ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

পদোন্নতির জন্য দৌড়ঝাপ বিতর্কিত প্রকৌশলী জামানুরের

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৪ জুলাই ২০২৫

পদোন্নতির জন্য দৌড়ঝাপ বিতর্কিত প্রকৌশলী জামানুরের

ধর্ষণ-দুর্নীতিসহ নানা দায়ে শাস্তি ভোগ করা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমান পদন্নোতির জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।

জানা গেছে, পদোন্নতির পূর্বে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করার কথা থাকলেও, উক্ত গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত না করেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর (গ্রেড-৪) শুন্য পদে ২৮ জন কর্মকর্তাকে পদন্নতির প্রস্তাব দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর আবেদন করেছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সদ্যসাবেক প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ।

এর মধ্যে ৫ কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের পদধারী নেতা এবং ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন, প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম খান, প্রকৌশলী এহতেশামুল রাসেল খান, প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র দে, প্রকৌশলী মুন্সী মোঃ হাসানুজ্জামান ও প্রকৌশলী নূর আহাম্মেদ। আবেদন করা কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর শাখার পদধারী নেতাদের নাম পদন্নতির জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ নিজেও ১নং সদস্য হিসেবে ছিলেন এই কমিটিতে। জানা গেছে ঐ তালিকায় আছে আছেন প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নাম। যার বিরুদ্ধে ছিল তরুণীকে আটকে রেখে দীর্ঘদিন ধরে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রকল্পেকাজ শেষ না করে অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়াসহ নানা অভিযোগ।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন প্রকাশ, মানবন্ধন হলেও তার বিরুদ্ধে একবার সাময়িক বরখাস্ত করা ব্যতীত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। এখন পদন্নোতির সংক্ষিপ্ত তালিকায় বিতর্কিত ধর্ষণ ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নাম দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা বলছেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ কে ম্যানেজ করে পদন্নোতির সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম উঠিয়েছেন।

প্রকৌশলী জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানা গেছে, জানা গেছে পাবনা সুজানগর পৌরসভায় আর্সেনিকমুক্ত সুপেয় পানি সরবরাহ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য চরঢ়বফ ডধঃবৎ ঊহারৎড়হসবহঃধষ ঝধহরঃধঃরড়হ প্রকল্পেকাজ শেষ না করে অর্থ আত্মসাৎ এবং অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি সরবরাহ-১ শাখার স্মারক নং ৬৪৪ তারিখ-১৭-১০-২০২২ মাধ্যমে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এদিকে গত ১৩ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনেও জামানুর রহমানের দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে।

দুদকের অভিযোগ পত্রের পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, পাবনা জেলার সুজানগর, ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর পৌরসভার পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নপূর্বক চাটমোহর পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করা হয় তবে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে অদ্যাবধি গ্রাহক পর্যায়ে পানি সরবরাহ করা হয়নি এবং প্রকল্পটির আওতামুক্ত নলকূপগুলো ভালাবদ্ধ ও অকেজো অবস্থায় রয়েছে, যেকারণে বর্ণিত বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কার্যকর ব্যবহারে অবহেলা পরিলক্ষিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক দুর্নীতি দমন কমিশনকে অবহিতকরণের নির্মিত অনুরোধ করা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে গত ৮ সেপ্টেম্বর দাখিলকৃত তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে ২০ নম্বর দফায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জামানুর রহমানের নারীলিপ্সুতা উল্লেখ করা হয়।

জামানুর রহমানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

তরুণীর বাবার বস ছিলেন, সেই সুবাদে জামানুরের বাসায় আসা যাওয়া করতেন। ২০১৫ সালে ওই তরুণী পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করে ডুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর একদিন হঠাৎ ফোন দিয়ে মোহাম্মদপুর রাজধানী হোটেলে কার্ড নিয়ে ভর্তির কথা বলে রুমে নিয়ে নির্যাতন, চাকরির কথা বলে তার বাবা-মাকে ম্যানেজ করে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ ও মানসিক নির্যাতন করেন জামানুর।

পরে ওই তরুণী মিথ্যা প্রলোভন বুঝতে পেরে মুখ খোলার কথা বললে তাকে ইনজেকশন দিয়ে মোবাইল, আইডি কার্ড, সার্টিফিকেট, পরীক্ষার অ্যাডমিট ও ডকুমেন্ট ছিনিয়ে নেয় জামানুর রহমান তার লোকদের দিয়ে। তরুণী উত্তেজিত হওয়ায় তাকে শিকল দিয়ে অন্য জায়গায় বন্দি করে রাখে কয়েক মাস। তারপর মানসিক হাসপাতাল, পাবনায় পাগল বানিয়ে ভর্তি করান।

২০২২ সালের ৩০ মে  স্বামী অজ্ঞাত ফোনে স্ত্রীর খবর জানতে পেরে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে পিবিআইয়ের সহযোগিতায় উদ্ধার হয়ে ২২ দফায় জবানবন্দি দেন। এসব ঘটনার প্রতিবাদে রাজশাহী প্রেসক্লাব সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট চত্বরে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এত অভিযোগ ও অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে বরখাস্ত করার পরেও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ জামানুর রহমানকে নির্দোষ দেখিয়ে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল করা হয়।

এতসব অভিযোগ এবং তা প্রমাণ হওয়ার পরেও যার চাকরিই থাকার কথা নয়। সেখানে তাকে পদন্নোতি দেওয়ার জন্যেও তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অনেক প্রকৌশলীও। তারা জানান উপরস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে জামানুর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে স্বপদে ফিরেছেন এবং এখন পদন্নোতিও পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

এত অভিযোগ থাকার পরেও তাকে কীভাবে পদোন্নতি দেওয়া হবে জানতে চাইলে  স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ রেজাউল মাকসুদ জাহেদীর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

অপরদিকে, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ কে ম্যানেজ করে পদন্নোতির সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম উঠিয়েছেন বলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

অন্যদিকে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ কে ম্যানেজ করে পদন্নোতির সংক্ষিপ্ত তালিকায় তার নাম, এমন প্রশ্ন তুলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে  চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জামানুর রহমানের  মুঠোফোনে ভোরের পাতার পক্ষ থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে, তিনি এই প্রতিবেদকে বলেন অপনি চিফ স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভাই আমার বাচ্চা অসুস্থ। এই মূহূর্তে আমি এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি না।

 

রিফাত

আরো পড়ুন  

×