
ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ
পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দরবন-১২ লঞ্চের কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী কলেজের অন্তত নয়জন শিক্ষার্থী আহত হন। ঘটনার প্রতিবাদে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা লঞ্চটি ঘেরাও করে ভাঙচুর করেন। এতে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং যাত্রীরা পড়ে যান চরম ভোগান্তিতে।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত আনুমানিক আটটার দিকে সদরঘাট টার্মিনালের ১ নম্বর ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাবিল বরিশালগামী সুন্দরবন-১২ লঞ্চে উঠলে লঞ্চকর্মীরা তাকে জোর করে কেবিন ভাড়া নিতে বাধ্য করতে চান। নাবিল তা প্রত্যাখ্যান করলে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে কয়েকজন স্টাফ মিলে তাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে তার সহপাঠী ও বড় ভাইয়েরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন—নাবিল (ফিন্যান্স, ১৮তম ব্যাচ), শের আলী (আইএমএল, ১৮তম ব্যাচ), ব্রজ গোপাল রায় (সংগীত বিভাগ, ১৬তম ব্যাচ), জিলন (এমসিজে, ১৮তম ব্যাচ), ইমরোজ সিদ্দিক (আইন, ১৯তম ব্যাচ), আনিছ (থিয়েটার, ১৯তম ব্যাচ), টিঙ্কু (ফিলোসফি, ১৮তম ব্যাচ), মাকসুদুল হক (ইসলামিক স্টাডিজ, ১৪তম ব্যাচ), রিহাব (কবি নজরুল কলেজ) এবং মুজাহিদ (সোহরাওয়ার্দী কলেজ)। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে সুমনা হাসপাতালে।
এ ঘটনায় সদরঘাটের ইজারাদার ও দক্ষিণাঞ্চল শ্রমিক দলের আহ্বায়ক সুমন ভূঁইয়ার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, তার ঘনিষ্ঠ কিরনের নেতৃত্বে আজিজুল, রমজান, আনিছ, রফিক, কাদের, রাব্বি ও সাগরসহ কয়েকজন লঞ্চকর্মী হামলায় অংশ নেন।
পরে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সুন্দরবন-১২ লঞ্চ ঘেরাও করে ভাঙচুর চালান। এতে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং যাত্রীরা আতঙ্কে পড়েন।
গাজিপুর থেকে মাকে চিকিৎসা করিয়ে ফিরছিলেন বরিশালের যাত্রী রাজীব। তিনি বলেন, “রাতে আটটার দিকে লঞ্চে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। কিছুক্ষণ পর শতাধিক শিক্ষার্থী এসে লঞ্চে ভাঙচুর চালায়। আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। টিকিট কেটেছি, এখন ফেরত পাব কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা আছে।”
অনেকে অভিযোগ করেন, লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দেওয়া নম্বরে ফোন করেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনার পরপরই লঞ্চ কর্তৃপক্ষের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
তাদের দাবিগুলো হলো: কিরণকে দ্রুত সময়ে এরেস্ট করতে হবে; তার সহযোগীকে এরেস্ট করা; সিসিটিভি ফুটেজ চেক; ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মোবাইল মানিব্যাগ ক্ষতিপূরণ; সাধারণ মানুষের হয়রানি ও কুলিদের অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করতে হবে।
ঘটনার পর সদরঘাট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. তাজাম্মুল হক বলেন, "সদরঘাটের ঘটনা সম্পর্কে জানার পর ঘটনাস্থলে আসি। সমস্ত কিছু বিবেচনা করে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি মানা শর্তে এ ঘটনার সুরাহা হবে।"
নোভা