ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

ডায়াবেটিস থাকলে কীভাবে হার্টের যত্ন নেবেন?

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৮ আগস্ট ২০২৫

ডায়াবেটিস থাকলে কীভাবে হার্টের যত্ন নেবেন?

ছ‌বি: প্রতীকী

ডায়াবেটিস এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ যা শুধু রক্তে চিনি বাড়িয়ে দেয় না, বরং শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে হৃদযন্ত্র বা হার্ট। অনেকেই জানেন না, ডায়াবেটিস থাকলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি হার্টের সঠিক যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি।

প্রথমেই যেটা মাথায় রাখা দরকার, তা হলো রক্তে শর্করার পরিমাণ সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ অতিরিক্ত গ্লুকোজ রক্তনালিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে হার্টে রক্ত প্রবাহ ব্যাহত হয় এবং হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত রক্তে গ্লুকোজ পরীক্ষা করা উচিত এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করা জরুরি।

পরবর্তী ধাপে আসে খাদ্যাভ্যাস। ডায়াবেটিস এবং হার্ট দুটোই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খেতে হবে সুষম ও পরিমিত খাবার। সাদা ভাত, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চর্বিযুক্ত খাবার, লাল মাংস, বেশি লবণ, ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত। তার পরিবর্তে খাবার তালিকায় রাখতে হবে শাকসবজি, তাজা ফল (পরিমিত পরিমাণে), নরমাল চাল বা লো-জিআই খাবার, বাদাম, ওমেগা-থ্রি সমৃদ্ধ মাছ (যেমন রুই, তেলাপিয়া, টুনা, স্যামন ইত্যাদি)। ভাজা-পোড়া যতটা সম্ভব কম খাওয়া ভালো।

শরীরচর্চা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, হালকা ব্যায়াম কিংবা যোগাসন করলে রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও গ্লুকোজ লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে হার্ট সুস্থ থাকে এবং রক্তনালির স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে। অনেকেই ভাবেন ডায়াবেটিস থাকলে বেশি পরিশ্রম করা উচিত নয়, কিন্তু এটি ভুল ধারণা। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের ইনসুলিন রেসপন্স ভালো হয় এবং হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতাও বাড়ে।

ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়শই উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হার্টের উপর প্রভাব ফেলে এবং হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ায়। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করতে হবে এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ যতটা সম্ভব কম রাখতে হবে। মেডিটেশন, গান শোনা বা পছন্দের কিছু করলে মন ভালো থাকে এবং মানসিক চাপ কমে।

ধূমপান ও মদ্যপান হার্ট এবং ডায়াবেটিস দুইয়ের জন্যই মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপান করলে রক্তনালি সংকুচিত হয়, যার ফলে হার্টে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। মদ্যপান রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে এবং লিভার ও হার্টের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে। তাই এ দুটি অভ্যাস সম্পূর্ণভাবে বর্জন করাই ভালো।

পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রামও হার্টের যত্নের একটি অংশ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ঘুম ঠিকমতো না হলে শরীরের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা হার্টের ক্ষতি করে। তাই রাতে নিয়মিত ঘুমানো এবং একঘেয়ে জীবনে সামান্য আনন্দ বা রিল্যাক্সেশন সময় রাখা দরকার।

পানি পানের অভ্যাসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে রক্তে শর্করা ঘন হয়ে জমে না, শরীর পরিষ্কার থাকে এবং কিডনির পাশাপাশি হার্টও ভালো থাকে। তবে কিডনির কোনো সমস্যা থাকলে কতটা পানি পান করবেন তা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারণ করা উচিত।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা খুবই জরুরি। প্রতি ৩ থেকে ৬ মাস অন্তর রক্তে গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, ব্লাড প্রেসার এবং ইসিজি ইত্যাদি পরীক্ষা করালে আগেভাগেই কোনো সমস্যা ধরা পড়ে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।

ডায়াবেটিস থাকলে হার্টের যত্ন নিতে হলে চাই সচেতনতা, নিয়মিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, ও ধূমপান-মদ্যপান থেকে বিরত থাকা। হৃদযন্ত্র আমাদের শরীরের প্রাণকেন্দ্র, আর ডায়াবেটিস সেই প্রাণকেন্দ্রকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে দিতে পারে— যদি আমরা সতর্ক না হই। তাই সময় থাকতেই যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন।

এম.কে.

×