
ছবিঃ সংগৃহীত
শনিবার পাকিস্তান তাদের ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পরপরই, ভারত চেনাব নদীর বাগলিহার বাঁধ থেকে পাকিস্তানে পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছে। একইসাথে, ঝেলাম নদীর উপর কিশানগঙ্গা প্রকল্প থেকেও পানির প্রবাহ কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশটি, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে, প্রতিবেশী দেশের দিকে 'এক ফোঁটাও' পানি যেতে দেবে না ইন্দাস নদী ব্যবস্থা থেকে।
এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা ও জলসম্পদ বিশ্লেষণের পর, বাগলিহার বাঁধে কাদামাটি পরিষ্কারের কাজ শুরু করে ভারত। বাঁধের স্লুইস গেটগুলো নামিয়ে দেওয়ায় পাকিস্তান অভিমুখী পানির প্রবাহ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানায় ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বিতীয় কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বাগলিহার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের গেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। জলাধারের কাদা পরিষ্কার করা হয়েছিল, এখন তা পুনরায় পূর্ণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
পাকিস্তানের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতের এমন পদক্ষেপের পাশাপাশি, পাকিস্তানের পতাকাবাহী জাহাজগুলোর দেশের কোনো বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।
হিমালয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গুরেজ উপত্যকায় অবস্থিত কিশানগঙ্গা বাঁধ, যা প্রথম বড় আকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, সেখানেও শিগগিরই ব্যাপক রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু হবে এবং সমস্ত পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। উভয় বাঁধের ডিজাইন নিয়েই পাকিস্তান আপত্তি জানিয়েছে।
চেনাব নদী ও তার উপনদীতে ভারত চারটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কাজ করছে, যেগুলো ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই প্রকল্পগুলো হলো: পাকাল দুল (১,০০০ মেগাওয়াট), কিরু (৬২৪ মেগাওয়াট), কওয়ার (৫৪০ মেগাওয়াট), এবং রাতলে (৮৫০ মেগাওয়াট)। এগুলো NHPC ও জম্মু-কাশ্মীর স্টেট পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (JKSPDC) যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন যথাক্রমে: পাকাল দুল (১৯ মে ২০১৮), কিরু (৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) এবং কওয়ার (২২ এপ্রিল ২০২২)।
প্রকল্প অগ্রগতির হিসাব অনুযায়ী: পাকাল দুলে ৬৬ শতাংশ, কিরুতে ৫৫ শতাংশ, কওয়ারে ১৯ শতাংশ এবং রাতলে প্রকল্পে ২১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
৯৩০ মেগাওয়াটের কিরথাই প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। রাতলে প্রকল্পে কোফার ড্যাম (অস্থায়ী বাঁধ) নির্মাণ প্রায় সম্পূর্ণ।
তিনি বলেন, “রাতলে প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ শারীরিক অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে এটি সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”
তিনি আরও জানান, রাতলে প্রকল্পের কাজ ২০২৩ সালের পর থেকেই গতি পেয়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান আগে থেকেই রাতলে ও কিশানগঙ্গা প্রকল্পের ডিজাইন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। ২০২৪ সালের জুনে, পাকিস্তানের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল এবং বিশ্ব ব্যাংক নিযুক্ত নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ মিশেল লিনো কিশ্তওয়ার জেলার দ্রাবশাল্লায় রাতলে প্রকল্প পরিদর্শন করেন।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
মুমু