ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

৯০ বছরের বেশি বয়সীরা পাবেন

বিশেষ বয়স্ক ভাতা

তপন বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২৩

বিশেষ বয়স্ক ভাতা

দেশের ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু করতে যাচ্ছে সরকার

দেশের ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা তৈরিসহ একটি প্রস্তাব তৈরির কাজ করছে। এই প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে চলতি অর্থবছর থেকেই বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু করা যাবে বলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পাশাপাশি সরকার দেশের সাধারণ জনগণের জন্য একটি পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০ থেকে ৫০ বছরের সাধারণ নাগরিক এই সুবিধার আওতায় আসবেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংসদে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
খসড়া প্রস্তাব অনুযায়ী, এই কর্মসূচির আওতায় ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। 
বর্তমানে দেশে মোট ৪৯ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২ লাখ মানুষের বয়স ৯০ বছরের বেশি। ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু হলে, তারা এটা (বয়স্ক ভাতা) থেকে আলাদা হয়ে যাবেন। দারিদ্র্যবিমোচন, বৈষম্য কমানো এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত মোট ১২৬টি কার্যক্রম ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ বাস্তবায়ন করছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানা গেছে। প্রতিবছরই ভাতাভোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ বাড়ছে। 
প্রবীণ ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক নিরাপত্তায় রয়েছে সরকারের বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি। বর্তমানে এই কর্মসূচির আওতায় ৪৯ লাখ দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে ৮০ বা এর বেশি বয়সীরা বেশি অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে রয়েছেন। সরকার এর মধ্যে ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ নজর দিতে চায়, এজন্য বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির চতুর্দশ সভার কার্যপত্রে বলা হয়েছে (সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি) সামগ্রিক অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক হলেও কিছু ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদতা রয়েছে। বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ থেকে ৬৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৯ লাখে বৃদ্ধি করেছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক। কিন্তু ৯০ বছরের ঊর্ধ্বে জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তনের যে প্রস্তাব ছিল, তা এখনো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
সভার সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অনুরোধ করেন বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট, কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) বলেন, এ বিষয়ে (৯০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ ভাতা) সিএমসি (সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি) সভার একটা সিদ্ধান্ত আছে। আমরাও এগোচ্ছি, কয়েকটা বৈঠকও করেছি। বিলম্বে হলেও বিষয়টি  চূড়ান্ত করা হয়েছে। আমরা প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছি, সরকার দেবে কী দেবে না, সেটা সরকারের সিদ্ধান্ত। পুরো বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে।
তিনি বলেন, ৯০ বছরোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ বয়স্ক ভাতা দিতে আমরা একটি নীতিমালা করছি। নীতিমালা অনুযায়ী এই ভাতাটা দেওয়া হবে। আমাদের প্রস্তুতি শেষ হলে আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানাব। করোনা পরিস্থিতির কারণে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
বিশেষ ভাতা কর্মসূচির আওতায় যাদের বয়স ৯০ বছরের বেশি হবে তাদের প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এখন প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা ৫০০ টাকা।

বর্তমানে ৪৯ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, আমরা হিসাব করে দেখেছি, এর মধ্যে ২ লাখ মানুষের বয়স ৯০ বছরের বেশি। ৯০ বছরের বেশি বয়সীদের বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু হলে তারা এটা (বয়স্ক ভাতা) থেকে আলাদা হয়ে যাবেন। যদি তাদের তিন হাজার টাকা দেওয়া হয় তবে আমাদের আরও যোগ করতে হবে আড়াই হাজার টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অর্থবছর থেকে বিশেষ বয়স্ক ভাতা চালু করা হবে জানিয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মোট ২৫টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ লাখ মানুষ। এতে আমাদের লাগে ৭ হাজার কোটি টাকা।
অবহেলিত বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক অবস্থার উন্নতিতে ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছর থেকে সরকার বয়স্ক ভাতা কার্যক্রম চালু করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন বয়স্ক ভাতা কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৬৪০ কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমান ২০২০-২১ অর্থবছরে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ বাড়িয়ে ৪৯ লাখ করা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করে ২ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ১৯৯৮-৯৯ সালের বরাদ্দ থেকে বর্তমান অর্থবছরে বরাদ্দের গড় বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ। বর্তমানে জনপ্রতি মাসিক ৫০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে ৪ লাখ ৪ হাজার ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। তখন প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। ওই অর্থবছরে এই খাতে ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরের বছর ভাতাভোগীর সংখ্যা বেড়ে হয় ৪ লাখ ১৭ হাজার। এজন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫০ কোটি টাকা। ২০০০-০১ অর্থবছর ভাতা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করা হয়। ভাতাভোগীর সংখ্যাও একসঙ্গে ১১ লাখ ৮৩ হাজার বাড়িয়ে ১৬ লাখ করা হয়। তখন ৩৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
২০০৯-১০ অর্থবছরে ভাতা আরও ১০০ টাকা বেড়ে হয় ৩০০ টাকা। ওই বছর ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় সাড়ে ২২ লাখ। এরপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভাতা বেড়ে হয় ৫০০ টাকা। এই অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা হয় ৪০ লাখ। বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। পরের বছর (২০১৯-২০) ৪৪ লাখ মানুষকে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়। এদের ভাতা দিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ৬৪০  কোটি টাকা।

×