নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২২ জুন ॥ লামা উপজেলায় গত ১২ মাসে পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে ১৩ লাখ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাচার এবং আরও ৫ লক্ষ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে পাচারের জন্য মজুদ করে পাচারকারীরা। আর এই পাচারকারীর তালিকায় আছেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অন্তত ২৫ জন।
পরিবেশ অধিদফতরের মামলা অনুসারে পাচারকারীরা হলো, মোঃ মহিউদ্দিন, জামাল উদ্দিন ফকির, হুমায়ন কবির, ওমর হামজা, মনু মেম্বার, মোঃ এনাম, মোঃ ফরহাদ, মুছলে উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন ও অজ্ঞাতনামা ৬ জন। কাঁঠালছড়া এলাকার আসামিরা হলেন, ইউনুস সর্দার, মনসুর ড্রাইভার, হোসেন ড্রাইভার, মোঃ হামিদ, ইলিয়াছ, অহিদ, মোঃ মোস্তফা কামাল ছোট্টু, মোঃ মিজান, লামার ইয়াংছামুখ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজেম উদ্দিন ও একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুজিবুর রহমান, মোঃ মুমিন, লোকমান, মোঃ ওসমান, আনছার উদ্দিন, রোমেশ ও মোঃ ইউসুফ ও অজ্ঞাতনামা ৬ জন।
আরও জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতরের পরিদর্শক নাজনীন সুলতানা নিপা বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার পরিবেশ আইনে ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ৩৭ জনের নামে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। এতে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারী শিক্ষকও আসামি রয়েছেন। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর বান্দরবানের পরিদর্শক নাজনীন সুলতানা নীপা জানায়, আসামিরা লামা উপজেলার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করেছে, তদন্ত করে অন্যান্য অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বহিরাগত ও স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট লামার ফাঁসিয়াখালী, গজালিয়া ও ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানের পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পাচার করে আসছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর অভিযান পরিচালনা করে ৫ লাখ ঘনফুট পাথর জব্দ করে এবং এ কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবেশ অধিদফতর বান্দরবানের সহকারী পরিচালক একেএম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, মামলার কার্যক্রম চলমান থাকবে। আগামীতে আরও কেউ যদি অবৈধ পাথর উত্তোলন ও পাচারের সঙ্গে জড়িত হয় জানা গেলে পরিবেশ আইনে মামলা করা হবে।
বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদী এবং নদীর পার্শ্ববর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ঝরনা, ঝিরি ও ছড়া থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপরও বান্দরবানে ৭টি উপজেলায় পাথর উত্তোলন করে অবৈধ ভাবে পাথর পাচার বন্ধ নেই এই বিষয়ে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, পরিবেশ অধিদফতরের প্রাথমিক তদন্তে ফাঁসিয়াখালীর বিভিন্ন জলাধার, ঝিরি, ঝরনা ও খাল থেকে গত ১২ মাসে ১৮ লাখ ঘনফুট পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে পরিবেশের ক্ষতিকারকদের কোনভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সকল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে।