ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রথম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত ক্যাম্পাস জাবি

ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

প্রথম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত ক্যাম্পাস জাবি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের স্বৈরাচারবিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে হামলার নির্দেশ দেয় তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার। ফলস্বরূপ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক প্রতিরোধ। নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। এসময় হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে আবাসিক হলে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ঐ রাতেই ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে তাড়িয়ে দেয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হয় দেশের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত করা হয়। এই ঘটনার পর একে একে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শুরু হয় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিরোধী আন্দোলন। শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে এক সময় রাবি, ঢাবি সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাস নিষিদ্ধ ছাত্রলীগমুক্ত হয়।

সম্প্রতি কোন ক্যাম্পাস প্রথম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত হয় এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম ক্যাম্পাস হিসেবে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত হয়েছে। তবে এ দাবিটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যাচাই না করে এমন ভুল তথ্য প্রকাশের জন্য নিন্দাও জানিয়েছেন তারা। তাদের দাবি, ১৫ জুলাই দিবাগত রাত অর্থাৎ ১৬ জুলাই প্রথম প্রহরেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত হয়েছে। এছাড়া এ তথ্যটির সত্যতাও মিলেছে।

সেসময়কার পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা যায়, ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারি হাসিনা কতৃর্ক ‘রাজাকার’ আখ্যার প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল বের করে। সেই মিছিলে সন্ধ্যায় প্রথম দফায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এই হামলার বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। সেদিন রাত ১২টার দিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর ফের নৃশংস কায়দায় সশস্ত্র হামলা চালায় শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই হামলার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এক পর্যায়ে আবাসিক হলগুলো থেকে একে একে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করতে বেরিয়ে আসে। রাত ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করতে এসে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয়।

সেই রাতে ধাওয়া খেয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলগুলোতে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি—সম্পাদকের কক্ষসহ ব্লকের কক্ষগুলো ভেঙে ফেলে। এর ফলশ্রুতিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে আর ফিরে আসতে পারেনি। এছাড়া ১৬ জুলাই সকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফটকগুলোতে নিষিদ্ধ ‘ছাত্রলীগ প্রবেশ নিষেধ’ সম্বলিত পোস্টার টাঙিয়ে দেয়।

এদিকে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে ১৬ জুলাই বিকেল তিনটায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিতাড়িত করা হয়। পক্ষান্তরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৫ জুলাই দিবাগত রাত ২টার পরপরই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিতাড়িত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়া বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ১৬ জুলাই ভোরবেলায় আমরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ মুক্ত ক্যাম্পাসের খাতায় নাম লেখাই। ১৫ জুলাইয়ের কালরাতই ছিলো ছাত্রলীগের জন্য বিদায়ের ঘণ্টা। দেশে যারা দাবি করে আমরা প্রথম নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিতাড়ন করা ক্যাম্পাস তা ভুল। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকেই নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে বিতাড়ন করা হয়।

এ বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জাবি শাখার আহবায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জল বলেন, ১৫ জুলাই রাতে আন্দোলনকারীদের উপর নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার খবর শুনে হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা উদ্ধারে এগিয়ে আসে। তখনই শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যায়। এরপর আমরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকে এই ক্যাম্পাসে আর ঢুকতে দেইনি।

 
 

রিফাত

×