ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বন্ধ বাজার খোলাসহ নতুন বাজার সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতার তাগিদ

শ্রমবাজার ২৫টি থেকে নেমে এসেছে ১৬টিতে

মীর্জা মসিউজ্জামান

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ১৫ জুলাই ২০২৫

শ্রমবাজার ২৫টি থেকে নেমে এসেছে ১৬টিতে

ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশের শ্রম বাজার

ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে বাংলাদেশের শ্রম বাজার। বর্তমান বৈশ্বিক যুগে যেখানে দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা, সেখানে দেশের এই শ্রমবাজার ফিকে হয়ে আসছে। শুধু দুই বছরেই অন্তত দশটি শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে গেছে। ২৫টি থেকে এই শ্রমবাজারের সংখ্যা নেমে এসেছে ১৬টিতে। এ বছর বন্ধের আশঙ্কায় রয়েছে আরও কয়েকটি বাজার। এই অবস্থায় সরকারের সর্বোচ্চ মহলকে কূটনৈতিক তৎপতার মাধ্যমে বন্ধ হওয়া শ্রম বাজার খোলার পাশাপাশি নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। 
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশীরা অবস্থান করছে। এরমধ্যে মূলত ২৫টি হচ্ছে বাংলাদেশের বড় শ্রম বাজার। এগুলো হলো- সৌদি আরব, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্দান, সুদান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, মৌরিতানিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, বলিভিয়া, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, দক্ষিণ কোরিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইরাক, যুক্তরাজ্য, ব্রুনাই, মরিশাস ও জাপান। এরমধ্যে এ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে ৯টি। বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রম বাজারগুলো মধ্যে রয়েছে- ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, বাহরাইন, মিসর, লিবিয়া ও ইরাক। 
শ্রমবাজার বন্ধ হওয়ার পেছনে  অনেক কারণ রয়েছে।  এর মধ্যে অন্যমতম হচ্ছে শ্রমিকদের কল্যাণ কাজে সহযেগিতার হাত না বাড়িয়ে শ্রমিকদের দিয়ে ব্যবসা করা। কাজের পারমিট না থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন অসদুপায়ে মাত্রারিক্ত লোক পাঠানো। যোগ্যতার অভাব, সরকারিভাবে সহযোগিতার সুযোগ না থাকা। পাঠানো শ্রমশক্তির সঠিক ডেটা না থাকাসহ আরও সমস্যা রয়েছে বলে অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, দক্ষতার অভাব, পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা না থাকা, ভাষা বুঝতে না পারা সে দেশের কালচারের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাও অনেকাংশে দায়ী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো একটি রাষ্ট্রে যেখানে জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা, কর্মযোগ্যতা না থাকাসহ রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য শ্রমবাজারকে নষ্ট করার জন্য দাযী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, যে দেশে শ্রমবাজারে শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত না করে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশে লোক পাঠানো বন্ধ না করতে পারলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার নিজেই যেখানে শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সেখানে বাকিরা তো কিছুই না। শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করতে হলে প্রতিটি দেশের সঙ্গে সরকারের সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম চালু করলে সমস্যা সমাধান না হলেও অগ্রগতির সুবাতাস বইবে শ্রমবাজারে।
সরকার বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোসহ যে যে দেশে শ্রমবাজার চালু করা যাবে সেখানে প্রত্যেক সরকার প্রধানের সঙ্গে সরকার সর্বোচ্চ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার নিজে  লোক নেয় না যাদের শ্রমশক্তি বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করে সেখানে স্বচ্ছতা রেখে, নিজের জবাবদিহিতাকে সামনে রেখে শ্রমিকদের ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সেখানে প্রেরণ করতে পারলে সমস্যা থাকার সম্ভবনা নেই।
সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বিভিন্ন কমিটি করে সমস্যা খুঁজে তা সমধানকল্পে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করার জন্য ২০১৮ সালে ঢাকঢোল পিটিয়ে ৫৩টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ শ্রমবাজার গবেষণা সেল খোলা হয়েছিল। কিন্তু এটি মূলত অকার্যকরই রয়ে গেছে। গত সাত বছর ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে এস শ্রমবাজার গবেষণা সেল। অভিবাসন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বন্ধ ও স্থবির হয়ে যাওয়া শ্রমবাজার নিয়ে বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আর সমন্বয়ের অভাবই এ জন্য দায়ী।
