ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

পানি খাওয়ার টাইমিংই নির্ধারণ করে হজম কতটা ভালো হবে

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৮ আগস্ট ২০২৫

পানি খাওয়ার টাইমিংই নির্ধারণ করে হজম কতটা ভালো হবে

ছ‌বি: প্রতীকী

আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি। প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ পানি খাওয়া যেমন দরকার, তেমনি কোন সময় পানি খাওয়া হচ্ছে সেটাও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে মনে করেন শুধু পানি খেলেই হবে, কিন্তু এটা অর্ধেক সত্য। পানি খাওয়ার টাইমিং ঠিক না হলে তা হজমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে। আবার সঠিক সময়ে পানি খেলে তা হজমের জন্য খুবই উপকারী হতে পারে।

অনেকেই খাবারের সময় বা খাবার খাওয়ার ঠিক আগে-পরে পানি পান করেন। কিন্তু এই অভ্যাসটা হজমের জন্য একদমই ভালো নয়। কারণ, খাবার খাওয়ার সময় বেশি পরিমাণে পানি খেলে পাকস্থলির পাচক রস পাতলা হয়ে যায়। ফলে খাবার ঠিকমতো হজম হতে সমস্যা হয়। এই কারণে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বদহজম বা ঢেকুর ওঠার সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এবং ৩০-৪৫ মিনিট পরে পানি খাওয়া সবচেয়ে উপযুক্ত। এতে পাচনতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করে এবং হজম শক্তি বাড়ে।

অনেকে মনে করেন খাওয়ার সময় পানি খেলে খাবার গলার মধ্যে সহজে নামে। এটা আংশিক সত্য হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। খাবারের সঙ্গে পানি না খেয়ে ধীরে ধীরে ভালোভাবে চিবিয়ে খেলে একদিকে যেমন লালা গ্রন্থি থেকে এনজাইম নিঃসরণ হয়, তেমনি খাবার নিজেই নরম হয়ে গলা দিয়ে সহজে নামতে পারে। আবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি খাওয়া আরও ক্ষতিকর। এটা পাকস্থলির তাপমাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দেয়, ফলে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় রস নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে।

খালি পেটে সকালবেলা হালকা গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস খুবই উপকারী। এটি একদিকে যেমন শরীরের জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়, তেমনি হজম প্রক্রিয়াও সক্রিয় করে। বিশেষ করে লেবু বা এক চিমটি মধু মিশিয়ে খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে চা পান করেন, যা পাকস্থলির উপর চাপ সৃষ্টি করে। এর চেয়ে ভালো যদি এক-দুই গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করা যায়। এতে হজম ও মেটাবলিজম দুটোই উন্নত হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, আমরা তেষ্টা না পেলেও বারবার পানি খেতে থাকি। শরীরে প্রয়োজন না থাকলে অপ্রয়োজনীয় পানি খাওয়াও হজমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ-পানি বেরিয়ে গিয়ে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই পানি খাওয়ার ক্ষেত্রে শরীরের সংকেত বুঝে চলা দরকার। তবে যেসব খাবারে প্রোটিন বা ফ্যাট বেশি থাকে, সেগুলোর পরে সামান্য পানি খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বেশি পরিমাণে পানি একেবারেই নয়।

রাতের খাবারের পরে অনেকে প্রচুর পানি খেয়ে ফেলেন, যাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়ার ঝামেলা না থাকে। কিন্তু এভাবে বেশি পানি খেলে তা হজম প্রক্রিয়ায় বাঁধা দেয়। রাতের দিকে শরীরের বিপাক হার কিছুটা কম থাকে। ফলে অতিরিক্ত পানি কিডনির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ঘনঘন প্রস্রাবের কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। তাই রাতে হালকা খাবার খাওয়ার পর অল্প পানি খাওয়া ভালো এবং ঘুমাতে যাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট আগে পানি পান করা উচিত।

শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের সময় পানি খাওয়ার নিয়মও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের আগে এক গ্লাস পানি খাওয়া ভালো, যাতে শরীরের হাইড্রেশন বজায় থাকে। তবে ব্যায়ামের ঠিক পরেই ঠান্ডা পানি খাওয়া ঠিক নয়। এতে হজমের সমস্যা ছাড়াও পেশিতে টান পড়তে পারে। ব্যায়ামের অন্তত ১৫-২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি খাওয়া নিরাপদ।

সব মিলিয়ে বলা যায়, শুধু পানি খাওয়া নয়, কখন পানি খাচ্ছেন সেটা জানাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। ঠিক সময়ে ঠিক পরিমাণে পানি খেলে শুধু হজমই নয়, শরীরের অন্যান্য প্রক্রিয়াও ভালোভাবে চলতে পারে। তাই সঠিক সময় অনুসরণ করে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে সুস্থ ও শক্তিশালী হজমশক্তি বজায় রাখা সম্ভব।

এম.কে.

×