
ছবি: সংগৃহীত।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তে অন্তত ৩১ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার পর, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পুরনো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—এই আধুনিক যুগেও কেন বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রচলিত এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান ব্যবহার করছে?
বিশ্লেষকদের মতে, বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে বারবার উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়নে ধাক্কা খাচ্ছে নানা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তান সফরের সময় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীন-পাকিস্তানের যৌথভাবে নির্মিত জেএফ-১৭ থান্ডার ব্লক-৩ যুদ্ধবিমান সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করলেও এখনো কোনো চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি।
ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্লক-৩ সংস্করণে রয়েছে চীনের পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ ‘মাইটি ড্রাগন’ এর প্রযুক্তি, উন্নত রাডার ও দূরপাল্লার পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা ও আধুনিক প্রযুক্তিতে এটি বিশ্বের অন্যতম সাশ্রয়ী মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত।
তবে এই চুক্তি শুধু একটি প্রতিরক্ষা ক্রয় নয়; বরং ভারতের জন্য এটি এক নতুন ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক ঘনিষ্ঠতা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের স্বাধীন ও বহুমাত্রিক পররাষ্ট্রনীতি ভারতের উদ্বেগের অন্যতম উৎস।
চলমান ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের প্রতিটি কৌশলগত পদক্ষেপে প্রভাব ফেলতে সক্রিয়, যার প্রমাণ—জেএফ-১৭ কেনার সম্ভাব্য চুক্তিতেও ভারতের কূটনৈতিক চাপ ও অসন্তোষ। এদিকে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বর্তমান বহরের বেশিরভাগই পুরনো চীনা এফ-৭ এবং সোভিয়েত যুগের মিগ-২৯, যেগুলোর কার্যকারিতা আজকের যুদ্ধনীতিতে মারাত্মকভাবে সীমিত।
২১ জুলাইয়ের ভয়াবহ দুর্ঘটনা আবারও এই বাস্তবতাকেই সামনে এনেছে—পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর বাহিনী দিয়ে আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা সম্ভব নয়।
নুসরাত