ইতালির শ্রমবাজার ॥ ইউরোপের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার হিসাবে আবিভর্ূূত হয়েছিল ইতালি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই বেসরকারিভাবে গড়ে উঠেছিল এই শ্রম বাজার। বর্তমানে এই শ্রম বাজারটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে। পরিপূর্ণভাবে বন্ধ না হলেও বাংলাদেশিদের অস্বচ্ছতার কারণে ভিসা দিচ্ছে না দেশটি।
ঢাকায় ইতালি দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক জাল নথি বা ডকুমেন্টের কারণে ইতালি সরকার ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবরে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত সব কর্ম অনুমোদনের (ওয়ার্ক পারমিট) বৈধতা স্থগিত করেছে, যা যথাযথ যাচাইকরণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
তবে চলতি বছরের মে মাসে ভিসা পেতে অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর জন্য সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারণ (এমওইউ) সই করেছে ইতালি সরকার। গত ৬ মে দুইদিনের সফরে এসে ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতেও পিয়ান্তেদোসি এই এমওইউ সই করে গেছেন।
আরব আমিরাতের  শ্রমবাজার ॥ আনুষ্ঠানিকভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বন্ধ না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে এই দেশটিতে মাত্র ৬৭৬ জন কর্মী গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত জুলাই-আগস্ট মাসে যেসব কর্মী সংযুক্ত আরব আমিরাতে যেতে পারেননি, তাঁরাই সেপ্টেম্বরে গেছেন। সেপ্টেম্বরে কোনো ভিসাই দেয়নি দেশটি।
জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশটির শহর দুবাইয়ে কয়েক বছর ধরে কর্মী নেওয়া বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে  প্রবাসীরা অংশ নেওয়ায় এক ধরনের চাপ  তৈরি হয়েছে। তবে এই শ্রমবাজারে অনানুষ্ঠানিকভাবেই ভিসা বন্ধ রেখেছে। আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ॥ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত ছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের মে পর্যন্ত চার লাখ ৯৪ হাজার ১৮০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ২০২৩ সালের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার  শ্রমবাজার। এতে বিএমইটির ছাড়পত্র হওয়ার পরও ১৬ হাজার ৯৯০ জন কর্মী যেতে পারেননি। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে এই কর্মীদের যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। 
মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে এবং তাদের দেশে পাঠিয়ে দেয়। এমতাবস্তায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার কতটুকু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। 
মালদ্বীপের  শ্রমবাজার ॥ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হয় মালদ্বীপের শ্রমবাজার। কিন্তু চালু হওয়ার তিন মাস পরই বন্ধ হয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের  শ্রমবাজার। এতে ভোগান্তি পড়েন দালালের হাতে টাকা দেওয়া কর্মীরা। গত ২২ মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মালদ্বীপের বাংলাদেশ হাইকমিশন। এতে বলা হয়, মালদ্বীপ সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। তবে কোটা বাড়ানো ও ভিসা চালু করতে হাইকমিশন চেষ্টা করছে।
এই দুরবস্থার জন্য সুনির্দিষ্ট গবেষণা না থাকার পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশিদের অযোগ্যতার পাশাপাশি অনৈতিকতাকে দায়ী করছেন অভিবাসন খাত বিশ্লেষকরা। সেই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে পর্যাপ্ত উদ্যোগ না থাকা এবং অভিবাসন কূটনীতিতে দক্ষতা না থাকাকেও বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। 
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের সদ্যবিধায়ী যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ ফকরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন,‘শ্রমবাজারকে কাজে লাগাতে হলে প্রতিটি দেশের সঙ্গে সরকারের সর্বেচ্চ পর্যায় থেকে কূটনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে যে যে দেশের সঙ্গে শ্রমবাজার রয়েছে সেখানে সম্পর্ক বাড়ানোর মাধ্যমে বন্ধ থাকা শ্রমবজারগুলো চালু করা।
তিনি বলেন,  সরকারি সংস্থা বোয়েসেলসের পাশাপাশি বৈধ রিক্রুটং এজেন্সিগুলোকে কাজের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি করা।
 তিনি আরও বলেন,‘ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শ্রমবাজার হলো  সৌদিআরব। তারপরে দুবাই এবং মালয়েশিয়া। সেখানে সিন্ডিকেটের কারণে শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সেখানে শ্রমিকদের কল্যাণে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।’
