
ছবি: প্রতীকী
আমরা সবাই জানি, প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করা জরুরি। কিন্তু অনেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসকে অবহেলা করি, তা হলো জিভ পরিষ্কার করা। অনেকেই হয়তো ভাবেন, জিভ পরিষ্কার না করলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু বাস্তবে এটি স্বাস্থ্যজনিত অনেক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। প্রতিদিন সকালে উঠে জিভ পরিষ্কার না করলে শরীরে ধীরে ধীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
রাতের বেলা আমরা যখন ঘুমাই, তখন মুখে লালা উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। এই সময় মুখের ভেতরে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জিভের উপর এক ধরনের আবরণ তৈরি করে, যাকে টক্সিন বা আবর্জনা বলা যায়। এই আবর্জনাগুলো যদি সকালে উঠে পরিষ্কার না করা হয়, তাহলে তা আবার শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে, যা হজমে সমস্যা, মুখের দুর্গন্ধ, মুখের ভেতরে ঘা, দাঁতের ক্ষয়সহ আরও অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
সবচেয়ে আগে যে সমস্যাটি চোখে পড়ে, তা হলো মুখে দুর্গন্ধ বা খারাপ গন্ধ হওয়া। অনেকেই দিনে কয়েকবার ব্রাশ করেন, মুখে মাউথওয়াশ ব্যবহার করেন, তবুও মুখের দুর্গন্ধ কিছুতেই দূর হয় না। এর প্রধান কারণ হতে পারে জিভে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া। জিভ পরিষ্কার না করলে সেই ব্যাকটেরিয়া থেকেই দুর্গন্ধ তৈরি হয়।
এরপর যেটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, তা হলো হজমের সমস্যা। আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই, তার শুরু হয় মুখ থেকে। যদি মুখের ভেতরে, বিশেষ করে জিভে ব্যাকটেরিয়া জমে থাকে, তাহলে তা হজম প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। খাবার ঠিকভাবে চিবিয়ে গিলে ফেললেও হজমে সমস্যা হয়, গ্যাস-অম্বল, পেট ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিভে জমে থাকা টক্সিন বা আবর্জনা হজমে রসের ক্ষরণে বাধা দেয়।
জিভ পরিষ্কার না করলে মুখের স্বাদগ্রহণ শক্তিতেও প্রভাব পড়ে। জিভের উপর অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র 'টেস্ট বাড' থাকে যেগুলোর মাধ্যমেই আমরা খাবারের স্বাদ বুঝি। কিন্তু জিভে যদি আবর্জনা জমে থাকে, তাহলে সেই টেস্ট বাডগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে মুখে খাওয়া-দাওয়ার স্বাদ কমে যায়।
আরেকটি বড় সমস্যা হলো দাঁতের সমস্যা। জিভে জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া মুখে ছড়িয়ে পড়ে এবং দাঁতের ফাঁকে, মাড়িতে বাসা বাঁধে। এতে দাঁতে প্লাক জমে, দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায়, দাঁত হলুদ হয়ে পড়ে এবং ধীরে ধীরে ক্যাভিটি বা পচন তৈরি হয়। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, দাঁতে ব্যথা এসব সমস্যাও দেখা দেয়।
জিভ পরিষ্কার না করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। কারণ জিভে জমে থাকা টক্সিন ধীরে ধীরে শরীরে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব ফেলে। এতে করে আমরা সহজেই নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হই। অনেক সময় জ্বর, ঠান্ডা, গলা ব্যথার মতো সমস্যা বাড়তে থাকে।
এছাড়া, দীর্ঘদিন জিভ পরিষ্কার না করলে জিভের রং পরিবর্তিত হয়ে কালচে বা হলদে হয়ে যেতে পারে, জিভে সাদা আবরণ পড়ে, যা দেখতে খুবই অস্বস্তিকর লাগে। কখনো কখনো এটি ফাঙ্গাল ইনফেকশন বা মুখে ছত্রাকেরও লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে জিভে ব্যথা বা ঘা হওয়ার প্রবণতাও বাড়ে।
জিভ পরিষ্কার না করা শুধু মুখগহ্বর নয়, বরং পুরো শরীরের জন্য একটি ক্ষতিকর অভ্যাস। এটি দৈনন্দিন পরিচ্ছন্নতার একটি অপরিহার্য অংশ। প্রতিদিন সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময় জিভ পরিষ্কার করাটাও অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। জিভ পরিষ্কারের জন্য বাজারে সহজলভ্য জিভ পরিষ্কার করার যন্ত্র (tongue cleaner) ব্যবহার করা যেতে পারে। কেউ চাইলে নরম ব্রাশ দিয়েও ধীরে ধীরে পরিষ্কার করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে জিভে কেটে না যায় বা রক্ত না পড়ে।
সুতরাং, প্রতিদিন সকালে উঠে জিভ পরিষ্কার করাটা কোনো বিলাসিতা নয়, বরং এটি সুস্থ থাকার একটি অপরিহার্য ধাপ। এই সামান্য অভ্যাস আমাদের শরীরকে অনেক বড় সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
এম.কে.