
ছবি: প্রতীকী
সিগারেট একটি বিপজ্জনক অভ্যাস, যা ধীরে ধীরে শরীরের নানা অঙ্গের ক্ষতি করে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ফুসফুসে। ধূমপানের ফলে ফুসফুসের কোষ নষ্ট হয়, বায়ুনালির আস্তরণে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা কমে যায়। তবে সুখবর হলো, সিগারেট ছাড়ার পর ধীরে ধীরে ফুসফুস নিজে নিজেই ঠিক হতে শুরু করে। এটি একদিনে হয় না, তবে সময়ের সাথে শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে থাকে।
সিগারেট ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কিছু ভালো পরিবর্তন শুরু হয়। প্রথম ২০ মিনিটের মধ্যেই রক্তচাপ ও হার্টবিট স্বাভাবিক হতে থাকে। ৮ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে রক্তে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ কমে যায় এবং অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ে। কিন্তু ফুসফুসের উন্নতি ধীরে ধীরে হয় এবং তা নির্ভর করে ধূমপানের মেয়াদ, পরিমাণ এবং ব্যক্তির শরীরের উপর।
সিগারেট ছাড়ার দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে অনেকেই লক্ষ্য করেন যে হাঁটার সময় আর আগের মতো হাঁপাতে হয় না। এটা ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কিছুটা উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু ফুসফুস পুরোপুরি নিজেকে পুনরুদ্ধার করতে বেশ দীর্ঘ সময় নেয়।
সাধারণত, সিগারেট ছাড়ার তিন মাস থেকে এক বছরের মধ্যে ফুসফুসে জমে থাকা কফ বা মিউকাস পরিষ্কার হতে শুরু করে। এই সময়কালে কাশি কিছুটা বাড়তেও পারে, কারণ ফুসফুস চেষ্টা করে নিজেকে পরিষ্কার করতে। এটিকে ভালো লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ভেতরের যে ছোট ছোট চুলের মতো কোষ বা সিলিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তারা ধীরে ধীরে আবার গড়ে ওঠে। এই সিলিয়াগুলোই মিউকাস ও ধুলা পরিষ্কার করে ফুসফুসকে রক্ষা করে।
এক থেকে নয় মাসের মধ্যে এই সিলিয়ার কার্যক্ষমতা অনেকটাই আগের মতো হয়ে যায়। ফলে কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে আসে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি, যেমন ধোঁয়ার কারণে ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষয় বা এমফিসিমা হয়ে থাকলে তা পুরোপুরি ঠিক নাও হতে পারে।
এক বছর পর হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক কমে যায় এবং ফুসফুসও আগের চেয়ে অনেক ভালো কাজ করতে শুরু করে। যারা অনেক বছর ধরে সিগারেট খেয়েছেন, তাদের জন্য পুরোপুরি ফুসফুস পরিষ্কার হতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। গবেষণা বলছে, সিগারেট ছাড়ার পাঁচ থেকে দশ বছর পর ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসে। যদিও এটি কখনোই শতভাগ কমে না, তবুও তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো অবস্থানে আসে।
১৫ বছর পর, একজন সাবেক ধূমপায়ীর হৃদরোগ, স্ট্রোক, এবং ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি একজন সাধারণ অধূমপায়ীর কাছাকাছি চলে আসে। তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, ফুসফুসের পূর্ণ সুস্থতা নির্ভর করে ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ এবং শারীরিক পরিশ্রমের উপর।
ফুসফুস দ্রুত সুস্থ করতে হলে সিগারেট ছাড়ার পাশাপাশি কিছু নিয়ম মানা দরকার। যেমন, প্রচুর পানি পান করা, নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা, ধুলাবালি ও বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা। কিছু মানুষ হারবাল চা, আদা, মধু ইত্যাদি গ্রহণ করে শ্বাসতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করেন, যা অনেক সময় উপকার দিতে পারে।
সিগারেট ছাড়ার পর প্রথম কয়েকদিন ও সপ্তাহ কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধৈর্য ধরে এগিয়ে গেলে সুফল পাওয়া যায়। নিজের ও পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গড়ে তুলতে হলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আর এই একটি সিদ্ধান্ত ফুসফুসকে শুধু সুস্থই করে না, বরং জীবনও অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
সিগারেট ছাড়ার পর ফুসফুস সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হতে কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর সময় নিতে পারে। তবে পরিবর্তন শুরু হয় একদম প্রথম দিন থেকেই। ধূমপান না করাই ফুসফুস ভালো রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। যারা সিগারেট ছাড়তে চাচ্ছেন বা ইতিমধ্যে ছেড়েছেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় বিজয়। এই বিজয় শুধু শরীর নয়, মানসিক শক্তিরও প্রমাণ।
এম.কে.