ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

শরীরের এই ১টি সংকেত মানে আপনি গভীর স্ট্রেসে আছেন!

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ৮ আগস্ট ২০২৫

শরীরের এই ১টি সংকেত মানে আপনি গভীর স্ট্রেসে আছেন!

ছবি: সংগৃহীত

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের জীবনের একটি অনিবার্য অংশ। কিন্তু যখন এই চাপ অতিরিক্ত হয়ে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন তা শরীরের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। অনেক সময় আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি না যে আমরা গভীর স্ট্রেসে ভুগছি। তবে শরীর কিছু নির্দিষ্ট সংকেতের মাধ্যমে আমাদের এই বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে। এমন একটি প্রধান সংকেত হলো: নিয়মিত হজমের সমস্যা।

আপনি হয়তো ভাবছেন, হজমের সমস্যার সঙ্গে মানসিক চাপের কী সম্পর্ক? মনোবিজ্ঞানীরা এবং চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের মন ও পেট একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। এই সংযোগকে বলা হয় ‘গাট-ব্রেইন অ্যাক্সিস’ (Gut-Brain Axis)। এই অন্ত্র-মস্তিষ্ক অক্ষের মাধ্যমে মন এবং পেট প্রতিনিয়ত একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

স্ট্রেস কীভাবে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে?
১. হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: যখন আপনি স্ট্রেসে থাকেন, তখন আপনার শরীর থেকে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) এবং অ্যাড্রেনালিন এর মতো হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনগুলো আপনার হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। স্ট্রেস বাড়লে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, যার ফলে খাবার সঠিকভাবে হজম হতে পারে না।

২. পেটের মাইক্রোবায়োম পরিবর্তন: স্ট্রেস আপনার পেটের মাইক্রোবায়োম (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) এর ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। সুস্থ হজমের জন্য এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর ভারসাম্য থাকা জরুরি। যখন উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ কমে যায়, তখন হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

৩. পেশী সংকোচন: স্ট্রেসের কারণে আপনার অন্ত্রের পেশীগুলো অতিরিক্ত সংকুচিত হতে পারে। এর ফলে পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং অস্বস্তি হয়।

স্ট্রেস-সম্পর্কিত হজমের সমস্যার লক্ষণগুলো:
যদি আপনি নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো নিয়মিত অনুভব করেন, তাহলে এটি হতে পারে গভীর স্ট্রেসের একটি বড় সংকেত:

বদহজম এবং বুক জ্বালাপোড়া: স্ট্রেসের কারণে পেট থেকে বেশি অ্যাসিড নিঃসৃত হতে পারে, যা বদহজম এবং বুক জ্বালাপোড়ার কারণ।

ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য: স্ট্রেসের কারণে অন্ত্রের নড়াচড়ায় অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়, যার ফলে পর্যায়ক্রমে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি: ঘন ঘন পেট ব্যথা, পেট মোচড়ানো বা অস্বস্তির অনুভূতিও স্ট্রেসের একটি লক্ষণ।

ক্ষুধামন্দা বা অতিরিক্ত ক্ষুধা: স্ট্রেস কারও কারও ক্ষুধা কমিয়ে দেয়, আবার কারও কারও মধ্যে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

আপনার কী করা উচিত?
যদি আপনি নিয়মিত হজমের সমস্যায় ভোগেন এবং এর কোনো সুস্পষ্ট শারীরিক কারণ খুঁজে না পান, তাহলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

স্ট্রেস কমানোর কৌশল: ধ্যান (meditation), যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম মানসিক চাপ কমাতে খুব সহায়ক।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন। আঁশযুক্ত খাবার এবং প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার (যেমন দই) খান।

পেশাদার সাহায্য: যদি আপনি নিজে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

মনে রাখবেন, শরীর এবং মন একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনার পেটের সমস্যাকে শুধু একটি শারীরিক সমস্যা হিসেবে না দেখে, এটি আপনার মানসিক অবস্থার একটি সংকেত হিসেবে বিবেচনা করুন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে আপনার হজম প্রক্রিয়াও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

ফারুক

×