ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

মীরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজ

অধ্যক্ষের বৈধ নিয়োগে আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে ডিআইএ কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ১৮:৪০, ৭ আগস্ট ২০২৫

অধ্যক্ষের বৈধ নিয়োগে আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে ডিআইএ কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

মীরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের বৈধ নিয়োগের বিষয়ে আদালতের একাধিক রায়কে উপেক্ষা করে ডিআইএ কর্তৃক তদন্ত প্রতিবেদন। গত ৩০ জুলাই পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) মীরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকদের বিষয়ে এক তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।


তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ অধ্যক্ষের বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, গভর্নিং বডিতে অন্তর্ভুক্ত সদস্য সচিব তথা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগ অবৈধ নির্দেশনা থাকায় ওই গভর্নিং বডি কর্তৃক নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক হয়নি মর্মে অভিযোগ প্রমাণিত। 


এ বিষয়ে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের রিপোর্টের সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৩ মে (পত্র নং ৩৭.০০.০০০০.০০০.৩৯.০১৭.১৭.১২৪ এর মাধ্যমে) সহকারি প্রধান শিক্ষক এবিএম আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়কে পত্র ইস্যু করেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবিএম আব্দুস সালাম ওই পত্রের বিরুদ্ধে রিট পিটিশন নং ৬২৩৩/২০১৮ দায়ের করেন। ওই বছরের ১৬ মে আদালত উক্ত রিটের প্রেক্ষিতে পত্রের কার্যকারিতা চার সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। ওই রায়ের কপিসহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবিএম আব্দুস সালাম মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে ২০১৮ সালের ২৫ জুন (পত্র নং ৩৭.০০.০০০০ .০০০.৩৯.০১৭.১৭.১৬৮ এর মাধ্যমে) ওই বছরের ১৩ মে (পত্র নং ৩৭.০০.০০০০.০০০.৩৯.০১৭.১৭.১২৪ এবং ১০ জুন পত্র নং- ৩৭.০০.০০০০.০০০.৩৯.০১৭ .১৭.১৫৫) দুটি পত্রের কার্যকারিতা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন। স্থগিত থাকা অবস্থায় অধ্যক্ষের নিয়োগকালীন সময়ের গভর্নিং বডি গঠন এবং অধ্যক্ষের নিয়োগ সম্পন্ন হয়।

পরবর্তীতে সরকার পক্ষ ভারপ্রাপ্ত এ.বি.এম আব্দুস সালামের রিট পিটিশন নং ৬২৩৩/২০১৮ এর বিরুদ্ধে এপিলেট ডিভিশনে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল নং ২৭০৩/২০১৮ দায়ের করলে বিচারপতি ২০১৮ সালের ২২ জুলাই ফুল বেঞ্চে শুনানির জন্য অগ্রায়ণ করেন। ওই তারিখে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চারজন বিচারপতি সর্বসম্মতিক্রমে রিট পিটিশন নং ৬২৩৩/২০১৮ এর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের করা আপিলের কোনো মেরিট না থাকায় সরকার পক্ষের আপিলকে ডিসমিস করে দেন। ফলশ্রুতিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.বি.এম আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হয় এবং তিনি বৈধ সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। 


এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. মোস্তফা কামাল খোশনবীশ বলেন, ডিআইএ তদন্ত রিপোর্টের কোথাও আমাকে অবৈধ বলেনি। আমার নিয়োগ যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.বি.এম. আব্দুছ ছালাম সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালনকালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত গভর্নিং বডি ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সভায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভাপতি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন এবং আমি সভাপতি বরাবর প্রধান শিক্ষক শূন্য পদে আবেদন করি। নিয়োগ বোর্ডে সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি, পল্লবী থানার থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, নিয়োগ বোর্ডের একজন সদস্য হিসাবে একটি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। আমি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১ম স্থান অধিকার করে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত হই। সভাপতি আমাকে নিয়োগপত্র প্রদান করেন। নিয়োগপত্রের প্রেক্ষিতে আমি ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ মীরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করি। সভাপতি আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে গভর্নিং বডির সভায় আমার যোগদান অনুমোদন করা হয়। এই ক্ষেত্রে এ.বি.এম. আব্দুছ ছালাম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেন।


প্রধান শিক্ষক নিয়োগে সহকারী প্রধান শিক্ষক (এ.বি.এম. আব্দুছ ছালাম) প্রধান শিক্ষকের কর্তৃপক্ষ হতে পারে না। যেহেতু আমার নিয়োগ ও যোগদান গভর্নিং বডির সভাপতির মাধ্যমে সু-সম্পন্ন হয়েছে সেহেতু আমার নিয়োগ এ.বি.এম. আব্দুছ ছালাম (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) কোন কার্যকলাপ বা বৈধতা বা অবৈধতার বিষয়ের সাথে কোনভাবেই সংশ্লিষ্ট নয়। সেই ক্ষেত্রে আমার নিয়োগ সম্পূর্ণ বৈধ এবং আইনসিদ্ধ। 


এখানে মন্ত্রণালয়ের স্মারক পত্রের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে হাইকোর্টের রায় অনুসারে চিঠি দুটির কার্যকারিতা ২০১৮ সালের ২৫ জুন (পত্র নং ৩৭.০০.০০০০.০০০.৩৯.০১৭.১৭.১৬৮ এর মাধ্যমে) শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থগিত হয় এবং সুপ্রিম কোর্টের এপিলেট ডিভিশনের রায়ের কপি সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তাগণ অবগত নন। কারণ তদন্ত কর্মকর্তাগণ কর্তৃক আমার নিয়োগের সকল কাগজপত্র চাওয়া হলেও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ.বি.এম. আব্দুছ ছালামের কোন কাগজপত্র চাওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীগণ কোর্টের রায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থগিতকৃত চিঠি তদন্ত কর্মকর্তাদের নিকট গোপন করেছেন। এ দিকে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।

শিহাব

×