
বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বুকে ধারণ করে দেশপ্রেম নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য যুবলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে রাজনীতি করলে সেই রাজনীতি টিকে যায়। কিন্তু যে রাজনীতি করতে যেয়ে লোভের বশবর্তী হয়, অর্থসম্পদটা যাদের কাছে বড় হয়ে যায়- তারা কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারে না। সবসময় এটা মনে রাখতে হবে, যদি রাজনীতি মানুষের কল্যাণে হয় সেটাই হচ্ছে সঠিক রাজনীতি। আর রাজনীতি যারা করতে আসে ভাগ্য তৈরি করতে, হয়ত তারা টাকা পয়সা আয় করতে পারে- কিন্তু তারপর তাদের অস্তিত্ব থাকে না। এটাই আজ প্রমাণিত সত্য। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সমালোচনাকে গুরুত্ব না দেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েই সরকার করোনাভাইরাসের টিকা আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে টিকা দেয়া শুরু করেছি। এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। এসব কথায় কান দিলে চলবে না। অনেকেই তো বলেছে- বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু আনতে পারেনি। আমি কিন্তু কোনদিকে তাকাইনি। কারণ আমার কাছে দেশের মানুষই সব থেকে বড়, মানুষের জীবন বড়। টিকা নিয়ে অনেকের মধ্যে শুরুতে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন তা কেটে গেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুক্ত হয়ে যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, যুবলীগের নেতাকর্মীদের বলতে চাই, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের সাহায্যে কাজ করে গেলে সেই সংগঠন টিকে থাকে। তাই যুবলীগকে আদর্শভিত্তিক সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সঞ্চালনায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দুঃসময়ে যুবলীগের নেতৃত্বদানকারী শিল্পমন্ত্রী এ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ হুমায়ুন এমপি, আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি ও সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা আবৃত্তি করেন দেশের খ্যাতনামা আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। জাতীয় সঙ্গীত ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরাবতা পালন এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এ পর্যন্ত যুবলীগের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম ও দেশের জন্য কাজ করার ইতিহাস সংবলিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠান থেকে সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যুবলীগের উদ্যোগে দেশের ৬৪ জেলায় পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষের জন্য একটি করে ঘর নির্মাণ করে দেয়া এবং যুব সমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ‘যুব উদ্যোক্তা সম্মেলন’ ও ‘কর্মসংস্থান মেলা’সহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেন।
হাজার কোটি টাকা বানিয়েও বিএনপি কিছু করতে পারেনি ॥ প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় জাতির পিতার আদর্শ ও ত্যাগের মহিমায় নিজেদের গড়ে তুলতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, লোভের বশবর্তী হয়ে রাজনীতি করলে তারা কিন্তু বেশিদিন টিকতে পারে না। এটা বাস্তবতা। এটা শুধু আমাদের দল বলে না। আমি সমগ্র বাংলাদেশে অন্য রাজনৈতিক দলের কথাই যদি চিন্তা করি তাহলে সেটাই আমরা দেখব।
তিনি বলেন, আমরা জানি বিএনপি এক সময় চিন্তা করেছে দুই হাজার কোটি টাকা থাকলে পরে নির্বাচন থেকে জীবনে কেউ তাদের সরাতে পারবে না। কিন্তু তাদের সরে যেতে হয়েছে। খারেদা জিয়া বড়াই করে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনদিন হতে পারবে না। সে কথা কিন্তু তার (খালেদা জিয়া) বেলায় ফলে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা তার ছেলেকে নিয়ে বানিয়েও কিছু করতে পারেননি। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগ আগামী এক শ’ বছরও ক্ষমতায় আসতে পারবে না- এটাও খালেদা জিয়ার ঘোষণা ছিল। আল্লাহর রহমতে শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে আওযামী লীগ প্রথমবার পাঁচ বছর, আর এবারে এই ১২ বছর ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এ জন্য তিনি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।