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জনণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের শ্রমবাজারের বিষয়টি কখনো নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়নি। বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আমাদের পরামর্শ ছিল, শ্রমবাজারের জন্য একটি গবেষণা উইং তৈরি করা হোক। এই উইং নিয়মিত গবেষণা করবে। কিন্তু সেটি কখনোই তৈরি হয়নি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো বাজার খুললেই চাহিদার বিষয়ে খোঁজ না নিয়ে, সেখানে লোক পাঠানোর  প্রবণতা বন্ধ করা উচিত। বেসরকারি উদ্যোগের ফলেই, দেশের বাইরে কোনোরকমে টিকে আছে বাংলাদেশের  শ্রমবাজার। তবে এক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় নানা অনিয়ম বাড়াচ্ছে ভোগান্তি।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন শিকদার বলেন, ‘তাইওয়ানে আমাদের মার্কেট আছে, হংকংয়ে আমাদের মার্কেট আছে ইউরোপে আমাদের মার্কেট আছে কেয়ার গিভার নার্সিংয়ে, আমরা কি এগুলো তৈরি করতে পারব। এই মুহূর্তে কি আমাদের ভোকেশনাল, টেকনিক্যাল ট্রেনিং আপ টু ডেট? মার্কেট ধরছে ভারতীয়রা, ফিলিপিনোরা। তাদের হিউজ ইনভেস্টর আছে।’
অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের শ্রমিকদের চাহিদা কমার অনেক কারণে রয়েছে। প্রথমত, পরিবেশ, অযোগ্যতা তো রয়েছেই। সে সঙ্গে জবাবদিহিতামূলক সিস্টেম না থাকায় সেখানে কে কি করছে, সেখানে আদৌ লোকবলের প্রয়োজন রয়েছে কিনা, শ্রমিকদের আকামা তথা কাজের পারমিট আছে কিনা এ সকল বিষয়গুলো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এওইউ করে কিন্তু জিটুজি কোনো চুক্তি থাকে না। যা সমস্যার অন্যতম বড় কারণ! বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও তাদের ব্যবসার কারণে সঠিক ইনফরমেশন দিতে চায়না। যা একজন শ্রমিকের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের শ্রমিকরা সরকারিভাবে যায়, সেখানে আমরা যদি তাদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকের পরিবর্তে আস্তে আস্তে বাইলেটারিক রিভেনটেক এর দিকে না আসি তাহলে এটা আরও সংকুচিত হয়ে আসবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে আসিফ মুনীর বলেন, ‘প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে অভিবাসন কূটনীতির ব্যাপারে  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে প্রশিক্ষণগুলো হয়, যেমন ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমি। সেখানে যদি এটাকে বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।’
উন্নত দেশগুলোর বদলে যেসব দেশে বাংলাদেশি কর্মী আছে সেখানে দূতাবাসে লেবার এবং প্রেস কর্মকর্তা নিয়োগে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। ব্যক্তি কেন্দ্রিক বা পারিবারিকভাবে দেশের শ্রমবাজার চালু হয়েও শুরু দিকে বিশ্বে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীর চাহিদা ছিল অনেক। সময়ের সঙ্গে বিশ্ব যখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশি শ্রমবাজার পিছিয়েই পড়ছে। রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, সৌদি আরবে ভিসা বন্ধ। নতুন চাহিদাও কমে গেছে। দেশটি কী ধরনের ঘোষণা দেয়, সে জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কর্মী নিয়োগে তারা আরও যাচাই-বাছাই করতে পারে। তাই বিকল্প শ্রমবাজার চালু করতেই হবে। 
অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ) -এর চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশি নারীদের মূল গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। অধিকাংশ নারীই যান গৃহকর্মী হিসেবে। তাদের কেউ কেউ নানা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসেন। যৌন নিপীড়নের অভিযোগও আছে। এতে নারীদের মধ্যে বিদেশে যাওয়ার উৎসাহ কমছে।
তিনি বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার তেমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নতুন শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যেসব দেশে সম্ভাবনা আছে, সেটিও কাজে লাগানো হচ্ছে না। 
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)’র চেয়ারপার্সন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ড. তাসনিম সিদ্দিকী জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিকে কাজে লাগাতে হলে সর্বপ্রথম সিন্ডিকেট তুলে দেওয়াসহ প্রবাসীদের দক্ষতাকে বাড়াতে হবে। পাশাপাশি যত প্রকার অনিয়ম রয়েছে সব প্রকার অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রবাসীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া কিছু কিছু দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে সেগুলোকে ঠিক করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তবে এঠাও ঠিক  যে এ বিশাল সম্ভবনাকে কাজে লাগানো শুধু সরকার একা ইচ্ছে করলেই পারবে বিষয়টি এমন না। সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে নিজেদের ইমেজকে আরও সুসংহত করতে পারলে আশা করা যায় নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করা যাবে। 
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও  প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে গেছেন ১১ লাখের বেশি কর্মী। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ লাখে। তবে ২০২৪ সালে ৩ লাখ কমে হয় ১০ লাখ। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মোট ৪ লাখ ১০,৭৩১ জন কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন। যা গত বছরগুলোর তুলনায় কম। যদিও ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানিতে দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ছিল।

×