
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্ভবত লুকিয়ে আছে দেশের নদীবালিতেই। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের অসংখ্য নদীর তলদেশে রয়েছে এমন মূল্যবান খনিজ পদার্থ, যেগুলোর বৈশ্বিক চাহিদা বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটাতে পারলে এসব খনিজ সম্পদ হতে পারে বাংলাদেশের পরবর্তী অর্থনৈতিক গেম চেঞ্জার।
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের তত্ত্বাবধানে ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু হওয়া একাধিক গবেষণায় এবং পরবর্তীতে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের মাধ্যমে এই খনিজ সম্ভাবনার বিশদ চিত্র উঠে এসেছে। এখন পর্যন্ত পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র এবং কক্সবাজার উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকায় বালির নমুনা পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকন, মোনাজাইট, গার্নেট, ম্যাগনেটাইট ও লিউকোসিনের মতো মূল্যবান খনিজ পদার্থ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি টন নদীবালিতে ২ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত হেভি মিনারেল থাকতে পারে। যেমন:
-
ইলমেনাইট: প্রতিটন বালিতে ১০-২৫ কেজি, যার বাজারমূল্য ২৫০–৩৫০ ডলার/টন। বাংলাদেশের মোট মজুদ প্রায় ১০ লাখ টন (মূল্য প্রায় ৩৩,০০০ কোটি টাকা)।
-
রুটাইল: টাইটানিয়াম ডাইঅক্সাইড তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মজুদ প্রায় ৭০ হাজার টন, মূল্য ৭,৫০০ কোটি টাকা।
-
জিরকন: পারমাণবিক শিল্প, সিরামিক ও গ্লাস তৈরিতে ব্যবহৃত। মজুদ ১.৫৮ লাখ টন, মূল্য প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকা।
-
মোনাজাইট: পারমাণবিক জ্বালানি, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারিতে ব্যবহৃত। বাংলাদেশের মজুদ ১৭ হাজার টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩,৬০০ কোটি টাকা।
-
অন্যান্য খনিজ: গার্নেট, ম্যাগনেটাইট ও লিউকোসিনেরও উল্লেখযোগ্য মজুদ রয়েছে।
বিশ্ববাজারে এসব খনিজের প্রধান সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক এবং সিয়েরালিয়ন। ফলে, এই বাজারে প্রবেশ করে বাংলাদেশ অর্জন করতে পারে এক বিশাল বৈদেশিক আয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন অনুসন্ধান, উত্তোলন ও রপ্তানি নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে এই খনিজ সম্পদকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব।
নুসরাত