
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় বিস্ফোরণে পাঁচ ইসরায়েলি সেনার মৃত্যুর পর “বিশ্ব এখন আরও ভালো একটি জায়গা” বলে এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট দেওয়ায় ইসরায়েলি আদালত সাংবাদিক ইসরায়েল ফ্রেইয়ের রিমান্ড বাড়িয়েছে।
ফ্রেই, যিনি নিয়মিত গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন, তাকে সন্ত্রাসে উসকানি ও সমর্থনের অভিযোগে তেল আবিব ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়েছে।
নিজের পোস্টে ফ্রেই বলেন, “যারা মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে নিষ্ঠুর অপরাধগুলোর একটি সংঘটিত করেছে, তাদের মধ্যে পাঁচ তরুণের অনুপস্থিতিতে আজকের সকালটা আরও ভালো।’’
তিনি আরও লেখেন, “দুঃখজনকভাবে, এখনো গাজায় অ্যানাস্থেসিয়া ছাড়া অপারেশন করা সেই শিশুর জন্য, অনাহারে মৃত্যুর মুখে থাকা সেই মেয়ের জন্য কিংবা বোমার নিচে তাঁবুতে কাঁপতে থাকা পরিবারটির জন্য — এটি যথেষ্ট নয়।”
তিনি ইসরায়েলি মায়েদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে লেখেন, “তোমরা যেন তোমাদের ছেলেকে কফিনবন্দি অবস্থায় যুদ্ধাপরাধীর পরিচয়ে গ্রহণ করতে বাধ্য না হও। বর্জন করো।”
এর আগেও ফ্রেই তাঁর সমালোচনামূলক পোস্টের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। চলতি বছরের মার্চ মাসে তাঁকে ‘সন্ত্রাসে উসকানির’ অভিযোগে জেরা করা হয়েছিল, যেখানে তিনি বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনপন্থী পোস্ট দিয়েছিলেন।
এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “একজন ফিলিস্তিনি যদি আইডিএফ সেনা বা দখলদার এলাকায় কোনো বসতি স্থাপনকারীকে আঘাত করে, তবে তাকে সন্ত্রাসী বলা যায় না। এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলা যাবে না। সে একজন বীর, যে একজন দখলদারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার, মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।”
২০২২ সালের ডিসেম্বরেও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা সন্ত্রাসবাদ নয়,” এবং তিনি এক ফিলিস্তিনিকে “বীর” বলে অভিহিত করেন, যিনি একটি হামলার পরিকল্পনা করছিলেন।
২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর, গাজা যুদ্ধ শুরুর এক সপ্তাহ পর ফ্রেই গোপনে পালিয়ে যান, যখন তাঁর বাড়িতে উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলিদের একটি দল হামলা চালায়; কারণ তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার তিনি ইসরায়েলি পত্রিকা হারেৎজকে বলেন, “আমি আমার এই নিপীড়নের সামনে মাথা নত করব না। আমরা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট রক্ত, অশ্রু ও যন্ত্রণা সৃষ্টি করেছি। গাজাকে মুক্ত করো। যথেষ্ট হয়েছে।”
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিচারক রাভিত পেলেগ বার দায়ান মন্তব্য করেন, “এই মন্তব্যগুলো জনমনে গভীরভাবে আঘাত দেয় এবং অত্যন্ত অপমানজনক।” তিনি বলেন, “দেশ রক্ষার দায়িত্ব পালনে শহিদ হওয়া তরুণ সেনাদের মৃত্যু কীভাবে ভালো হতে পারে?”
তিনি আরও বলেন, তদন্তের স্বার্থে ফ্রেইয়ের রিমান্ড বাড়ানো জরুরি, কারণ তদন্তে বিঘ্ন ঘটতে পারে। একই সঙ্গে তিনি তাঁর জামিন আবেদনও খারিজ করেন।
এদিকে, নিউইয়র্কভিত্তিক গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ (সিপিজে) ফ্রেইয়ের গ্রেপ্তারির নিন্দা জানিয়ে বলেছে, “২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি কর্তৃপক্ষের বাড়তে থাকা অসহিষ্ণুতা এই ঘটনা আবারও স্পষ্ট করল।”
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ অবিলম্বে ফ্রেইয়ের মুক্তি এবং “সমস্ত বন্দি ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের” মুক্তি দাবি করেন। পাশাপাশি তিনি “গণমাধ্যম ও ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর চলমান দমন-পীড়ন বন্ধের” আহ্বান জানান।
আবির