ভাল একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক। অত্র অঞ্চলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নেয়া ৪০ লাখ টাকা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। ঢাকা শহর পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, সেসব কর্মীর দৈনিক বেতন বা মজুরি মাত্র ২৬৫ টাকা। এত অল্প টাকায় গড়ে পাঁচজনের একটি পরিবার কিভাবে চলে, তা সহজেই অনুমেয়। বহু দেনদরবারের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক নির্দেশে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ভাতা দৈনিক ২৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৭৫ টাকা করা হয়। বেতন বাড়ানোর এই সুযোগ নিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের নেতারা ঢাকা উত্তরে কর্মরত প্রায় দুই হাজার ব্যক্তির কাছ থেকে মাথাপিছু দুই হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ টাকা নেন উৎকোচ হিসেবে। উত্তরের মেয়র বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরে জানতে পারেন ঘটনাটি। অতঃপর তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নেতাদের বাধ্য করেন ঘুষের ৪০ লাখ টাকা ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের। তদুপরি প্রত্যেক পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাড়িতে গিয়ে এই টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। ঘুষের অর্থ ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে এটি একটি ভাল দৃষ্টান্ত নিঃসন্দেহে। এর জন্য ঢাকা উত্তরের মেয়র ধন্যবাদ পেতেই পারেন। অন্যদিকে ধিক্কার জানাই তাদের, নিজ সম্প্রদায়ের দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ঘুষ খেতে যাদের বাঁধেনি!
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের স্বভাবতই একটা জবাবদিহিতা থাকে দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি। মহানগরী পরিচ্ছন্ন রাখাসহ সৌন্দর্যবর্ধনকল্পে ঢাকা দক্ষিণের বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি কয়েক হাজার ছোট বড় ড্রাম ও টিনের পাত্র স্থাপন করা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য। অনেক স্থানেই তা ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার অনেক স্থানে তা অবহেলিত, অব্যবহৃত। কোন কোন স্থানে তা ইতোমধ্যে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে অথবা চুরি হয়ে গেছে। এখানেই নাগরিক দায়িত্ব ও সচেতনতার অনিবার্য প্রশ্নটি এসে পড়ে। শহরের প্রত্যেক নাগরিক যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করেন, তাহলে শুধু পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে অথবা ময়লা ফেলার পাত্রের মাধ্যমে রাজধানীকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখা যাবে না কিছুতেই।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সম্প্রতি অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ১৯টি পার্ককে নতুন করে সাজিয়ে নাগরিকদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর জন্য দুই বছরমেয়াদী ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। রাজধানীর পার্কগুলো এমনিতেই রয়েছে বেহাল ও বেদখলে। সে অবস্থায় এগুলো দখলে এনে আধুনিক ও ব্যবহার উপযোগী করা অবশ্যই সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। পার্কগুলোকে যদি প্রকৃতই গাছপালাসহ সুশোভিত ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে সকাল-সন্ধ্যায় নাগরিকবৃন্দ, বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও নারীদের বিনোদনের বিশেষ সুবিধা হয়। বায়ু ও শব্দদূষণ কমিয়ে এগুলো মহানগরীর ফুসফুসের কাজও করতে পারে। মহানগরীতে এমনিতে বিনোদনের জায়গা নেই বললেই চলে। সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল গড়ে ওঠায় উত্তরের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল। শহরজুড়ে নতুন করে টিউবলাইট, এলইডি বাতি লাগানোর কথাও শোনা যাচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে পথ-ঘাট সংস্কারসহ জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরী কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। ঘুষ-দুর্নীতি কমলে এসব কাজ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সমাধা হতে পারে। এসব ক্ষেত্রেই ভাল দৃষ্টান্ত রাখার সুযোগ রয়েছে দুই মেয়রের।