
ছবি: প্রতীকী
ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ভালো ঘুম মানেই সুস্থ শরীর ও প্রশান্ত মন। ঘুম আমাদের দেহকে পুনরায় চাঙ্গা করে তোলে, মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং পরবর্তী দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু আপনি কি জানেন, অতিরিক্ত ঘুমও হতে পারে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ? বিশেষ করে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে অনিয়মিত ও অতিরিক্ত ঘুম।
অনেকেই মনে করেন, বেশি ঘুম মানেই বিশ্রাম বেশি, তাই শরীর আরও ভালো থাকবে। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত দিনে ৯ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ঘুমান, তাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। অতিরিক্ত ঘুমের সঙ্গে আমাদের শরীরের মেটাবলিজম কমে যেতে পারে, শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এসব পরিবর্তন একসঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
ঘুমের সময়ের পাশাপাশি ঘুমের গুণগত মানও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালেও তা গভীর ঘুম হয় না। ফলে শরীর ও মন পুরোপুরি বিশ্রাম পায় না। তখন শরীরে অবসাদ জমে, মানসিক চাপ বাড়ে, রক্তচাপ অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিগুলো দীর্ঘদিন চলতে থাকলে তা হৃদপিণ্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষের দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমই যথেষ্ট। এর বেশি হলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে।
অতিরিক্ত ঘুম অনেক সময় বিষণ্ণতা, অলসতা বা কোনো সুপ্ত শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে। যেমন, যারা মানসিক চাপে ভোগেন, তাদের মধ্যে অনেক সময় ঘুমের প্রতি এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। তারা বেশি সময় ঘুমিয়ে নিজেদের সমস্যাগুলো ভুলে থাকতে চান। কিন্তু এতে সমস্যার সমাধান তো হয়ই না, বরং শরীর আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। এছাড়া থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, স্থূলতা ইত্যাদির কারণেও ঘুম বাড়তে পারে এবং এসব রোগ আবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষভাবে বলা যায়, দীর্ঘ ঘুমের সঙ্গে স্থূলতার সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। যারা কম শারীরিক পরিশ্রম করেন এবং অতিরিক্ত ঘুমান, তাদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে। অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত ঘুমে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ধমনির মধ্যে জমে গিয়ে রক্ত চলাচল ব্যাহত করে এবং হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি তৈরি করে।
তবে শুধু বেশি ঘুমালেই যে সবসময় হৃদরোগ হবে, তা নয়। ঘুমের পেছনের কারণগুলো বোঝাও জরুরি। যদি কেউ নিয়মিত ক্লান্ত বোধ করেন এবং ৯-১০ ঘণ্টা ঘুমিয়েও সতেজ অনুভব না করেন, তাহলে তা কোনো লুকিয়ে থাকা রোগের লক্ষণ হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আবার অনেক সময় দেখা যায়, ছুটির দিনে বা সাপ্তাহিক ছুটির সময় মানুষ অনেক বেশি ঘুমিয়ে ফেলেন। এটি যদি মাঝে মাঝে হয়, তাহলে তেমন ক্ষতি নেই। কিন্তু প্রতিদিনই যদি অতিরিক্ত ঘুম করার অভ্যাস গড়ে ওঠে, তাহলে তা দীর্ঘমেয়াদে বিপদের কারণ হতে পারে।
সুতরাং, সুস্থ হৃদয় এবং দীর্ঘ জীবন পেতে চাইলে ঘুমকে গুরুত্ব দিন ঠিকই, তবে অতিরিক্ত নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে জেগে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল, টিভি বা ল্যাপটপ ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। হালকা খাবার খান এবং রাতে দেরি করে খাওয়া এড়িয়ে চলুন। শরীরচর্চা করুন, মানসিক চাপ কমান এবং ঘুমের মান উন্নত করুন। তবেই আপনি সুস্থ হৃদয় ও জীবনের নিশ্চয়তা পাবেন।
ঘুম যেমন কম হলে সমস্যা, তেমনি বেশি হলেও বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই মধ্যপন্থা অবলম্বনই হতে পারে সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
এম.কে.