ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

বাঁশের তৈরী সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন রহম আলী

মোঃ জাফরুল হাসান, নিজস্ব সংবাদদাতা, কালকিনি

প্রকাশিত: ২১:২৩, ৫ মে ২০২৫

বাঁশের তৈরী সামগ্রী বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন রহম আলী

ছবিঃ প্রতিবেদক

বর্ষা মৌসুম সামনে তাই গ্রামের লোকজন মাছ ধরার অন্যতম সামগ্রী বাঁশের তৈরী চালন ও চাইসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন রীতিমত। বিশেষ করে এর চাহিদা বর্ষা মৌসুম আসলে অনেকটাই বেড়ে যায়। অনেকে বর্ষা শুরু হবার আগেই এসব প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য বিভিন্ন হাট-বাজারে ছুটে যান। তাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন বাঁশের তৈরী সামগ্রী বানানোর কারিগররা।

হাঁটে গেলে বাঁশের তৈরী এসব মাল ক্রয়-বিক্রয় এখন চোখে পড়ার মতো। এমনই একজন কারিগর মাদারীপুরের অবিভক্ত কালকিনি উপজেলার গোপালপুর এলাকার ধজ্বী গ্রামের রহম আলী। তার বয়স এখন ৬২ বছর। জটিল রোগে ও বয়সের ভারে তিনি আর আগের মতো কঠিন কাজ করতে পারেন না। তবে তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন। প্রায় ২০ বছর যাবত রহম আলী তার নিজ ঘরের বাড়ান্দায় বসে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মাছ ধরার চালন, চাই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগীর খাঁচা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমনকি তিনি হাট-বাজারে বসেও ব্যস্ত থাকেন এসব সামগ্রী তৈরীর কাজে।

তিনি বছরের ১২ মাসই এ কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে বর্ষা আসলে চালন ও চাইসহ মাছ ধরার সামগ্রীর চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা বেড়ে যায়। তাই তিনি এ মৌসুমে এসব তৈরী জিনিস-পত্র পাইকারী-খুচরা ও বিভিন্ন হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে থাকেন। বাঁশই তার কাছে জীবিকা নির্বাহের অন্যতম হাতিয়ার। এ সমস্ত তৈরী করা জিনিসপত্র বাজারে বিক্রি করে যা আয় করেন তা দিয়ে চলে তার পুরো সংসার। তবে প্রথমে শুধু নিজে ব্যবহারের জন্য রহম আলী এগুলো তৈরী করতেন। কিন্তু হাঁটে বাজারে এসব জিনিসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সংসারের ভরণ-পোষন যোগান দিতে রহম আলীর কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব বেড়েছে। শুধু এখন রহম আলী নয় কালকিনি ও ডাসার উপজেলার অনেক অঞ্চলের বহু মানুষকে জীবনের তাগিদে দেখা গেছে এই পেশায়।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, কালকিনি ও ডাসার উপজেলার গোপালপুর হাট, শশীকর হাট, সাহেবরামপুর হাট, ফাসিয়াতলা হাট ও ঘোষের হাটসহ প্রত্যন্তাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার মাছ ধরার চালন, চাই, মাটি কাটার ওড়া ও মুরগীর খাঁচা তৈরীর কাজের সাথে জরিত রয়েছেন। অল্প খরচে অধিক আয় বলে এখন বাঁশের তৈরী এ শিল্পকে বেছে নিয়েছে অনেকেই। জীবিকার তাগিদেই এই শিল্পকে বুকে আগলে রেখেছে তারা। অন্যের জমিতে মুজুরী খাটলেও তাদের কাছে এ শিল্পের গুরুত্ব কম নয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এই শিল্প সংসারের বাড়তি আয়ের যোগান দেয়। অন্য কাজের চাইতে এ কাজই তাদের কাছে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় এখন বহাল তবিয়তে টিকে আছে বাঁশের তৈরী এ গ্রামীন শিল্পটি।

আজ সোমবার সকালে রহম আলী বলেন, ‘আমার বর্তমান বয়স প্রায় ৬২ বছর। তাই আমি ভারী কাজ করতে পারি না। যার কারণে আমি বাঁশ দিয়ে চালন, চাই, ওড়া ও খাচাসহ অনেক ধরনের জিনিসপত্র তৈরী করে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করি। আমি প্রায় ২০ বছর যাবত এ কাজ করে আসছি। আর এ উপার্জনের টাকায় এখন আমার সংসার চলে। পরিবার নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছি আমরা।

আরশি

×