
ছবি: প্রতীকী
মানবদেহের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার একটি অংশ হলো মূত্রত্যাগ। এটি শরীরের অতিরিক্ত পানি, লবণ ও বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়ার একটি স্বাভাবিক উপায়। তবে অনেকেই জানেন না যে দিনে কতবার মূত্রত্যাগ করা স্বাভাবিক বলে ধরা হয়। এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত থাকলেও, চিকিৎসকদের মতে সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দিনে প্রায় ৬ থেকে ৮ বার মূত্রত্যাগ করেন। তবে এটি নির্ভর করে অনেক বিষয়ের ওপর।
প্রথমত, একজন ব্যক্তি দিনে কতটা পানি পান করেন তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেউ বেশি পানি পান করে, তাহলে তার মূত্রত্যাগের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। আবার কেউ যদি কম পানি পান করেন, তার মূত্রত্যাগের সংখ্যা কম হতে পারে। তবে পানি কম পান করলেও যদি অস্বাভাবিকভাবে বারবার মূত্রত্যাগ করতে হয়, তা হলে সেটা চিন্তার কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আবহাওয়ার ভূমিকা রয়েছে। গরমের সময় মানুষ ঘাম বেশি দেয়, ফলে শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়। এতে মূত্র কম তৈরি হয় এবং মূত্রত্যাগের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে। শীতকালে শরীর থেকে ঘাম কম হয়, তাই তখন মূত্র তৈরির হারও কিছুটা বেড়ে যায়।
তৃতীয়ত, বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। ছোট শিশুরা প্রায়ই মূত্রত্যাগ করে, কারণ তাদের মূত্রথলি ছোট এবং নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা পুরোপুরি বিকশিত হয়নি। বয়স্কদের ক্ষেত্রেও কখনও কখনও বারবার মূত্রত্যাগের প্রবণতা দেখা যায়, বিশেষ করে যদি তাদের প্রোস্টেট বা ইউরিনারি ব্লাডারের কোনো সমস্যা থাকে।
চতুর্থত, খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রভাব ফেলে। যারা কফি, চা, কোমল পানীয়, কিংবা অতিরিক্ত প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন, তাদের মূত্রত্যাগের পরিমাণ বেশি হতে পারে। এসব খাবারে ডাইইউরেটিক উপাদান থাকে যা মূত্র তৈরি বাড়ায়।
তবে যদি মূত্রত্যাগের পরিমাণ হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় বা খুব কমে যায় এবং সেই সঙ্গে অন্য উপসর্গ যেমন পেটে ব্যথা, জ্বালা, জ্বর, অথবা রাতে ঘুমের মধ্যে বারবার বাথরুমে যেতে হয়, তাহলে তা হতে পারে কোনো রোগের লক্ষণ। ডায়াবেটিস, ইউরিনারি ইনফেকশন, প্রোস্টেটের সমস্যা ইত্যাদি কারণে মূত্রত্যাগের পরিমাণে পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে যদি দিনে ১০ বারের বেশি বা মাত্র ২-৩ বার মূত্রত্যাগ হয়, তবে তা অস্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনেকে পানি কম পান করার চেষ্টা করেন যাতে কমবার বাথরুমে যেতে হয়। এটি ঠিক নয়। বরং শরীরের চাহিদা অনুযায়ী পানি পান করা জরুরি। কারণ পর্যাপ্ত পানি শরীরকে হাইড্রেট রাখে, কিডনিকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং ইউরিনারি ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। আবার বেশি পানি পান করেও অনেকে অস্বস্তি অনুভব করেন, সেক্ষেত্রে সারা দিনে পানির পরিমাণটিকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখতে হবে।
দিনে ঠিক কতবার মূত্রত্যাগ স্বাভাবিক তা এক কথায় বলা কঠিন। তবে গড় হিসেবে ৬-৮ বার মূত্রত্যাগকে স্বাভাবিক ধরা হয়, যদি না তার সঙ্গে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে। নিজের শরীরের নিয়মিত অভ্যাস সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি। হঠাৎ কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
প্রতিদিন কতবার মূত্রত্যাগ করা হচ্ছে, সেটা শুধু সংখ্যা নয়, বরং একজন ব্যক্তির সার্বিক স্বাস্থ্যের একটি ইঙ্গিত হতে পারে। তাই এটি লক্ষ্য রাখা এবং প্রয়োজনে সতর্ক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এম.কে.