
ছবি : সংগৃহীত
আপনি কি মাঝরাতে বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠছেন? এমনটা হলে বিষয়টি একবার গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিতভাবে রাতের ঘুম ভেঙে যাওয়া হতে পারে একাধিক শারীরিক ও মানসিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র মানসিক চাপ নয়—ঘুম ভেঙে যাওয়া হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়া, হতাশা, থাইরয়েড সমস্যা, এমনকি ডায়াবেটিসের মতো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত।
ঘন ঘন ঘুম ভাঙার পিছনে যেসব রোগ লুকিয়ে থাকতে পারে:
১. স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea):
রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসা বা দম বন্ধ লাগা স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম লক্ষণ। এতে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে মস্তিষ্ক সংকেত দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। এই রোগ অবহেলা করলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে।
২. ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ (Depression & Anxiety):
ঘুম ভেঙে গিয়ে আর ঘুমাতে না পারা মানসিক রোগের ক্লাসিক উপসর্গ। হতাশা বা উদ্বেগজনিত সমস্যা থাকলে গভীর ঘুম হয় না, ফলে ঘন ঘন ঘুম ভাঙে।
৩. অ্যাসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux):
রাতের খাবার ঠিকমতো হজম না হলে অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসে। এতে বুক জ্বালা করে ও ঘুম ভেঙে যায়। নিয়মিত হলে এটি গ্যাস্ট্রিক আলসার বা বার্নিং সিনড্রোমের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
৪. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
বিশেষ করে নারীদের মধ্যে থাইরয়েড সমস্যা বা মেনোপজের সময় হরমোন ওঠানামা করে। এর প্রভাবে রাতে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে।
৫. রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম:
ঘুমানোর সময় পায়ে কেমন যেন অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়? এটি হতে পারে রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম। এতে ঘন ঘন পা নাড়াতে হয়, ফলে ঘুম ভেঙে যায়।
৬. রক্তে চিনির তারতম্য (Blood Sugar Fluctuation):
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে বা কমে গেলে শরীর সাড়া দেয় ঘুম ভেঙে। বিশেষ করে ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি ঘটে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ:
নিয়মিত যদি এমন সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে একে অবহেলা করা উচিত নয়। একজন নিউরোলজিস্ট বা স্লিপ ডিসঅর্ডার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এছাড়াও, জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন—যেমন ঘুমের সময় নির্ধারিত রাখা, রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলা, এবং স্ক্রিন টাইম কমানো—সহায়ক হতে পারে।
ঘুম শুধু বিশ্রামের জন্য নয়, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিক স্থিতি ও হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঘুমের ব্যাঘাত মানেই শুধু ক্লান্তি নয়, হতে পারে বিপদের অশনি সংকেত।
আপনার ঘুমই আপনার স্বাস্থ্য। নিয়মিত ঘুম ভাঙলে বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে যথাযথ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
Mily