ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

নারীর জয়গানে উদ্যাপিত বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

প্রকাশিত: ০০:৪৮, ৩ ডিসেম্বর ২০২১

নারীর জয়গানে উদ্যাপিত বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী

মনোয়ার হোসেন ॥ সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে ২০২১ সাল। এ বছরই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমান্তরালে এসেছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। আর বাঙালীর বীরত্বগাথার সেই উদ্যাপনে নেয়া হয়েছে বিশেষ আয়োজন। বহুমাত্রিক শিল্পের সম্মিলনে ‘বিজয়ের ৫০ বছর : লাল সবুজের মহোৎসব’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এফবিসিসিআই। হাতিরঝিলের এ্যামফিথিয়েটারে চলমান এ আয়োজনের তৃতীয় দিন ছিল শুক্রবার। নারী শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সজ্জিত ছিল এ দিনের অনুষ্ঠানমালা। প্রতিটি পরিবেশনায় প্রকাশিত হয়েছে নারীর জয়গান আর এগিয়ে চলার প্রত্যয়। সেই সঙ্গে এদিনের অতিথিদের কথনেও ব্যক্ত হয়েছে নারী জাগরণের বারতা। আমি নারী পেরোতে পারি সাত সমুদ্র নদী- এই ধারাভাষ্যের মাঝে মঞ্চে আবির্ভূত হন একঝাঁক নারী নৃত্যশিল্পী। প্রতিকূল পথ পাড়ি দেয়ার প্রত্যয় নেপথ্যে ভেসে বেড়ায়- যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...। প্রত্যয়ী আহ্বানের এই সুরের সঙ্গে দীপ্ত উচ্চারণে বয়ে যায় ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা/জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা...।’ দর্শক মাতিয়ে নয়নজুড়ানো কোরিওগ্রাফিটি উপস্থাপন করে ঈগলস ডান্সগ্রুপ। এরপর উপস্থাপিত হয় বর্ণিল ফ্যাশন শো। ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরে ধ্বনি প্রতিধ্বনিসহ দেশাত্মবোধ গানের সুরে নৃত্যের আশ্রয়ে উপস্থাপিত হয় রকমারি রঙের রঙিলা পোশাক। শাড়ি, লং ফ্রকসহ নানা পোশাক মডেলদের উপস্থাপিত নাচের সঙ্গে মডেলদের ক্যাটওয়াকে উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। এমন পরিবেশনার উল্টোপিঠে মুগ্ধতার প্রতিচ্ছবি হিসেবে ঝড়ে পড়ে গ্যালারিজুড়ে ছড়িয়ে থাকে দর্শকের করতালি। পরের পরিবেশনায় পুনরায় মঞ্চে আসে ঈগলসের শিল্পী দল। মায়াবন বিহারিনী হরিণী গহন স্বপন সঞ্চারিনী গানের সুরে উপস্থাপিত হয় আরেকটি কোরিওগ্রাফি। এরপর আমার সোনা বন্ধুরে তোমায় কোথায় রইলারে- সুরকে সঙ্গী করে উপস্থাপিত হয় প্রাচ্য আর পশ্চিমা পোশাকের মেলবন্ধনে সজ্জিত আরেকটি ফ্যাশন কিউ। এই শোয়ের মাঝে ভেসে বেড়ায় আমার মন তোরে পারলাম না বোঝাইতে, আছেন আমার ব্যারিস্টার আছেন আমার মোক্তার, সোনা বন্ধে আমারে দিওয়ানা বানাইলোসহ বেশ কিছু হৃদয়গ্রাাহী গানের সুর। পরের পরিবেশনায় উপস্থাপিত হয় গ্রাম বালার বিয়ের দৃশ্যকল্প। এতে ঈগলসের সঙ্গে মঞ্চে আসেন চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। আইলারে নয়া দামান আসমানের টেরা ও লীলাবালি লীলাবালি বড় যুবতী সই গো গানের তালে পরিবেশিত হয় আরেকটি নান্দনিক কোরিওগ্রাফি। এছাড়া এদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল মিউজিক্যাল পারফর্মেন্স। এ পর্বে এই সময়ের শ্রোতা-সমাদৃত চার সঙ্গীতশিল্পী গানে গানে আলোড়িত করে তোলে আয়োজনকে। হালকা শীতমাখা হেমন্তের এই রাতে শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়েছেন লুইপা, ডোরা, রেশমী ও ঐশী। এদিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গান বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা মুন্নী। সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আজকের এই আয়োজন নারীদের জন্য। লাল-সবুজের মহোৎসব প্রতিপাদ্যে চমৎকার একটি অনুষ্ঠান হচ্ছে হাতিরঝিলে। প্রতিটি বাঙালীর প্রাণে ছড়িয়ে দিতে হবে এই লাল-সবুজ। এই লাল-সবুজ আমাদের অহংকার। এই লাল-সবুজকে সঙ্গী করেই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপিত হচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িয়ে রয়েছে অনেক নারীর আত্মত্যাগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ- সকল আন্দোলন সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন বাংলার নারীরা। সেই সব নারীদের স্যালুট জানাই। যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এই লাল-সবুজের পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশের নারী ক্ষমতায়নের বিস্তৃতি ঘটেছে। তিনি নারীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এসব কারণেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাহিদ ফারুক বলেন, নারীরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। নারীর এই অগ্রযাত্রার নেপথ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইভাবে তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধির সোপানে। তাই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে ধাবিত হয়েছে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের পথরেখায়। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পর্যন্ত চলবে এই আয়োজন। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। আজ শনিবার হবে নজরুল উৎসব। ৫ ডিসেম্বর রবীন্দ্র উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। ৬ ডিসেম্বর থাকছে নৃত্য উৎসব। ৭ ডিসেম্বর অঞ্চলভিত্তিক অনুষ্ঠানে গাইবেন ঢাকা ও ময়মনসিংহের শিল্পীরা। ৮ ডিসেম্বর উপস্থাপিত হবে চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের শিল্পীদের পরিবেশনা। ৯ ডিসেম্বর পরিবেশনা উপস্থাপন করবে রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর খুলনা ও সিলেট বিভাগ। ১১ ডিসেম্বর থাকবে সশস্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান। ১২ ডিসেম্বর থাকবে লোকসঙ্গীতের পরিবেশনা। ১৩ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র তারকাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৪ ডিসেম্বর পরিবেশিত হবে মঞ্চনাটক। ১৫ ডিসেম্বর কনসার্ট। ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
×