ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ছেলেদের টেস্টোস্টেরন কম হলে যেসব সমস্যা হতে পারে

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ৮ আগস্ট ২০২৫

ছেলেদের টেস্টোস্টেরন কম হলে যেসব সমস্যা হতে পারে

ছ‌বি: প্রতীকী

টেস্টোস্টেরন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা মূলত পুরুষদের দেহে বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। এটি ছেলেদের শারীরিক বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা, পেশির গঠন, হাড়ের দৃঢ়তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বা নানা শারীরিক ও মানসিক কারণে অনেক সময় এই হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি হলে শরীরে ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়, যা একজন পুরুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে ছেলেরা সবচেয়ে আগে যেটি টের পায়, তা হলো যৌন আগ্রহ বা লিবিডো কমে যাওয়া। আগে যে বিষয়গুলোতে আগ্রহ থাকত, সেগুলোর প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। শারীরিক সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হঠাৎ কমে যাওয়া অনেক সময় এই হরমোন কমে যাওয়ার একটি প্রধান লক্ষণ। একই সঙ্গে শারীরিক উদ্দীপনা বা উত্তেজনা সাড়া দিতেও সমস্যা হতে পারে।

এছাড়াও টেস্টোস্টেরনের অভাবে যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ইরেকশন ধরে রাখতে না পারা বা সম্পূর্ণ ইরেকশন না হওয়া এই হরমোনের ঘাটতির কারণে হতে পারে। অনেক সময় সকালে স্বাভাবিকভাবে যে ইরেকশন হয়, তাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এটি একজন পুরুষের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলে।

টেস্টোস্টেরন কমে গেলে পেশি শক্তি কমে যেতে পারে। আগে যেভাবে ভারী কাজ বা ব্যায়াম সহজে করা যেত, এখন তা ক্লান্তিকর মনে হয়। শরীরের গঠন বদলে যেতে থাকে। পেশি ক্ষয় হয়ে চর্বি জমতে শুরু করে। পেট ও বুকের আশেপাশে মেদ জমে গিয়ে দেহের আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর ফলে অনেকে হীনমন্যতায় ভোগেন।

শুধু বাহ্যিক দিক থেকেই নয়, টেস্টোস্টেরনের ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেকেই হতাশা, উদ্বেগ, মনমরা ভাব, রাগ এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভোগেন। আগে যে কাজগুলো করতে উৎসাহ থাকত, এখন তাতে আগ্রহ থাকে না। মনের মধ্যে একটা নেতিবাচক ভাব চলে আসে এবং জীবন নিয়ে হতাশা তৈরি হতে পারে।

টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। সারাদিন ক্লান্তিভাব অনুভব করা, ঘুমিয়ে উঠেও ফ্রেশ না লাগা এবং কাজে মন না বসা এই হরমোনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় এমন হয় যে, খুব সাধারণ কাজ করেও মনে হয় অনেক কষ্ট হচ্ছে।

হাড়ের স্বাস্থ্যেও প্রভাব পড়ে। টেস্টোস্টেরন হাড়কে শক্ত রাখে। এর অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ে। অনেকেই বয়সের আগেই হাড়ে ব্যথা বা ভাঙার প্রবণতায় ভোগেন।

স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা-শক্তিতেও এর প্রভাব পড়ে। অনেকে মনে করেন, হঠাৎ করেই ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে বা চিন্তা করতে সমস্যা হচ্ছে। এসব সমস্যার পেছনে হরমোনের ঘাটতি থাকতে পারে।

শরীরের লোমও কমে যেতে পারে। বিশেষ করে মুখে দাড়ি-গোঁফ পাতলা হয়ে যাওয়া বা শরীরের অন্যান্য স্থানে লোম পাতলা হওয়া টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। একই সঙ্গে চামড়ার উজ্জ্বলতা ও সতেজতাও কমে যেতে পারে।

মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া বা খুব দ্রুত রেগে যাওয়া টেস্টোস্টেরন কমার আরেকটি লক্ষণ। একজন পুরুষ আগে যে পরিস্থিতিতে সহজে সামলে নিতেন, এখন সেখানে উত্তেজিত হয়ে পড়েন বা বিষণ্নতায় ভোগেন। পারিবারিক বা কর্মজীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনেক সময় সন্তান ধারণে সমস্যাও তৈরি হতে পারে। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কম হলে শুক্রাণুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমে যায়। ফলে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়ে, বিশেষ করে যারা বাবা হতে চাইছেন তাদের জন্য এটি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

এই হরমোনের ঘাটতির কারণ হতে পারে বয়স বৃদ্ধি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন, ঘুমের অভাব, ধূমপান বা মদ্যপান, স্থূলতা, ডায়াবেটিস বা থাইরয়েডের সমস্যা। তাই যারা এসব সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া খুব জরুরি।

টেস্টোস্টেরন কমে যাওয়ার লক্ষণ অনেকটাই অন্য সমস্যার মতো মনে হতে পারে। তাই যদি উপরের লক্ষণগুলোর একাধিকটি দেখা দেয়, তবে দেরি না করে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, মানসিক চাপ কমানো, পর্যাপ্ত ঘুম ও পরিমিত জীবনযাপন এই হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

সঠিকভাবে সচেতন হলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে টেস্টোস্টেরনের ঘাটতির প্রভাব অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। একজন পুরুষের স্বাভাবিক জীবন, কর্মক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এই হরমোনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এম.কে.

×