ভ্যাকসিন নিয়ে ‘কানকথায়’ কান দেবেন না ॥ করোনাভাইরাসের টিকা আনার পদক্ষেপ নেয়ার পরও বিভিন্ন সমালোচনার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আমরা করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু করেছি, এ নিয়ে অনেক কথা শুনতে হয়। যারা এর সমালোচনা করছে, তাদের কথায় গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। এসব কথায় কান দিলে চলে না। অনেকেই তো বলেছে- বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসবে না। অনেক উন্নত দেশও কিন্তু আনতে পারেনি। আমি কিন্তু কোনদিকে তাকাইনি। আমার কাছে মানুষ সব থেকে বড় দেশের মানুষ, মানুষের জীবন বড়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ যাতে করোনাভাইরাসের টিকা দ্রুত পায় তা নিশ্চিত করতে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরে বলেন, ‘আমি যখন প্রথম ভ্যাকসিনের জন্য টাকা দেই, এই ভ্যাকসিনের জন্য এক হাজার কোটি টাকা আলাদা রেখে দেই। সঙ্গে সঙ্গে এ্যাডভ্যান্সও করে দিয়েছিলাম যে, যখনই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখনই অনুমোদন দেবে সবার আগে যেন বাংলাদেশ পায় এবং সেটাই আজ প্রমাণিত সত্য। টিকা নিয়ে অনেকের মধ্যে শুরুতে কিছুটা দ্বিধা থাকলেও এখন তা কেটে গেছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভ্যাকসিন উপহার দেয়ায় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আরও অনেকেই দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের যেটা প্রয়োজন, আমরা কিন্তু নিয়ে এসেছি। এখানে যুবলীগের একটা দায়িত্ব আছে। বিশেষ করে আমরা বলেছি যে, ৪০ বছরের উপরে যারা, আর বিশেষ করে শিক্ষক থেকে শুরু করে অন্য যারা সব সময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে হয়, তাদের আগে ভ্যাকসিন দিতে হবে। টিকা নিয়ে মানুষের মাঝে এই ভয়টা দূর করতে হবে। সবাই যেন ভ্যাকসিনটা নেয় সেই ব্যবস্থা করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
করোনা ভ্যাকসিন নেয়ার পরও সবাইকে মাক্স পরিধানসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিকা নেয়ার পরেও কিন্তু স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। মাক্স ব্যবহার করতে হবে, হাত পরিষ্কার করতে হবে এবং সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে নজরে রাখতে হবে এবং এ ব্যাপারে যুবলীগও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে সেটাই আমি চাই।
একটি জাতির জন্য ১২ বছর কিছুই নয় ॥ প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির জন্য একযুগ অর্থাৎ ১২ বছর কিছু না। কিন্তু তারপরও আমরা যেভাবে এই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, পথ দেখিয়ে যাচ্ছি- যদি এই পথ ধরেই এগুনো যায় তাহলে এদেশ অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। এরপর ২১ বছর এদেশের মানুষের জীবন থেকে সম্পূর্ণ হারিয়ে যায়। সাধারণ মানুষ হয় বঞ্চনার শিকার। কারণ এই ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল। যদিও তারা (বিএনপি) ছেঁড়া গেঞ্জি আর ভাঙা সুটকেসের গল্প শুনিয়েছে। কিন্তু ভাঙা স্যুটকেসই জাদুর বাক্স হয়ে গিয়েছিল আর ছেঁড়া গেঞ্জি তো তখন ফ্রেঞ্চ শিফন শাড়ি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের কথা বলি, এরশাদের কথা বলি কিংবা খালেদা জিয়ার কথা বলি; যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই নিজেদের ভাগ্য নিয়েই ব্যস্ত ছিল। ব্যস্ত ছিল অর্থসম্পদ নিয়ে। মানুষের জন্য তারা কিছু করেনি। করলে যে করা যায়, সেটা আমরাই প্রমাণ করেছি।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় থেকে আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দুর্যোগ আসে, দুর্যোগ আসবে। কিন্তু সেই দুর্যোগের সময় আমাদের শক্ত থাকতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে। পরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে, কাজ করতে হবে। তবেই যে কোন দুর্যোগ মোকাবেলা করা যাবে এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ সময় তিনি দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি করোনাকারীন দুঃসময়ে যুবলীগের বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেখেছি করোনার সময় কেউ অসুস্থ হলে, বাবা-মা অসুস্থ হলে নিজের সন্তানও পাশে দাঁড়ায়নি। কিন্তু আমাদের যুবলীগের কর্মীরা তাদের পাশে গেছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-কৃষক লীগসহ আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা অসহায় মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছে। মৃতদের দাফন এবং সৎকারের ব্যবস্থা করেছে। ঘরে ঘরে খাদ্যসামগ্রী এবং ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে। কৃষদের আমন ধান কাটা, বন্যা দুর্গত, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো থেকে শুরু করে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালনসহ শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, তারা মানবতার জন্য এই কাজগুলো যে করেছে, এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়। মানুষের পাশে দাঁড়নো, মানুষকে সাহায্য করে, এটাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ত্যাগ ও আদর্শ নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে যুবলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে সব আন্দোলনে তরুণরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। কাজেই তাদের হাত ধরেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ জন্য তরুণদের প্রস্তুত হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। কিন্তু আজকের তরুণরাই তো আগামী প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ইনশাল্লাহ আমরা গড়ে তুলব।
সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশ কেমন হবে তার পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করেছি। আগামী এক শ’ বছর অর্থাৎ ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কেমন হবে তার জন্য ডেল্টা প্লান করেছি। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। এজন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের মানুষের কোন কল্যাণ করেনি। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা কেউই মানুষের জন্য কিছু করেনি, নিজেদের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল।
তিনি বলেন, এবারের ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছি, সেখানে বলা আছে- ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’। কারণ তারুণ্যই হচ্ছে সেই সময়, যে সময় হচ্ছে সব থেকে বেশি কাজ করা যায়। তারুণ্যই হচ্ছে কাজের সময়। এই তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি এটাই নিশ্চিত করে। সেই জন্য তরুণ সমাজকে শিক্ষা দীক্ষা কর্মে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। তরুণ সমাজ যেন সঠিকভাব শিক্ষিত হয়ে বা কর্মক্ষম হয়, দক্ষ মানবশক্তিতে পরিণত হয় তার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচীও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
তরুণ সমাজের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই তারুণ্য থেকেই যেন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হয়, তারুণ্য থেকেই যন তাদের জ্ঞান ও মেধা দিয়ে এদেশ গড়ে তুলতে পারে এবং এই দেশকে ভবিষ্যতে যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, সেইভাবেই আমরা কিন্তু বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তারুণ্যের এই শক্তি দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে শুধু বক্তৃতা বা স্লোগান দেয়া নয়, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হবে। আর আমরা বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে চাই জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটি মানুষও ক্ষুধার জ্বালায় কাতর থাকবে না। প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। তারা শিক্ষা পাবে, চিকিৎসা পাবে, উন্নত জীবন পাবে। যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন- ‘মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’ আমরা সেভাবেই দেশকে গড়তে চাই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মুজিববর্ষের কর্মসূচী পালন করছি। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মানুষের ঘর করে দিচ্ছি। মুজিববর্ষে গৃহহীন থাকবে না। ২৬ মার্চ থেকে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রবেশ করব। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা নির্দিষ্ট করেছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে আমরা কর্মসূচী পরিবর্তন করেছি। সেখানে আমরা জনসমাগম বাদ দিয়ে মানুষের কল্যাণমুখী কাজ করব। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে আলো জ্বালব, বিদ্যুত পৌঁছে দেব। দেশের একটি মানুষ গৃহহীন কিংবা না খেয়ে থাকবে না। তাদের জন্য একটি উন্নত জীবন দিতেই আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গত ১১ নবেম্বর। ১৯৭২ সালের ১১ নবেম্বর দেশের প্রথম ও সর্ববৃহৎ এ যুব সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।