ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কবিতা

পর্তুগিজ কবি ফার্নান্দো পেসোয়া

ভূমিকা ও অনুবাদ : সরকার মাসুদ

প্রকাশিত: ১৯:১১, ১৫ মে ২০২৫

পর্তুগিজ কবি ফার্নান্দো পেসোয়া

পর্তুগিজ কবি ফার্নান্দো পেসোয়া
ভূমিকা ও অনুবাদ : সরকার মাসুদ

১৩ জুন ১৮৮৮ সালে ফার্নান্দো পেসোয়ার জন্ম, পর্তুগালের লিসবন শহরে। শৈশবেই পিতৃহীন হলে তার মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। পেসোয়া পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে চলে যান। বয়স সতেরো বছর হলে তিনি লিসবনে ফিরে যান এবং আমৃত্যু সেখানেই থাকেন। ব্রিটিশ শাসিত ডারবানে ফার্নান্দো ছিলেন নয় বছর। সেখানে পড়াশোনার মাধ্যম ছিল ইংরেজি। ফলে তিনি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের ওপর মাতৃভাষার মতোই দখল অর্জন করেন।
পেসোয়া ১৯১০ সালে পর্তুগিজ ভাষায় লেখালেখি আরম্ভ করেন। সনামে ছাড়াও অনেকগুলো ছদ্মনামে তিনি লিখতেন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত হয় তার বিখ্যাত প্রবন্ধ উরংয়ঁধধঃ.। পরে, ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ ঞযব ইড়ড়শ ড়ভ উরংয়ঁধধঃ-এর অন্তর্ভুক্ত হয় সেটা। তার কাব্যগ্রন্থ বেরোয় ১৯১৪ সালে। তার অকালমৃত্যুর পরে ট্রাঙ্কে বিপুল পরিমাণ লেখা পাণ্ডুলিপি আকারে পাওয়া গিয়েছিল। অকৃতদার ছিলেন। তার প্রেম ছিল অনেকখানি একপাক্ষিক এবং বেদনাপ্রদ। ফার্নান্দো নোট বইয়ে লিখে গেছেন, ‘আমি জানি না কীভাবে ভালোবাসতে হয়; শুধু জানি ভালোবাসার স্বপ্ন দেখতে।’

বড় দিন

একজন ঈশ্বরের জন্ম হয়। অন্যদের মৃত্যু হয়
সত্য দেখা দেয় না, অপস্মৃতও হয় না:
ভুল ধারণা কেবলই জায়গা বদল করে চলে।
এখন আমাদের আরেক চিরন্তনতা আছে
সবসময়ই, যে মরে যায় সে বেঁচে যায়।
অন্ধ বিজ্ঞান তুচ্ছ জিনিস নিয়ে কাজ করে চলেছে
পূজা-পার্বণের ঘোরের মধ্যে আছে বাতুল বিশ্বাস
নতুন ঈশ্বর কেবলই একটা শব্দ
আশা করো না, বিশ্বাসও ক’রো না:
সব কিছুই দুর্জ্ঞেয়।

আমার মৃত্যুর পর

আমার মৃত্যুর পর যদি ওরা আমার
জীবনী লিখতে চায় তার চেয়ে সহজ
আর কিছু নেই
আমি আসলে দুইটা তারিখÑ
একটা আমার জন্মের, আরেকটা মৃত্যুর
এ দু’য়ের মাঝখানের দিনগুলোই আমারÑ
খুব সোজাসাপ্টা পরিচয়।
আমি বেঁচে ছিলাম উন্মাদের মতো-
আবেগহীন ভালোবেসেছিলাম বিষয়-আশয়
কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ ছিল না আমার
কেননা কোনো ব্যাপারেই আমি অন্ধ ছিলাম না।
দেখা ও শোনার অনুষঙ্গসমূহের বেশি কিছু
ছিল কি আমার?
এগুলোকেই আমি সত্য জেনেছি
একটির থেকে অন্যটির পার্থক্য বুঝেছি
চোখ দিয়ে, চিন্তা দিয়ে নয়।

চিন্তা দিয়ে বুঝতে চাইলে তো
সব কিছুকেই এক রকম মনে হতো
আর শিশুর মতই তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম আমি
চোখ বুজতাম আর ঘুমিয়ে যেতাম,
যাই হোক আমি ছিলাম
প্রকৃতির কবি, অদ্বিতীয়।

জানি, আমি একা

আমি জানি যে আমি একা
আমার হৃদয় অবিশ্বাসী, নিয়মহীন;
এই সুরহীনতা ভাবনাহীনতা
বড়ই কষ্টের।

আমি, কেবল আমিই জানি
আর এসবের কিছুই জানতে পারি না
কারণ অনুভব বিষয়টি আকাশের মতো
দৃশ্যমান, কিন্তু দেখার কিছু নেই তাতে।

প্যানেল

×