ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

মেয়েদের হরমোন ইমব্যালেন্সে যেসব লক্ষণ দেখা যায়

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৮ আগস্ট ২০২৫

মেয়েদের হরমোন ইমব্যালেন্সে যেসব লক্ষণ দেখা যায়

ছ‌বি: প্রতীকী

নারীদের শরীরে হরমোনের ভারসাম্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হরমোন হলো এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের মাত্রা কমে গেলে বা বেড়ে গেলে শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়, যাকে বলে হরমোন ইমব্যালেন্স। অনেক সময় মেয়েরা বুঝতেই পারেন না যে তাদের শরীরে এই ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো ভালোভাবে খেয়াল করলেই বোঝা যায় যে হরমোনে সমস্যা হচ্ছে।

হরমোন ইমব্যালেন্স হলে মেয়েদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। কখনো সময়ের আগে বা পরে পিরিয়ড হতে পারে, আবার কখনো মাসের পর মাস পিরিয়ড বন্ধ থাকতেও দেখা যায়। আবার কারও ক্ষেত্রে খুব অল্প রক্তপাত হয়, কারও আবার অতিরিক্ত রক্তপাত হয়। এটা একটি সাধারণ লক্ষণ হলেও অনেকেই গুরুত্ব দেন না।

ত্বকের অবস্থাও পরিবর্তিত হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য না থাকলে মুখে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস বা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া দেখা যায়। এমনকি ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে এবং চেহারায় ক্লান্তভাব চলে আসে। অনেক সময় হরমোনের কারণে ত্বকে চুলকানি, র‍্যাশ বা অস্বাভাবিক দাগও দেখা দিতে পারে।

ওজন বেড়ে যাওয়া বা হঠাৎ করে কমে যাওয়া আরেকটি লক্ষণ। হরমোন ইমব্যালেন্স হলে শরীর স্বাভাবিকভাবে ক্যালোরি বার্ন করতে পারে না। ফলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়, বিশেষ করে পেট ও কোমরের চারপাশে মেদ জমে। আবার কিছু ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়া স্বাভাবিক থাকলেও হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।

চুল পড়ে যাওয়া বা চুল পাতলা হয়ে যাওয়াও হরমোনের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় মেয়েরা খেয়াল করেন, হঠাৎ করেই অনেক চুল পড়ে যাচ্ছে বা মাথার চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে। আবার শরীরের কিছু অংশে যেমন থুতনি বা বুকে অপ্রত্যাশিতভাবে চুল গজাতে দেখা যায়। এসব কিছুই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত।

ঘুমের সমস্যা হতে পারে। হরমোন ইমব্যালেন্সে অনেক সময় ঘুম আসতে চায় না বা গভীর ঘুম হয় না। কেউ কেউ বারবার জেগে যান রাতে। আবার অনেকের দিনের বেলাও ঘুমঘুম ভাব থাকে বা শক্তি ও উদ্যমের ঘাটতি দেখা যায়।

মানসিক পরিবর্তনও লক্ষণ হতে পারে। হরমোনের সমস্যা থাকলে মন খারাপ, দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, বিরক্তি বা হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটে। অনেকে হতাশায় ভোগেন, ছোট ছোট কারণে কান্না পান বা হঠাৎ রেগে যান। এটি অনেক সময় পরিবার বা কর্মক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।

হরমোনজনিত সমস্যায় যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে। যারা বিবাহিত বা দাম্পত্য জীবনে আছেন, তারা অনুভব করতে পারেন যে আগের মতো আগ্রহ বা তৃপ্তি আর নেই। এটি শরীরের প্রাকৃতিক হরমোন ভারসাম্যের অভাবের কারণে ঘটে।

হজমের সমস্যাও হতে পারে। অনেক সময় হরমোনের ভারসাম্য না থাকলে খাবার হজমে সমস্যা হয়, পেট ফাঁপা, গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। এর সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভিতর শুকিয়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত তৃষ্ণাও অনুভূত হয়।

আরও একটি লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা গরম লাগা। বিশেষ করে রাতের বেলায় হঠাৎ ঘাম দিয়ে জেগে ওঠা বা সারা শরীরে অস্বস্তি অনুভব করা হরমোনজনিত সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করে।

বুক ধড়ফড় করাও হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা থাকলে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। অনেকেই মনে করেন এটি হৃদরোগের সমস্যা, কিন্তু কখনো কখনো হরমোনই এর কারণ হয়ে থাকে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অনেক সময় গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়। যেসব নারীরা দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও সন্তানধারণ করতে পারছেন না, তাদের হরমোন পরীক্ষা করানো জরুরি। কারণ, পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা থাইরয়েড সমস্যার মতো হরমোনজনিত অসুখের কারণে সন্তান ধারণে অসুবিধা হতে পারে।

সুতরাং, যেসব লক্ষণ বলা হলো, তার যেকোনো একটি বা একাধিক লক্ষণ যদি কারও মধ্যে নিয়মিতভাবে দেখা যায়, তাহলে হরমোন পরীক্ষা করানো উচিত। অনেক সময় হরমোনজনিত সমস্যা ওষুধ, ডায়েট ও জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তাই সময়মতো সচেতন হওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে জটিলতা না বাড়ে।

এম.কে.

×