
ছবি: প্রতীকী
আমরা অনেকেই ভাবি, প্রতিদিন হাঁটলে ওজন কমবে। কিন্তু অনেক সময় নিয়মিত হাঁটলেও ওজন কমে না। তখন হতাশ হয়ে পড়ি। ভাবি, এত কষ্ট করে হাঁটছি, কোনো লাভ হচ্ছে না। আসলে ওজন না কমলেও প্রতিদিন হাঁটার অনেক উপকার আছে, যেগুলো আমাদের শরীর ও মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিচে এমনই পাঁচটি উপকারের কথা বলা হলো, যা নিয়মিত হাঁটার ফলে আমরা পেয়ে থাকি।
প্রথমত, হাঁটা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়। হাঁটার সময় শরীরের রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, ফলে হৃদযন্ত্র কম পরিশ্রমে কাজ করতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। এমনকি যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি আগে থেকেই রয়েছে, তাদের জন্যও হাঁটা খুব উপকারী। তাই ওজন না কমলেও প্রতিদিনের হাঁটা হৃদযন্ত্রের জন্য এক ধরনের ব্যায়াম।
দ্বিতীয়ত, হাঁটা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক মানসিক চাপে থাকি। কাজের চাপ, পারিবারিক দুশ্চিন্তা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন—এসব আমাদের মনের ওপর প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে খোলা হাওয়ায় কিছুক্ষণ হাঁটলে মনের ওপর চাপ অনেকটা কমে যায়। মন ভালো থাকে, চিন্তা পরিষ্কার হয়, এবং হতাশা দূর হয়। হাঁটার সময় মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়, যাকে বলা হয় ‘হ্যাপি হরমোন’। এটি আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।
তৃতীয়ত, হাঁটা শরীরের জয়েন্ট ও পেশি মজবুত করে। অনেকে মনে করেন শুধু ভারী ব্যায়াম করলেই পেশি শক্তিশালী হয়। কিন্তু বাস্তবে নিয়মিত হাঁটাও শরীরের পেশি ও হাড়কে সুস্থ রাখে। হাঁটার ফলে হাঁটু, কোমর ও পায়ের জয়েন্ট সচল থাকে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে। এতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড় ক্ষয় বা বাতের সমস্যা কম হয়। হাঁটলে শরীরের ব্যালান্স ও নমনীয়তাও বাড়ে, ফলে পড়ে গিয়ে চোট পাওয়ার আশঙ্কা কমে।
চতুর্থত, হাঁটা হজম শক্তি বাড়ায়। আমরা যেভাবে খাই, অনেক সময় তার সঠিক হজম হয় না। এতে গ্যাস, বুক জ্বালা বা বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হেঁটে নিলে হজমের গতি বাড়ে। এমনকি সকালের হাঁটা সারাদিনের হজমপ্রক্রিয়াকে সচল রাখে। অনেক সময় যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তারা নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে উপকার পেতে পারেন। হজম ঠিক থাকলে শরীরও সতেজ থাকে এবং ঘুমও ভালো হয়।
পঞ্চমত, হাঁটা ডায়াবেটিস ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায়। যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি, তাদের জন্য হাঁটা খুব উপকারী। হাঁটার ফলে ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যারা প্রি-ডায়াবেটিস অবস্থায় আছেন, তাদের জন্য নিয়মিত হাঁটা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক। এছাড়া হাঁটা উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রতিদিন হাঁটা শুধুমাত্র ওজন কমানোর জন্য নয়। এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনশৈলী। যারা প্রতিদিন হাঁটেন, তারা নিজের অজান্তেই শরীর ও মনকে সুস্থ রাখছেন। ওজন না কমলেও তারা অনেক বড় বড় রোগকে দূরে রাখতে পারছেন। তাই শুধু ওজন কমানো নয়, সুস্থ থাকার জন্যই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা অভ্যাস করা উচিত। বিশেষ করে খালি পেটে সকালের নির্মল বাতাসে হাঁটার মতো ভালো কিছু আর হতে পারে না। এটি আমাদের শরীর ও মন দুইকেই সতেজ করে তোলে। তাই আজ থেকেই নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন, কারণ সুস্থতাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় অর্জন।
এম.কে.