ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তাল শৈলকুপা, শাস্তি দাবি

এমপির সশস্ত্র ক্যাডারের হামলায় মুক্তিযোদ্ধা মৃধা পুত্রসহ হাসপাতালে

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ২৮ অক্টোবর ২০১৬

এমপির সশস্ত্র ক্যাডারের হামলায় মুক্তিযোদ্ধা মৃধা পুত্রসহ হাসপাতালে

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘আমি এই বৃদ্ধ বয়সে (৬৫ বছর) একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মার খেতে পারি না। আমাকে দুটো কথা বললে, অপমান করলেই থেমে যেতে পারি। আমিতো ১৬ বছরের যুবক না। কেউ আমার ওপর হাত উঁচু করলে আমি তাকে হাত উঁচু করব। আমাকে একটা ধমক দিলেই তো আমি চমকে যাই। তবু তারা আমাকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করল’- অভিমান আর চাপা ক্ষোভে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদ মৃধা। অনলাইনে সর্বনিম্ন দরপত্র দিয়ে এলজিইডির একটি কাজ পাওয়াই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ই-টেন্ডারে অংশ নেয়ায় নিজ দলের এমপি আবদুল হাইয়ের ক্যাডাররা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর পথে। শুধু তিনি নন, তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ব্যাংকার পুত্রের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ তিনটি হাসপাতালের বেড ঘুরে তারা বর্তমানে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে শৈলকুপা উপজেলা। প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠেছে স্থানীয় জনতা। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। কর্মসূচীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। ওই সব কর্মসূচী থেকে তারা উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন দোষীদের। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও ধিক্কার জানানো হচ্ছে ঘটনায় জড়িতদের। ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে- অস্ত্রধারী কয়েক যুবক রড দিয়ে পেটাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা মুক্তারকে। ছেলে গোলাম মুর্শিদ এগিয়ে এসে বাবাকে বাঁচাতে গেলে তার ওপরও হামলা চালানো হয়। শেখ সাদি খান নামের এক যুবক ওই ভিডিও শেয়ার দিয়ে লিখেছেন- ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার মৃধার ওপর হামলার ভিডিও।’ সুমন মৃধা নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ওই ঘটনার ভিডিও আপলোড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচীর ছবি আপলোড করে দাবি জানানো হয়েছে শাস্তির। বৃহস্পতিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের বিডিএম হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি দুই বেডে শুয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও ব্যাংকার ছেলে। উভয়ের শরীরে ব্যান্ডেজ। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদের সারাশরীরে আঘাতের চিহ্ন! স্পষ্ট হয়ে ওঠছে রড দিয়ে আঘাতের ফলে তৈরি হওয়া ক্ষত! রয়েছে কোপের চিহ্নও! পায়ে পিঠে সারাশরীরে কালচে দাগ! তুলনামূলক কম কষ্টে ভুগছেন ছেলে গোলাম মুর্শিদ মৃধা। মুক্তারের বেডে বসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার স্ত্রী হোসনে আরা জনকণ্ঠকে বলেন, ‘তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমার স্বামী ও সন্তানকে মারা হয়েছে। আমি বাসায় ছিলাম। এসে দেখি এ অবস্থা। তিনি সারারাত বিছানায় কাতরান। শোয়া-বসা ও খাওয়া-দাওয়ায় সমস্যা। বাথরুমে যেতে পারছেন না। রয়েছে ডায়াবেটিস। এ বয়সে তার ওপর এই নির্মম আচরণ মেনে নেয়ার নয়। আমরা এর উপযুক্ত শাস্তি চাই।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, যারা আমার ছেলে ও স্বামীকে মেরেছে তাদের শাস্তি চাই। ন্যায্য বিচার চাই’- বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। জানা গেছে, সম্প্রতি শৈলকুপা উপজেলার রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজে ছয় কোটি টাকার চারটি দরপত্র আহ্বান করে এলজিইডি। মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহমেদ ১৭ অক্টোবর অনলাইনে দরপত্র জমা দেন। যাচাইবাছাই শেষে ১৮ অক্টোবর বিভিন্ন শর্ত পূরণ করায় ও সর্বনিম্ন দরপত্র হওয়ায় তিনি ছয় কোটি টাকার কাজ পেয়ে যান। কাজটি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এমপি আবদুল হাইয়ের ক্যাডাররা। মারধর ছাড়াও মুঠোফোনে দেয়া হয় হত্যার হুমকি। কাজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে তার ওপর হামলা করে এমপির আশীর্বাদপুষ্ট সশস্ত্র ক্যাডাররা। বাবাকে বাঁচাতে গেলে তার ছেলে গোলাম মুর্শিদকেও পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। মুক্তার আহম্মেদ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও শৈলকুপা উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক। কেবল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই যুক্ত নন তিনি, এলাকায় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হিসেবেও বেশ পরিচিত। তার হাত ধরে গড়ে ওঠেছে যমুনা শিকাদার কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি পদ ছাড়াও তিনি রয়েছেন আরও তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একই পদে। ছিলেন আবাইপুর ইউনিয়নের দুই দুইবারের চেয়ারম্যান। এলাকায় অন্য দলের নেতারাও তাকে দেখেন শ্রদ্ধার চোখে। বিডিএম হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার আহম্মেদ মৃধা জনকণ্ঠকে বলেন, সেদিন সন্ধ্যায় ওষুধের দোকানে বসে ছিলাম। ওই এলাকাটি পুরো সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণাধীন। হঠাৎ ওরা আমার ওপর হামলা চালায়। বলতে শুরু করে- ‘ওই শালা তুই টেন্ডার জমা দিছস ক্যান?’ আমাকে যখন মারতে শুরু করে তখন কেউ ফিরাতে আসেনি। ছেলে ঠেকাতে এলে তাকেও মেরে রক্তাক্ত করা হয়। তিনি বলেন, আমার অপরাধ টেন্ডারে অংশ নিয়ে কাজটি পেয়ে যাওয়া। কয়েকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি বলেছি, আমি কাজ পেয়েছি, আমি করবই। কিন্তু আজ আমাকে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালের বিছানায় ঘুরতে হচ্ছে। মুক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ই-টেন্ডার চালু করেছেন। টেন্ডারে কে অংশ নিল, সর্বনিম্ন দরদাতা কে হবেন, তা কারও জানা থাকে না। তবে মুক্তিযোদ্ধা মুক্তার ও তার পরিবারের আনা অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুল হাই জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এক অর্থে শৈলকুপার সব লোকই আমার।
×