
শেরপুরে ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্বীকৃত গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছাত্র মাহবুব আলম হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিটের বিষয়ে নারাজীর আবেদন দাখিল করা হয়েছে। ১৬ জুলাই বুধবার দুপুরে ওই চার্জশিটের বিষয়ে নারাজী দাখিলের জন্য সময় প্রার্থনা করে একটি আবেদন দাখিল করেছেন মামলার বাদী শহীদ মাহবুবের মা মাফুজা খাতুন। ওই বিষয়ের শুনানী গ্রহণ করে শেরপুর সদর জিআর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান মাহমুদ মিলন আগামী ৩ আগস্ট পরবর্তী শুনানীর তারিখ ধার্য করেছেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ওই বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও অতিরিক্ত পিপি ছামিউল ইসলাম আতাহার জানান, মাহবুব হত্যা মামলায় চার্জশিটের বিষয়ে বাদীপক্ষের আপত্তি থাকার কারণেই নারাজী দাখিলের আবেদন করা হয়েছে। ওই মামলাসংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে এ চার্জশিট নিয়ে বাদী পরিবারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে তারা কর্মসূচি পালনের চিন্তাভাবনা করছেন বলে সমন্বয়ক মনিবুল ইসলাম জানিয়েছেন। বিষয়টি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ও জুলাই শহিদ দিবসের আলোচনা সভাতেও আলোচিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মিজানুর রহমান ভুঁইঞা তার বক্তব্যে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তে যা পেয়েছেন, সেটাই তিনি চার্জশিটে তুলে ধরেছেন। যথাযথ পেশাদারিত্বের সাথে পুলিশ তদন্ত করেছে। এমনকি জুলাই আন্দোলনে দেশের জেলা পর্যায়ে সংগঠিত হত্যা মামলারগুলোর মধ্যে দেশের প্রথম শেরপুরের ৩ শহীদের মামলার চার্জশীট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিট দাখিলের আগে নিয়মানুযায়ী পিপি’র মতামত নেওয়া হয়েছে। এখানে পুলিশের ওপর দায় চাপানোর সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এরপরও বিচার প্রক্রিয়ায় কেউ নির্দোষ হলে তার আদালতে ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৪ আগস্ট শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকায় প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে বহনকারী একটি দ্রুতগতির গাড়ির চাপায় নিহত হন শেরপুর সদরের পাকুড়িয়া এলাকার মাহবুব আলম ও ঝিনাইগাতীর পাইকুড়া গ্রামের শারদুল আশীষ সৌরভ। এছাড়া একই সময়ে আন্দোলনবিরোধী আওয়ামী লীগের একাংশের পাল্টা মিছিল থেকে গুলিতে নিহত হন কলেজ শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া (১৮)। শহীদ ছাত্র মাহবুব হত্যার ঘটনায় তার মা মোছা. মাফুজা খাতুন (৫৪) বাদী হয়ে গত বছরের ১২ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ১৯ আগস্ট ওই মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৮১ জনকে স্বনামে ও অজ্ঞাতনামা ৩০০/৪০০ জনকে আসামি করে এজাহার সংশোধন করা হয়। ওই মামলায় তদন্ত শেষে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম শাকিল ও গাড়িচালক হারুন মিয়াসহ ১৫০ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। একইসাথে মামলায় ৭ জনকে অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
Jahan