ করা হলো ১. মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে সর্বপ্রথম পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই দেশপ্রেমে আপ্লুত হয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মোৎসর্গ করেন। ২. জনগণের জানমাল তথা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ২৪ ঘণ্টা দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। ৩. একমাত্র পুলিশই জনগণকে সরাসরি সেবা প্রদান করতে পারেন, যা কিনা অন্য কোন বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। ৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় মহামারী মোকাবেলায় সবার আগে পুলিশকেই পাওয়া যায়। ৫. পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দায়িত্ব একইসঙ্গে শুধু পুলিশকেই পালন করতে হয়। ৬. রাস্তায় যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আপনি সবার আগে পুলিশকেই কাছে পাবেন। ৭. হরতাল, ছিনতাই, রাহাজানি, সন্ত্রাসী কর্মকা- তথা প্রতিকূল পরিবেশে পুলিশকেই কাজ করতে হয়। ৮. অপ্রত্যাশিত হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচন তদন্তকার্য সম্পাদন এবং আসামিকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর কাজ পুলিশই করে থাকে। ৯. ভোটার তালিকা প্রণয়ন, আদমশুমারি, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ তথা গণতন্ত্র টেকসইভাবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পুলিশই সব ধরনের সহযোগিতা রাষ্ট্রকে করে থাকে। ১০. শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুলিশকেই নিরলসভাবে কাজ করতে হয়। ১১. শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস নির্মূল তথা সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশকেই কাজ করতে হয়। ১২. সর্বোপরি জনগণ তথা সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচাতে পুলিশ নিজের জীবন উৎসর্গ করে বার বার প্রমাণ দিয়েছে পুলিশ জনগণের পরম বন্ধু। উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো ছাড়াও অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য জনগণ পুলিশকে ভালবাসতে পারে, বন্ধু ভাবতে পারে। সত্য কথা হলো পুলিশের দু’একজনের দু-একটি মন্দ কাজের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে ভুল বুঝে সাধারন জনগণ। যা গোটা বাহিনীর জন্য বড়ই অপ্রত্যাশিত ও কষ্টদায়ক। পরিশেষে এই মহান বাহিনীর সম্মানিত সদস্য হিসেবে বলব, জনগণ আমাদের ভালবাসুক কিংবা না বাসুক, আমরা জনগণের মঙ্গলের জন্য যে কাজ তা হাসিমুখে করে যাব। কারণ পুলিশই জনগণের বন্ধু। লেখক : পুলিশ কর্মকর্তা
×